
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা চলতি সপ্তাহে নেদারল্যান্ডসের হেগে অনুষ্ঠিতব্য ন্যাটো সম্মেলনে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করেছেন।
২৪ থেকে ২৬ জুন পর্যন্ত অনুষ্ঠেয় এই বৈঠকে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত এসেছে এমন এক সময়ে, যখন দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড—ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের তিন গুরুত্বপূর্ণ মিত্র দেশের নেতারাও সম্মেলনে অংশ না নেওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছেন।
এধরনের সমন্বিত অনুপস্থিতি একদিকে যেমন ন্যাটোর সঙ্গে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের ভবিষ্যৎ অংশীদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, তেমনি আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে একটি বড় সংকেত হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, "বিভিন্ন পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে" প্রধানমন্ত্রীর এই সফর বাতিল করা হয়েছে। যদিও এসব পরিস্থিতির বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি, তবে জাপানি সংবাদমাধ্যম ফুজি টেলিভিশনের দাবি, ন্যাটো ও ইন্দো-প্যাসিফিক চারের (আইপি৪) নির্ধারিত বৈঠকটি বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের অনিশ্চয়তাই মূলত এই সিদ্ধান্তের পেছনে ভূমিকা রেখেছে।
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইসরায়েলের সঙ্গে যৌথভাবে ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে যুক্ত হয়েছেন এবং প্রকাশ্যে তেহরান সরকারের পতন প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন। এই ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে সফর বাতিলের সিদ্ধান্তকে অনেকেই কৌশলগত হিসেবেই দেখছেন।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী ইশিবার পরিবর্তে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকেশি ইওয়ায়া হেগ সফরে যাচ্ছেন। তিনি ন্যাটো-সংক্রান্ত কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক বেশ কিছু বৈঠকেও অংশ নেবেন বলে জানা গেছে।
২০২২ সালে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর যখন জাপানকে প্রথমবারের মতো ন্যাটো সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়, তখন থেকে জাপানের নেতা নিয়মিতভাবে এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। তবে এবছর জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়ার নেতারা সম্মেলনে না যাওয়ায় ইউরোপ ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের নিরাপত্তার মধ্যকার প্রতীকি সংযোগে একটি ছেদ পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা এবং বর্তমানে এশিয়া গ্রুপ কৌশল পরামর্শক সংস্থার সদস্য ক্রিস্টোফার জনস্টোন।
তিনি বলেন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সম্মেলন থেকে সরে দাঁড়ানোর তাৎক্ষণিক কারণ হতে পারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের সুযোগ না পাওয়া। তবে এর গভীরতর কারণ সম্ভবত তিন দেশের নেতার মধ্যেই মিল রয়েছে—তারা এমন একটি সম্মেলনে যোগ দিতে আগ্রহী নন, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র মিত্রদের ওপর প্রতিরক্ষা খরচ বাড়ানোর জন্য জোরালো চাপ প্রয়োগ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।