Image description

২০২৪ সালের এপ্রিল। বিশ্বকে চমকে দিয়ে দখলদার ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলে প্রথমবারে মতো সরাসরি ড্রোন, মিসাইল এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে ইরান। আকাশপথে পরিচালিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং ঐতিহাসিক সেই হামলায় একযোগে ৩০০টির বেশি ড্রোন, মিসাইল এবং ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছিল ইরান। সিরিয়ার দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে ইসরাইলের বর্বর হামলার প্রতিশোধ নিতেই অপারেশন ‘True Promise’ পরিচালনা করে নিজেদের সামরিক শক্তির মহড়া দেখিয়েছিল ইরান। হামলার পর ‘True Promise’ অপারেশনে ব্যবহার হওয়া ড্রোন, মিসাইলের সংখ্যা নিয়ে রহস্য রেখে দেয় ইরান। কিন্তু ইসরাইলি সামরিক কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্যমতে হামলায় ১৮৫টি ড্রোন, ১১০টি ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র এবং ৩৬টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইলের দিকে নিক্ষেপ করেছিল ইরান। নানা সময় ইসরাইলের সঙ্গে ইরান ছায়া যুদ্ধ করলেও ‘True Promise’ অপারেশনে সরাসরি হামলার শিকার হওয়ার পর ইসরাইলের দুঃস্বপ্নে পরিণত হয় ইরান। তাই এক বছরের বেশি সময় ধরে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয় হামলা করার। ব্যাপক প্রস্তুতি এবং আমেরিকার ভরসায় ১৩ জুন ২০২৫ সালে আবার হামলা চালায় ইসরাইল। কিন্তু এবার ইরান জয়ের ইসরাইল-আমেরিকা স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল। ইসরাইল-আমেরিকা নিজেদের বিজয়ী হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করলেও বাস্তবতা হচ্ছে জয় তো দূরে থাক, উল্টো পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে বর্বর ইসরাইল এবং আমেরিকা।

বিশ্বের অন্যতম সেরা সামরিক শক্তিধর ইসরাইল এবং বিশ্বমোড়ল আমেরিকার যৌথ হামলার পরও কেন ইরানকে নত করা গেল না? কারণ, ইরানের নিজস্ব প্রযুক্তি। সৌদি আরব, কাতার, জর্ডান, বাহরাইনের মতো দেশগুলো সামরিক অস্ত্রের জন্য আমেরিকার ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু নানা রকম অর্থনৈতিক অবরোধের বাধা সত্ত্বেও ইরান নিজেদের মেধা প্রযুক্তির সমন্বয়ে পূর্ণ সামরিক শক্তি দিয়েই ইসরাইল, আমেরিকাকে পাল্টা জবাব দিয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে ইরানের কাছে বৈচিত্র্যময় সুইসাইড ড্রোনের ব্যাপারটি আন্তর্জাতিকভাবে তুমুল আলোচনা আসে ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার তীব্র আক্রমণের পর। রাশিয়ার আক্রমণের পর ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, ইরানি নকশা করা শাহেদ ড্রোনই ব্যবহার করছে রাশিয়ান সামরিক বাহিনী, যা ব্যাপক ক্ষতি করেছে ইউক্রেনের। ২০১১ সাল ড্রোন প্রযুক্তি আপডেট করে নিজস্ব সিমোর্গ ড্রোন তৈরি করে ইরানের বিজ্ঞানীরা। সিমোর্গ ড্রোনকে আপডেট করে পরবর্তী ভার্সন হিসেবে আনে শাহেদ-১২৯। এরপর আরো উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে শাহেদ-১৩৬ এবং শাহেদ ২৩৮।

ইরানের নিজস্ব প্রযুক্তিতে বানানো কম খরচের মাত্র ৫০ কেজি ওজনের শাহেদ-১৩৬ এবং উচ্চগতিসম্পন্ন শাহেদ ২৩৮ মডেলের সুইসাইড ড্রোনগুলো ইরানের অন্যতম সামরিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। এবারের যুদ্ধের শুরুতে ইরানের আকাশ পথ নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার দাবি করেছিল ইসরাইল এবং আমেরিকা। কিন্তু বেলা শেষে দেখা গেছে ইরানের মাটি থেকে উড়ে ইরান, জর্ডানের আকাশ পেরিয়ে ঠিকই ইসরাইলের আকাশে রাজত্ব করেছে ইরানের নিজস্ব প্রযুক্তির ড্রোন ও মিসাইল। ইরানের পাঠানো বেশির ভাগ ড্রোন, মিসাইল নিজেদের আকাশে প্রতিরোধ করলেও অনেকগুলো ড্রোন, মিসাইল আঘাত হেনেছে ইসরাইলের বিভিন্ন স্থাপনায়।