Image description
 

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান উত্তেজনা এখনও প্রশমিত না হতেই মধ্যপ্রাচ্যে আরও বড় আকারের সংঘাতের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন পশ্চিমা থিংক ট্যাংক ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের মতে, ইরানের পর এবার ইসরায়েলের সম্ভাব্য পরবর্তী লক্ষ্য হতে পারে পাকিস্তান।

মাত্র ২২ হাজার বর্গকিলোমিটারের ছোট্ট দেশ ইসরায়েল, তবে দেশটির সামরিক আগ্রাসন, বিশেষ করে যুদ্ধপিপাসু নেতা নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে, গোটা মধ্যপ্রাচ্যকেই অস্থির করে তুলেছে। গাজা, সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেন এবং সাম্প্রতিক ইরান সংঘাতের পর এবার আলোচনায় এসেছে পাকিস্তানের নাম।

যুদ্ধের হুমকি ও ‘ইসলামিক বোমা’ বিতর্ক
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেফ্রি স্যাক্স সম্প্রতি পাকিস্তানকে ঘিরে সম্ভাব্য যুদ্ধের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এর আগে একাধিকবার প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানের পারমাণবিক ক্ষমতা নিয়ে মন্তব্য করেছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো দুটি ইসলামপন্থী চরমপন্থী রাষ্ট্রকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখা— প্রথমটি ইরান, দ্বিতীয়টি পাকিস্তান।”

 

পশ্চিমা মিডিয়াগুলো দীর্ঘদিন ধরেই পাকিস্তানকে “ইসলামিক বোমা” বলে আখ্যা দিয়ে আসছে। অথচ একইভাবে কখনো “ইহুদি বোমা” কিংবা “খ্রিস্টান বোমা” শব্দবন্ধ শোনা যায় না, যদিও পারমাণবিক অস্ত্রধারী ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রের সংখ্যা একাধিক।

 

পশ্চিমা চাপ ও নিরাপত্তার আশঙ্কা
মার্কিন অ্যাডমিরাল মাইক মুলেনও পাকিস্তানকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। থিংক ট্যাংক, সাংবাদিক এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিরতা, পারমাণবিক অস্ত্রের নিরাপত্তা এবং সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার অভিযোগ আন্তর্জাতিক মহলে দেশটির ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের এক গবেষণা প্রতিবেদন ‘The Agonizing Problem of Pakistan’s Nukes’–এ পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগের বিস্তারিত বিশ্লেষণ পাওয়া যায়।

ভারত-ইসরায়েল সংযোগ ও কৌশলগত উদ্বেগ
বিশ্লেষকদের অনেকে আশঙ্কা করছেন, ইসরায়েল ও ভারতের কৌশলগত ঘনিষ্ঠতা এবং নেতানিয়াহু-মোদি জোটের মিলিত জাতীয়তাবাদী অবস্থান পাকিস্তানের জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে উঠতে পারে। স্মার্ট অ্যাটাক, ড্রোন হামলা এবং সাইবার অপারেশন— আধুনিক যুদ্ধের এই নতুন রূপ পাকিস্তানকে লক্ষ্য করে ব্যবহৃত হতে পারে বলে ধারণা।

আগে হুমকি, পরে আক্রমণ—পরিচিত ছক?
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেন, সুদান, ইরান—সবখানেই একটি পরিচিত কৌশল অনুসরণ করা হয়েছে: আগে সন্ত্রাসের অভিযোগ, পরে আক্রমণ। এখন সেই একই ছকেই পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিকভাবে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চলছে, যাতে পরবর্তী পদক্ষেপে যৌথ হামলার নৈতিক ও কূটনৈতিক ভিত্তি তৈরি হয়।

বিশ্ব রাজনীতিতে যখন নতুন মেরুকরণ ও সামরিক অস্থিরতা মাথাচাড়া দিচ্ছে, তখন দক্ষিণ ও মধ্যপ্রাচ্যে নতুন এক যুদ্ধের শঙ্কা উঁকি দিচ্ছে। যার সম্ভাব্য বলি হতে পারে পারমাণবিক শক্তিধর পাকিস্তান।