Image description

ইরানের পার্লামেন্ট (মজলিস) সম্প্রতি একটি নতুন জাতীয় নিরাপত্তা আইন পাস করেছে, যেখানে সরকারি অনুমোদন ছাড়া কোনো ধরনের ইন্টারনেট বা প্রযুক্তি ডিভাইস ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। একইসঙ্গে ইসরায়েল বা অন্যান্য ‘শত্রু রাষ্ট্রের’ সঙ্গে গোয়েন্দা বা সামরিক সহযোগিতাকে ‘ইফসাদ ফিল আরদ’ (পৃথিবীতে চরম বিশৃঙ্খলা ও বিপর্যয় সৃষ্টি) বলে গণ্য করে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

দেশটির প্রথম অনলাইন পোর্টাল জামে জামে অনলাইন-এর খবরে বলা হয়, ২৩ জুন সংসদের এক উন্মুক্ত অধিবেশনে আইনটির ৯টি ধারা পাস হয়। নিচে গুরুত্বপূর্ণ ধারাসমূহ সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:

প্রধান ধারাসমূহ:
ধারা ১: যদি কেউ ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র বা অন্যান্য ‘শত্রু রাষ্ট্রের’ পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তি বা অপারেশন চালায়, তবে তা ইসলামী দণ্ডবিধির ২৮৬ ধারার আওতায় ‘ইফসাদ ফিল আরদ’ হিসেবে বিবেচিত হয়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হবে।

ধারা ২: শত্রু রাষ্ট্রের সামরিক, নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক বা প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়াতে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে সহায়তা করলে, সেটিও মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ হবে।

ধারা ৩: নিচের কাজগুলোও ‘ইফসাদ ফিল আরদ’ হিসেবে গণ্য হবে, যার মধ্যে রয়েছে:

  • অস্ত্র ও বিস্ফোরক তৈরির উপকরণ সংরক্ষণ বা ব্যবহার
  • সামরিক ড্রোন বা রোবট ব্যবহারের সহায়তা
  • সাইবার হামলা ও অবকাঠামোয় নাশকতা
  • এমনকি শত্রু রাষ্ট্রের কাছ থেকে অর্থ, ক্রিপ্টো, স্বর্ণ বা গাড়ি গ্রহণ করাও অপরাধ, সাহায্য সফল না হলেও।

ধারা ৪: রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নকারী মিথ্যা তথ্য, ছবি-ভিডিও পাঠানো বা অবৈধ সমাবেশে অংশগ্রহণের শাস্তি:

  • জরুরি অবস্থায় মিথ্যা তথ্য পাঠালে ৫ম গ্রেডের কারাদণ্ড ও রাষ্ট্রীয় চাকরিতে নিষেধাজ্ঞা
  • যুদ্ধকালীন অবৈধ সমাবেশে অংশগ্রহণে ৪র্থ গ্রেডের কারাদণ্ড

ধারা ৫: স্টারলিংকসহ অনুমোদনহীন ইন্টারনেট ডিভাইস আমদানি, ব্যবহার বা বিতরণ নিষিদ্ধ:

  • সাধারণ ক্ষেত্রে ষষ্ঠ গ্রেডের কারাদণ্ড
  • ১০টির বেশি ডিভাইস থাকলে বা রাষ্ট্রবিরোধী কাজে ব্যবহারে ৪র্থ গ্রেডের কারাদণ্ড

ধারা ৬: যুদ্ধ বা জাতীয় সংকটে এসব অপরাধ সংঘটিত হলে শাস্তি ৩ গ্রেড পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে।

ধারা ৭: এই আইনভুক্ত অপরাধগুলোর বিচার ইনকিলাবি আদালতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পরিচালিত হবে।

ধারা ৮ ও ৯: ২০১৮ সালে সর্বোচ্চ নেতার অর্থনৈতিক অপরাধ সংক্রান্ত নির্দেশনাও এই আইনে কার্যকর থাকবে। আইন পাসের আগেই কেউ এসব অপরাধে জড়িত থাকলে এবং ৩ দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণ না করলে, তার বিরুদ্ধেও নতুন আইনের আওতায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই আইন পাসের মাধ্যমে ইরান সরকারের পক্ষ থেকে একদিকে যেমন ডিজিটাল সার্বভৌমত্ব রক্ষার বার্তা দেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে পশ্চিমা শক্তি ও ইসরায়েলকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের সাইবার, প্রযুক্তিগত ও গুপ্তচর সহযোগিতা কঠোরভাবে দমন করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

শীর্ষনিউজ