ইরানে নারীদের অধিকার আদায় আন্দোলনের নতুন অধ্যায় যোগ করেছে তেহরান বিমানবন্দরে এক নারীর প্রতিবাদ। বাধ্যতামূলক হিজাব না পরার কারণে এক ধর্মীয় নেতা তাঁর সঙ্গে তর্কে জড়ান। তখন ওই নারী তাঁর পাগড়ি খুলে নিজের মাথায় পরেছেন। ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোড়ন তুলেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, তেহরানের মেহরাবাদ বিমানবন্দরে এক নারী বাধ্যতামূলক হিজাব না পরায় এক ধর্মীয় নেতা (আলেম) তাঁর সঙ্গে তর্কে জড়ান। তখন নারীটি পাগড়ি খুলে নিজের মাথায় স্কার্ফের মতো করে পরেন।
ভিডিওতে দেখা যায়, ওই নারী রাগান্বিত হয়ে আলেমের পাগড়ি খুলে নিয়ে তাঁকে বলেন, ‘এখন আপনার সম্মান হয়েছে?’ এরপর তিনি তাঁর স্বামীকে খুঁজতে গিয়ে চিৎকার করে বলেন, ‘তুমি আমার স্বামীর সঙ্গে কী করেছ?’
ঘটনার সঠিক তারিখ ও কারণ পরিষ্কার নয়। ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) সঙ্গে সম্পৃক্ত সংবাদমাধ্যম মাশরেগ নিউজ দাবি করেছে, এটি হিজাব নিয়ে কোনো ঘটনা নয় এবং ওই নারী ‘মনের সমস্যায় ভুগছেন’।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ওই নারীকে অল্প সময়ের জন্য আটক করা হয়েছিল এবং অভিযোগকারীদের সম্মতিতে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনাটি এমন সময়ে ঘটেছে, যখন ইরানে নারীদের হিজাব পরা নিয়ে নানা ইস্যু চলছে। বিশেষ করে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে মাহসা আমিনির পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর পর এই আন্দোলন আরও তীব্র হয়েছে।
সরকার নারীদের বাধ্যতামূলক হিজাব আইন অমান্যকারীদের দমন জোরদার করেছে। এমনকি বিমানবন্দরসহ জনসমাগমস্থলে কঠোর নজরদারি চালানো হচ্ছে।
ইরানের সরকারি প্রচারণায় ভিন্নমতকে ‘মানসিক রোগ’ হিসেবে চিত্রায়িত করার প্রবণতা রয়েছে। ২০২৩ সালের নভেম্বরে তেহরানের আজাদ ইউনিভার্সিটির একজন ছাত্রী পোশাক খোলার মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়ে নারীদের মুক্তির প্রতীক হয়ে ওঠেন। সরকারি প্রচারণায় তাঁকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে দাবি করা হলেও চারটি ইরানি মনোবিজ্ঞান ও মনোরোগবিদ্যা সংগঠন এর নিন্দা জানিয়েছে।
মাশরেগ নিউজের দাবি প্রত্যাখ্যান করে অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনাকে শক্তিশালী প্রতিবাদ বলে অভিমত দিয়েছেন। কেউ কেউ একে ‘অসাধারণ প্রতিবাদ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
গত দুই বছরে হাজার হাজার নারী বাধ্যতামূলক হিজাব না পরার কারণে গ্রেপ্তার, জরিমানা ও বিচারিক প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হয়েছেন। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ইরানের বিমানবন্দর পুলিশপ্রধান মোহসেন আঘিলি ঘোষণা করেন, হিজাব না পরা নারীদের বিমানবন্দর সেবা দেওয়া হবে না। এর আগে মাশহাদ ও ফার্স প্রদেশের বিমানবন্দরগুলোতেও ‘হিজাব প্রয়োগকারী’ কর্মীদের মোতায়েন করা হয়।
গত বছরের জুলাই মাসে হিজাব আইন না মানার অভিযোগে তেহরানের তুর্কি এয়ারলাইনসের অফিস সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়।
মানবাধিকার সংস্থা এইচআরএনএ রিপোর্ট করে, গত বছর ৩০ হাজারের বেশি নারীর বিরুদ্ধে বাধ্যতামূলক হিজাব আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে হয়রানি করা হয়েছে।
ইরানি সরকার সম্প্রতি ‘চরিত্র ও হিজাব আইন’ কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছে। এটি নারীদের স্বাধীনতার ওপর আরও বিধিনিষেধ আরোপ করবে। তবে আইনটি কার্যকর করার ক্ষেত্রে গণবিরোধিতার আশঙ্কায় সরকার এখনো সতর্ক অবস্থায় আছে।