Image description
 

ইরানের সঙ্গে গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে নিজেদের বিজয়ী মনে করে ইসরাইল। তবে জয়ের দাবি করলেও ইসরাইলি নেতারা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, প্রয়োজন হলে তারা আবার হামলা চালাতে প্রস্তুত। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা করেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক চাপ ও আগ্রাসী নীতি থেকে সরে আসবেন না তিনি।

 

বিশ্লেষকেরা আল–জাজিরাকে জানিয়েছেন, ইসরাইল এরইমধ্যে ইরানকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে আরো একটি বড় সংঘাতের সুযোগের সন্ধান করছে।

 

তবে এমন আরেকটি যুদ্ধ শুরু করতে হলে ইসরাইলের যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন প্রয়োজন হবে। আর ওয়াশিংটন অনুমোদন দেবে কি না, তা নিশ্চিত নয়।

ইসরাইলের দাবি, তারা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করতে আত্মরক্ষামূলক হামলা চালিয়েছে। তবে তেহরান দাবি করে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শুধুই বেসামরিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত।

এ সপ্তাহের শুরুতে আল–জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেন, বর্তমান যুদ্ধবিরতি কতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে, তা নিয়ে তিনি সন্দিহান।

যুদ্ধের কারণ

শুধু পারমাণবিক স্থাপনাগুলোই লক্ষ্যবস্তু ছিল বলে দাবি করে ইসরাইলের। তবে তারা ইরানের বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সরকারি ও সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে। ইরানকে দুর্বল করা ও দেশটিতে সরকার উৎখাতের চেষ্টা হিসেবেই এ হামলাকে স্পষ্টত দেখা হচ্ছে।

ইরানবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান কুইন্সি ইনস্টিটিউটের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট ত্রিতা পারসি বলেন, নেতানিয়াহু আবারো একই মিশন শুরুর সুযোগ খুঁজছেন।

তার মতে, ইসরাইল মূলত ইরানকে সিরিয়া বা লেবাননের মতো বানাতে চায়। যেখানে ইসরাইল যখন খুশি তখন হামলা চালাতে পারবে।

ইসরাইলের অভিযান

ইসরাইলের আরেকটি বড় হামলা আসন্ন নাও হতে পারে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তারা দেশজুড়ে আকস্মিক বিস্ফোরণ এবং আগুনের কারণ অনুসন্ধান করছে।

তিনজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও এক ইউরোপীয় কূটনীতিকের ভাষ্যমতে, ইরানের বিভিন্ন অ্যাপার্টমেন্ট ভবন, তেল শোধনাগার, বিমানবন্দরের পাশের এলাকা ও এক জুতা কারখানায় আকস্মিক বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের জন্য ইসরাইল দায়ী।

ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পলিসির ইরানবিষয়ক বিশ্লেষক নেগার মরতাজাভি বলেন, ‘আমি মনে করি বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এমন একটি সূত্র খুঁজে পেয়েছেন যেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের তীব্র প্রতিবাদ সত্ত্বেও দায়মুক্তিসহ ইরানে আক্রমণ করতে সক্ষম হবে।’

বিশ্লেষক এবং ইরান বিশেষজ্ঞ ওরি গোল্ডবার্গ বলেছেন, যুদ্ধের পরপরই ইরানের অভ্যন্তরে ইসরাইলের গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক শেষ হয়ে গেছে এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

তিনি বলেন, ‘ইরানের ভেতরে ইসরাইল একটি শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি করেছে। আর ব্যবস্থা কার্যকর রাখতে কৌশলগত নানা উপায় অবলম্বন করতে হয়। সেটা হতে পারে আগুন লাগানো বা বিস্ফোরণ ঘটানো। এর মাধ্যমে তারা ইরান স্মরণ করিয়ে দেয়, ইসরাইলের উপস্থিতি শেষ হয়নি।

নতুন যুদ্ধের সম্ভাবনা

নেতানিয়াহু আগে কিছুটা সংঘাত-বিরোধী থাকায় প্রতিবেশী সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেন ও ইরানের মতো আঞ্চলিক শক্তিগুলোকে আক্রমণ করে, গাজায় নৃশংস হামলা অব্যাহত রেখে, যেভাবে সংযমের অভাব দেখিয়েছেন, তা খুব কম মানুষই অনুমান করতে পেরেছিলেন।

ইরানের বিরুদ্ধে নেতানিয়াহুর আরেকটি অভিযান ইসরাইলের অভ্যন্তরে সৃষ্ট বিভাজন থেকে ইসরাইলিদের দৃষ্টি সরাতে সহায়ক হতে পারে। গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধ নিয়ে দেশটির অভ্যন্তরে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।

গোল্ডবার্গ বলেন, ট্রাম্প এখন মূল উদ্বেগের বিষয়। ইসরাইল তার কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে যে পথেই যাক না কেন, ট্রাম্পের সুনজরে থাকার চেষ্টা করবে। তবে ইরানের বিষয়ে ইসরাইলিদের মধ্যে একটি ঐকমত্য রয়েছে। মানুষ গাজা নিয়ে তর্ক করতে পারে, কিন্তু ইরান নিয়ে নয়। নেতানিয়াহু যদি নিজেকে হুমকির মুখে মনে করেন, তাহলে তিনি ইরানকে নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে দেখিয়ে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে চাইবেন।

অবশ্য বিশ্লেষকেরা বলছেন, এবার ইরান আর অসতর্ক থাকবে না। মরতাজাভি আল–জাজিরাকে বলেন, ইসরায়েল যে আগ্রাসন অব্যাহত রাখবে, তা ইরান ধরেই নিচ্ছে। তবে সেই সঙ্গে তারা এখনো কূটনৈতিকভাবে পারমাণবিক চুক্তিতে পৌঁছার আশাও করে যাচ্ছে।

এই বিশ্লেষক বলেন, তারা (ইরান) জানে, কোনো চুক্তি হলে ইসরায়েলের আক্রমণের আশঙ্কা অনেকটাই কমে যাবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান এখন অনেক সতর্ক। দ্বিতীয়বার তারা ভুল করতে চাইবে না।

মরতাজাভি আল জাজিরাকে বলেন, ইরান ধারনা করছে ইসরাইল তার আগ্রাসন অব্যাহত রাখবে। যদিও তারা এখনো কূটনীতির মাধ্যমে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর বিষয়ে আশাবাদী।

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি ইরান জানে, একটি পরমাণ চুক্তি ইসরাইলি আক্রমণের সম্ভাবনা কমিয়ে দেবে।’