Image description
 

সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের যৌথ বিমান হামলার পর ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ইরানের উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুত কোথায় গেল, তা নিয়ে রহস্য দানা বেঁধেছে। নিউইয়র্ক টাইমস বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই অনিশ্চয়তার কথা তুলে ধরেছে।

পত্রিকাটির তথ্য অনুযায়ী, ইরান বিগত বছরগুলোতে ৮৮০ পাউন্ডের মতো ৬০ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম জমা করেছিল, যা অস্ত্র তৈরির পর্যায়ের খুব কাছাকাছি। পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ধারণা ছিল, হামলার সম্ভাবনা থাকলে তেহরান এই ইউরেনিয়াম অন্যত্র সরিয়ে ফেলতে পারে।

ট্রাম্প বলছেন ‘কিছুই সরানো হয়নি’, তবে যুক্তরাষ্ট্রেরই কিছু কর্মকর্তার ভিন্নমত

 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, ফোর্দো স্থাপনায় রাখা ইউরেনিয়াম সরানোর মতো ‘বিপজ্জনক ও জটিল’ কাজ ইরান করেনি। তার ভাষায়, ‘কিছুই সরানো হয়নি।’ হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিটও বলেছেন, ‘গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, হামলার আগে ইউরেনিয়াম সরানোর কোনো স্পষ্ট ইঙ্গিত মেলেনি।’

 

তবে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (IAEA) মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসি বলেছেন, প্রমাণ ইঙ্গিত দেয় যে ইউরেনিয়ামের একটি বড় অংশ অন্তত সরানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সবটা সরানো হয়েছে কি না জানি না, তবে অনেকটাই সরানো হয়েছে, সেটার ইঙ্গিত রয়েছে।’

IAEA’র পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ইসফাহান স্থাপনায় হামলার আগেই সেখান থেকে যানবাহন চলাচলের আলামত ছিল। এতে ধারণা করা হচ্ছে, ইউরেনিয়াম কন্টেইনার গাড়ির ট্রাঙ্কে রেখেই সরিয়ে নেওয়া হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স জানিয়েছেন, ইউরেনিয়াম মজুদ কোথায় রয়েছে, তা স্পষ্ট করতে ইরানের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিচ্ছে ওয়াশিংটন। তবে গোয়েন্দা তথ্যে বিরোধ, অবকাঠামো ধ্বংস এবং সীমিত নজরদারির কারণে বিষয়টি স্পষ্ট হতে সময় লাগতে পারে।

পরমাণু কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হলেও আশঙ্কা কাটেনি

মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নাতাঞ্জ পরমাণু স্থাপনার কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি। ফোর্দোর সেন্ট্রিফিউজগুলো আবার চালু করার সম্ভাবনা ক্ষীণ এবং ইসফাহানের ইউরেনিয়াম রূপান্তর স্থাপনাও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তবে ইউরেনিয়াম ও প্রযুক্তি কোথাও লুকিয়ে রাখা হয়েছে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে। ইউরোপীয় কর্মকর্তারা মনে করছেন, ইরান ইউরেনিয়ামের কিছু অংশ বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে রেখেছে, তবে সেই সব অবস্থান এখনও নিশ্চিত নয়।

১২ দিনের সংঘর্ষে প্রাণ গেল ৬০০এর বেশি

১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালালে শুরু হয় ১২ দিনের যুদ্ধ। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এতে অন্তত ৬০৬ জন নিহত ও ৫,৩৩২ জন আহত হন।

জবাবে ইরান ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায় ইসরায়েলে, যাতে ২৯ জন নিহত ও ৩,৪০০–এর বেশি মানুষ আহত হন বলে জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

২৪ জুন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয় এবং দুই দেশই সংঘর্ষ থেকে সরে আসে।

 

সূত্র: আনাদোলু।