Image description

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গৃহপালিত পশু ও বন্যপ্রাণীর প্রাণনাশ ঘটাচ্ছে এক প্রকার মাংসাশী পোকা ‘নিউ ওয়ার্ল্ড স্ক্রুওয়ার্ম’। এই ভয়ংকর পোকা শুধু পশু নয়, মানুষের শরীরেও আক্রমণ করতে সক্ষম। ভয়াবহ পরিস্থিতি সামাল দিতে এবার অভিনব এক পদ্ধতি বেছে নিয়েছে মার্কিন কৃষি বিভাগ—আকাশ থেকে ফেলা হবে কোটি কোটি জীবাণুমুক্ত পুরুষ মাছি, যারা এই পোকার বংশ ধ্বংসে মুখ্য ভূমিকা রাখবে।

 

এই অভিযানের মূল পরিকল্পনা হলো স্ক্রুওয়ার্ম পোকাদের প্রজনন চক্র ভাঙা। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ সিদ্ধান্ত নিয়েছে—মেক্সিকো এবং দক্ষিণ টেক্সাসের আকাশে বিমান থেকে ‘এয়ারড্রপ’ করে কোটি কোটি জীবাণুমুক্ত পুরুষ মাছি ছাড়া হবে। এই মাছিগুলোর সঙ্গে স্ত্রী মাছির মিলন ঘটলেও ডিম নিষিক্ত হবে না, ফলে নতুন লার্ভার জন্ম হবে না এবং ধীরে ধীরে পোকার বিস্তার কমবে। এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে ২০২৪ সালের জুন মাসে মেক্সিকো-গুয়াতেমালা সীমান্তে স্ক্রুওয়ার্ম শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই।

 

‘নিউ ওয়ার্ল্ড স্ক্রুওয়ার্ম’ নামের এই মাছির স্ত্রী প্রজাতি গবাদিপশুর শরীরের ক্ষত বা শ্লেষ্মায় ডিম পাড়ে। সেখান থেকেই জন্ম নেয় মাংসভুক লার্ভা, যা পশুর জীবন্ত দেহকে খেতে শুরু করে। মার্কিন ভেটেরিনারি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাইকেল বেইলি জানান, এই লার্ভা মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে একটি ১ হাজার পাউন্ডের গরুকেও মেরে ফেলতে পারে। এতটাই ভয়ানক এই পোকা।

 

এই অবস্থায় স্ক্রুওয়ার্ম নির্মূলে আমেরিকার ভরসা ‘জীবাণুমুক্ত পুরুষ মাছি’। কারণ, স্ত্রী স্ক্রুওয়ার্ম সারা জীবনে একবারই সঙ্গম করে। জীবাণুমুক্ত পুরুষ মাছির সঙ্গে মিলন হলে ডিম নিষিক্ত হয় না, ফলে প্রজনন বন্ধ হয়। বর্তমানে পানামায় সপ্তাহে তৈরি হচ্ছে প্রায় ১১ কোটি ৭০ লক্ষ মাছি, কিন্তু চাহিদা মেটাতে দরকার ৪০ কোটির বেশি মাছি। প্রথম ধাপে দক্ষিণ টেক্সাস ও মেক্সিকোর আকাশে এই মাছিদের ছাড়া হবে।

 

১৯৬২-১৯৭৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র একই পদ্ধতিতে ৯,৮০০ কোটি জীবাণুমুক্ত মাছি ছেড়ে সফলভাবে স্ক্রুওয়ার্ম নির্মূল করেছিল। তখন ‘হুইজ প্যাকার’ নামক কাগজের কাপ ব্যবহার করে মাছিগুলো ছড়ানো হতো। তবে চলতি বছরের জুনে এক এয়ারড্রপ মিশনে বিমান দুর্ঘটনায় তিনজন আহত হন। তাই এবার বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন, মাছি ফেলার পদ্ধতিতে আরও সচেতনতা ও কৌশল প্রয়োগ করা হোক।

 

ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের পতঙ্গবিদ অধ্যাপক এডউইন বার্গেস জানান, রাসায়নিকের তুলনায় এই পদ্ধতি অনেক নিরাপদ, কারণ এটি পশুর দেহে ক্ষতিকর পদার্থ জমতে দেয় না। একইভাবে, কানসাস স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের পতঙ্গবিদ ক্যাসান্দ্রা ওল্ডস বলেন, “এই ভয়ানক লার্ভা ঠেকাতে বৃহৎ পরিসরে মাছির উপনিবেশ গড়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।” তথ্যসূত্র : দ্য গার্ডিয়ান