
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ ফ্রানচেস্কা আলবানিজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ চলাকালীন ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে প্রতিবেদন দেওয়ায় তার ওপর এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। বুধবার (৯ জুলাই) মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এই নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
রুবিও’র অভিযোগ, আলবানিজ ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক যুদ্ধ পরিচালনা করছেন।’
আলবানিজ জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড বিষয়ক বিশেষ রিপোর্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ইসরায়েলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অন্যতম সমালোচক। এ কারণে ইসরায়েল এবং তার সমর্থকরা দীর্ঘদিন ধরে আলবানিজকে অপসারণের আহ্বান জানিয়ে আসছে। তাকে নিয়মিতভাবে তীব্র সমালোচনার মুখে ফেলছে।
সম্প্রতি আলবানিজ গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা নিয়ে নতুন প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এতে এমন অনেক প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলো ফিলিস্তিনের জনগণকে বাস্তুচ্যুত করা ও গাজায় চলমান গণহত্যায় ইসরায়েলকে সহায়তা করছে। তাদের এ কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের শামিল।
আল জাজিরা যোগাযোগ করলে আলবানিজ যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞাকে তুচ্ছ বলে প্রত্যাখ্যান করেন। জানান, তিনি তার কাজ চালিয়ে যেতে আগ্রহী।
এক টেক্সট বার্তায় তিনি বলেন, মাফিয়া ধাঁচের ভয়ভীতি প্রদর্শনের কৌশল নিয়ে কোনও মন্তব্য নেই। আমি এখন ব্যস্ত সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে গণহত্যা বন্ধ করা এবং দায়ীদের বং যারা এতে লাভবান হচ্ছে, তাদের শাস্তি দেওয়ার বাধ্যবাধকতা মনে করিয়ে দিতে।
এর আগে বুধবার, আলবানিজ ইউরোপীয় দেশগুলোর সমালোচনা করেন যারা গাজার যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) ওয়ারেন্টভুক্ত ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে তাদের আকাশপথ ব্যবহার করতে দিচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘ইতালিয়ান, ফরাসি এবং গ্রিক নাগরিকদের জানার অধিকার আছে যে, আন্তর্জাতিক আইনশৃঙ্খলা লঙ্ঘন করে নেওয়া প্রতিটি রাজনৈতিক পদক্ষেপ তাদের সবাইকে ঝুঁকিতে ফেলে ও দুর্বল করে। আমাদের সবাইকেও এটি ঝুঁকিতে ফেলে ও দুর্বল করে।’
তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, আইসিসিতে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বিচারের আওতায় আনার জন্য আলবানিজের চেষ্টাই তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আইনি ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
আইসিসির অভিযোগপত্রে বলা হয়, নেতানিয়াহু ও গ্যালান্ট গাজায় মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ করেছেন। ফিলিস্তিনিদের জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী, যেমন খাদ্য, পানি ও ওষুধ থেকে বঞ্চিত করার মাধ্যমে এ অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।
মার্কো রুবিও বলেন, গাজায় ইসরায়েলি অভিযানে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা নিয়ে সম্প্রতি আলবানিজ যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন, তাতে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। আলবানিজ ইসরায়েলি এ অভিযানকে গণহত্যা হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
গত ফেব্রুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেন। ওই আদেশে ইসরায়েলকে ‘নিশানা বানিয়ে’ কাজ করা আইসিসি কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিধান রাখা হয়। এ আদেশের আওতায় গত মাসে ট্রাম্প প্রশাসন আইসিসির চার বিচারকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ব্যক্তিদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সম্পদ জব্দ করা হবে এবং তাঁদের ও পরিবারের সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
তবে এ পদক্ষেপের কঠোর সমালোচনা করেছেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা।