
ইয়েমেনে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ভারতীয় নার্স নিমিশা প্রিয়ার ফাঁসির আদেশ স্থগিত করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে বিষয়টি জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
আজই (১৬ জুলাই) তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। খবর রয়টার্সের।
এর আগে, নিমিশা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড ঠেকাতে হুথি নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনি কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করে ভারত। তবে তাকে ভারতে ফেরত পাঠানো কিংবা মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
বর্তমানে ইয়েমেনের রাজধানী সানার একটি কারাগারে সাজা ভোগ করছেন ওই ভারতীয় নার্স।
ব্যবসায়িক সহযোগী ও ইয়েমেনের নাগরিক তালাল আব্দো মাহাদিকে হত্যার দায়ে ২০২০ সালে নিমিশা প্রিয়াকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
এদিকে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, কেরালার এই নার্সকে বাঁচাতে শেষ মুহূর্তে নানা কূটনৈতিক তৎপরতা চলছে। ইয়েমেনি নাগরিক তালাল আব্দো মাহাদিকে হত্যার দায়ে তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। ওই ইয়েমেনি নাগরিক তাকে দীর্ঘদিন ধরে হয়রানি করে আসছিলেন বলে জানা যায়।
এনডিটিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিমিশার মৃত্যুদণ্ড ১৬ জুলাই কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। তবে এখন জানা যাচ্ছে, নিহত ব্যক্তির পরিবার আপাতত তা স্থগিত করতে রাজি হয়েছে। যদিও এর মানে এই নয় যে, নিমিশা প্রিয়াকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে বা তাকে ভারতে ফিরিয়ে আনার কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে।
উল্লেখ্য, হুথি নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনি প্রশাসনের সঙ্গে ভারতের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই, ফলে সরকারিভাবে তেমন কিছু করার সুযোগও নেই।
ভারত সরকার এর আগে জানায়, তারা তাদের সামর্থ্যের মধ্যে যতটা সম্ভব চেষ্টা করেছে মৃত্যুদণ্ড রোধ করতে। এখন শেষ ভরসা হতে পারে ‘ব্লাড মানি’ বা রক্তমূল্য— যা ইসলামী শরিয়াহ আইনে নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিলে তারা দোষীকে ক্ষমা করতে পারে।
ভারত সরকার জানিয়েছে, তারা সবরকম সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে এবং গত কয়েক দিনে নিহত ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে আপসে পৌঁছানোর জন্য সময় চেয়ে একাধিকবার অনুরোধ করেছে। সেই প্রচেষ্টার ফলেই এই স্থগিতাদেশ এসেছে।
কে এই নিমিশা প্রিয়া?
এনডিটিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিমিশা ২০০৮ সালে ইয়েমেনে একজন নার্স হিসেবে পাড়ি দেন, পরিবারের আর্থিক অবস্থার উন্নতির আশায়। প্রাথমিকভাবে তিনি স্থানীয় একটি হাসপাতালে কাজ করলেও পরে ব্যক্তিগতভাবে একটি ক্লিনিক খোলেন। স্থানীয় আইনের কারণে তালাল আব্দো মাহাদি (৩৭) নামের ওই ইয়েমেনি ব্যবসায়ী এতে তার অংশীদার হন।
কিন্তু তালাল পরে তাকে নির্যাতন শুরু করেন। তিনি নিমিশার টাকা হাতিয়ে নেন এবং তার পাসপোর্ট জব্দ করেন। ফলে নিমিশা ইয়েমেন থেকে ফেরার উপায় হারিয়ে ফেলেন। আত্মরক্ষার চেষ্টা হিসেবে ২০১৭ সালে নিমিশা তালালকে ঘুমের ওষুধ পুশ করেন। এতে তালাল অজ্ঞান হওয়ার পর পাসপোর্ট উদ্ধার করাই ছিল মূল লক্ষ্য। কিন্তু এতে তালালের মৃত্যু হয় এবং নিমিশা ইয়েমেন ছেড়ে পালাতে গিয়ে গ্রেফতার হন।
এরপর নিমিশার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা চলে। ভারত সরকার তার জন্য স্থানীয় একজন আইনজীবী নিয়োগ করে। কিন্তু তার সব আবেদন খারিজ হয়। ২০২৩ সালে ইয়েমেনের সর্বোচ্চ বিচার পরিষদ মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে এবং দেশটির প্রেসিডেন্ট তা অনুমোদন করেন।
আইনি জটিলতা ও রক্তমূল্যের আশ্রয়
এ বিষয়ে ভারতের অ্যাটর্নি জেনারেল আর ভেঙ্কটরামানি সুপ্রিম কোর্টে বলেন, ‘এটি অত্যন্ত জটিল একটি মামলা। ভারত সরকার যা কিছু সম্ভব ছিল, সবই করেছে। এখন একমাত্র উপায় হচ্ছে— নিহতের পরিবার যদি ‘রক্ত মূল্য’ গ্রহণ করে।’
ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী, হত্যার শিকার ব্যক্তির পরিবার যদি রক্তমূল্য গ্রহণ করে, তাহলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা যায় না। তবে তারা সেটি গ্রহণ করতে রাজি না হলে নিমিশার ফাঁসি কার্যকর হতে পারে।
নিমিশার জীবন এখন সম্পূর্ণ নির্ভর করছে তালাল মাহাদির পরিবারের সিদ্ধান্তের ওপর। মৃত্যুদণ্ড স্থগিত হওয়াটা একটু সময় পাওয়া মাত্র, কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। কিন্তু এই মুহূর্তে সেটিই তার বেঁচে থাকার একমাত্র আশার আলো।