
আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবান সরকারের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক উন্নয়নের সাম্প্রতিক পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে চীন। শুক্রবার (৪ জুলাই) এক নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং এ মন্তব্য করেন। চীনা সংবাদমাধ্যম সিজিটিএন এ খবর জানিয়েছে।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে তালেবানকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মাও নিং বলেন, চীনের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী এবং ঐতিহ্যবাহী বন্ধু হচ্ছে আফগানিস্তান। চীন সবসময় বিশ্বাস করে—আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে আফগানিস্তানকে বাদ দেওয়া উচিত নয়।
বৃহস্পতিবার বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে রাশিয়া। মস্কোর পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি বলেছেন, এটি একটি সাহসী সিদ্ধান্ত।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা বিশ্বাস করি আফগান সরকারকে স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে দুদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বিকাশের গতি ত্বরান্বিত হবে। এই সম্পর্কে জ্বালানি, পরিবহন, কৃষি এবং আবাসন খাতে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
চীনের তরফ থেকেও আফগানিস্তানের পাশে থাকার অঙ্গীকার করা হয়েছে। মাও নিং বলেছেন, দেশটির পুনর্গঠন ও উন্নয়নে বেইজিং সহায়তা করতে আগ্রহী।
তিনি দাবি করেন, আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যে পরিবর্তনই আসুক না কেন, দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক কখনও ছিন্ন হয়নি।
মাও নিং বলেন, দুদেশের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি অটল থাকবে। এছাড়া, ভবিষ্যতে তাদের মধ্যে বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা ও বিনিময় আরও জোরদার হবে।
২০২১ সালের আগস্টে ক্ষমতা দখল নেওয়ার পর থেকেই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য উঠেপড়ে লেগেছিল তালেবান সরকার। তবে এই গোষ্ঠী ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নারীবিদ্বেষী নীতির কারণে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার পাত্রে পরিণত হয়েছে।
সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর দমন-পীড়ন, খেলাধুলা ও শিল্প-সংস্কৃতি চর্চার রাস্তায় বিঘ্ন সৃষ্টি করার মতো একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে তালেবান সরকার। সর্বশেষ দেশটিতে দাবা খেলা নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের ওপর আরও একটি বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়। তবে সবকিছু ছাপিয়ে গেছে তাদের চরম নারী দমন নীতি।
তালেবান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশটির নারী ও মেয়েশিশুদের শিক্ষা ও জীবিকার ওপর একগাদা নিষেধাজ্ঞা নেমে আসে। নারীদের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা আপাতত নিষিদ্ধ আছে। সর্বশেষ এক ঘোষণার মাধ্যমে নারীদের ওপর চরম অবমাননাকর এবং দমনমূলক এক আইন করে তালেবান সরকার।
ওই আইন অনুযায়ী, জনসম্মুখে কোনও নারীর কথা বা হাসির আওয়াজ শোনা গেলে তা হবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
নারী দমন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের হাজারো অভিযোগের পরও কাবুলে রাষ্ট্রদূত রেখেছে চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, উজবেকিস্তান ও পাকিস্তান। আর রাশিয়া তো প্রকাশ্যে তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদান করলো।