Image description
 

ইতিহাস কেবল বইয়ের পাতায় বন্দী থাকে না। কখনো কখনো তা ফিরে আসে ব্যঙ্গচিত্রে, প্রতীকে বা পোস্টারে, জ্বলন্ত বার্তা হয়ে। ইরানের সিরাজ শহরের ব্যস্ত সড়কে ঝুলছে এমনই এক পোস্টার, যেটি ইন্টারনেটে জন্ম দিয়েছে আলোড়ন।

তৃতীয় শতাব্দীর পারস্য সম্রাট সাপুর প্রথম ও রোমান সম্রাট ভ্যালেরিয়ানের ঐতিহাসিক পরাজয়ের ঘটনার ছায়ায় তৈরি এই পোস্টারে দেখা যায়: সাপুর প্রথম তার ঐতিহ্যবাহী ভঙ্গিতে ঘোড়ায় বসে আছেন, আর তাঁর পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে আত্মসমর্পণ করছেন বর্তমান ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

 

দৃশ্যটি নিছক কল্পনা হলেও, ইরানি জনগণের আত্মবিশ্বাসের প্রতীক হয়ে উঠেছে এটি। সাম্প্রতিক ইরান-ইসরাইল সংঘাতের পর এমন একটি পোস্টারের আবির্ভাব, যেন ইতিহাসের পুরনো প্রতিশোধই নতুন রূপে ফিরে এসেছে।

এই ব্যঙ্গ শুধু একটি পোস্টারে সীমাবদ্ধ থাকেনি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই-এর ছোঁয়ায় তৈরি হয়েছে একের পর এক ব্যঙ্গাত্মক ভিডিও। এসব ভিডিওতে নেতানিয়াহুকে উপস্থাপন করা হয়েছে নানা হাস্যকর ও বিপর্যস্ত অবস্থায়, আর ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামিনিকে দেখা গেছে বিজয়ী ভূমিকায়।

বিমানে ধাক্কা দিয়ে ফেলা: এক ভিডিওতে দেখা যায়, খামিনী একটি উড়ন্ত বিমানে নেতানিয়াহুকে ঠেলে নিচে ফেলে দিচ্ছেন, আর তার আতঙ্কিত মুখে জুম করছে ক্যামেরা। পাশেই উপস্থিত ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি মিত্রকে বাঁচাতে ঝাঁপ দেন তিনিও।

বাইকযাত্রা ও গর্তের রাজনীতি: আরেকটিতে নেতানিয়াহু একটি বাইক চালিয়ে যাচ্ছেন এক বিপদসংকুল গন্তব্যের দিকে। পথে পথে খামিনী তৈরি করে রেখেছেন গর্ত—প্রতিটি গর্ত যেন জাতিসংঘের বিবৃতি, অস্ত্রচুক্তি বা রাজনৈতিক সংকটের প্রতীক, যেখানে বারবার হোঁচট খাচ্ছেন নেতানিয়াহু।

স্কুটার ভ্রমণের কল্পনা: সবচেয়ে বেশি ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, খামিনী হাসিমুখে একটি স্কুটার চালাচ্ছেন, আর পেছনে নেতানিয়াহু বাঁধা অবস্থায় আতঙ্কিত মুখে ঝাঁকুনি খাচ্ছেন।

এই ভিডিও ও পোস্টারগুলো নিছক কৌতুক বা বিদ্রুপ নয়—এগুলো গভীর রাজনৈতিক প্রতীকেও পরিণত হয়েছে। একদিকে যেমন এসব নির্মাণে হাস্যরস ফুটে উঠেছে, অন্যদিকে তা বহন করছে ঐতিহাসিক পরম্পরার বার্তা।

রোমান সম্রাট ভ্যালেরিয়ানকে বন্দী করে পারস্যের গর্ব হয়ে উঠেছিলেন সম্রাট সাপুর। সেই দৃশ্যই যেন ডিজিটাল যুগে ফিরে এসেছে, যেখানে ইতিহাস হয়ে উঠছে আধুনিক রাজনীতির রূপক।

“ইতিহাস শুধু পাঠ নয়, প্রেরণাও।” — এই মর্মবাণী যেন প্রতিধ্বনিত হচ্ছে সিরাজের সেই পোস্টারে।

 

 

 

নেতানিয়াহু হয়তো বাস্তবের সাপুরের সামনে নতজানু হননি, কিন্তু ইরানের সৃজনশীল প্রতিক্রিয়া তাকে ডিজিটাল ভুবনে এনে ফেলেছে সেই পরিস্থিতিতে। এসব ব্যঙ্গচিত্র বাস্তব নয় ঠিকই, কিন্তু বাস্তবের থেকেও বেশি তীব্র, বেশি শক্তিশালী।

কারণ আজ ইতিহাস শুধু কালি ও কাগজে নয়, তৈরি হয় এআই-তে, ভাইরাল হয় স্ক্রিনে, আর ছড়িয়ে পড়ে মননে।