Image description

কাতারের মার্কিন ঘাঁটিতে আক্রমণের আগেই (সম্ভবত আধঘণ্টা আগে) ইরান কাতারকে জানিয়ে দিয়েছিল। আর কাতার সেটা জানিয়ে দিয়েছিল আমেরিকাকে।
সো এটা এক অর্থে সিম্বলিক অ্যাটাকই ছিল। ২০২০ সালের কাসেম সোলায়মানি হত্যার পরের অ্যাটাকের মতো। কিন্তু এবারেরটা আগেরবারের চেয়েও রিস্কি ছিল। 
কারণ ইরাক ছিল বেসিক্যালি ইরানেরই নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু কাতার সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা রাষ্ট্র। জিসিসি সদস্য। আমেরিকার ঘনিষ্ঠ মিত্র। অলরেডি কাতার, সৌদিসহ সবগুলো রাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর বিবৃতি দিতে শুরু করেছে।


ইরানের হাতে অপশন ছিল ইরাক-সিরিয়ার বেজে আক্রমণ করা। আমি ভেবেছিলাম তারা সেটাই করবে, গালফে হামলা করার রিস্ক নিবে না। 
কিন্তু ইরাকে তারা আগের মতো আমেরিকাকে জানিয়ে হামলা করতে গেলে ব্যাপারটা পুরোপুরি আগের মতো হয়ে যেত। এবারের ঘটনা যেহেতু আরও সিরিয়াস, তাই এবারও সেখানে হামলা করলে না জানিয়েই করতে হতো। তাতে আমেরিকান সৈন্য মারা গেলে ব্যাপারটা সিরিয়াস এসক্যালেশনের দিকে চলে যেতে পারত।
সম্ভবত এসব ক্যালকুলেশন করেই ইরান ভিন্ন পথ বেছে নিয়েছে। তারা পরোক্ষভাবে জানিয়েই হামলা করেছে, কিন্তু সেটা ইরাকের মতো কম গুরুত্বপূর্ণ এবং সহজ টার্গেটে করেনি। করেছে মিডল ইস্টে আমেরিকার সবচেয়ে বড় ঘাঁটিতে। 


ইরানের পক্ষে কাতারকে না জানিয়ে কাতারের মাটিতে হামলা করার রিস্ক নেওয়া সম্ভব ছিল না। সেটা করলে সৌদি-আমিরাতসহ সবগুলো আরব রাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে একজোট হওয়ার অযুহাত পেয়ে যেত। প্রথম গালফ ওয়ারের সময় সাদ্দামের বিরুদ্ধে যেরকম সবগুলো রাষ্ট্র এক হয়ে আমেরিকাকে ডেকে এনেছিল।
ফলে তারা কাতারকে জানিয়েই করেছে। এবং কাতারও সেটা আমেরিকাকে জানিয়ে দিয়েছে।
এখন অনেকেই আসবে এটাকে "নাটক" বলে হাসিঠাট্টা করতে। অথচ বাস্তবে এটাকে নাটক বলে না। এটাকে বলে ক্যালকুলেটেড মেজার। নিশ্চিত পরাজয় হবে - এরকম যুদ্ধ এড়ানোর প্রচেষ্টা।


যেই যুদ্ধটা আজ হচ্ছে, ২০২০ সালে ইরান যদি "নাটক" না করে সিরিয়াসলিই হামলা করত, তাহলে এই যুদ্ধটা তখনই হতো। তখনই আমেরিকা-ইসরায়েল আক্রমণ করে ইরানকে ধ্বংস করে দিত। এবং আমেরিকা সরাসরি ইনভলভড হলে ইরান যে আসলেই ধ্বংস হবে, সেটা পরিষ্কার।
সারাউন্ডেড বাই সুন্নি আরব কান্ট্রিজ, ইসরায়েল, অ্যান্ড ডজনস অব মার্কিন বেজেজ, ইরান ইজ লিভিং অন বরোড টাইম।
এখনও ইরান যদি সিরিয়াসলি আমেরিকান ঘাঁটিতে আক্রমণ করে, যদি আমেরিকান সৈন্য তাদের হাতে মারা যায়, তাহলে সেটা তাদের ধ্বংস ডেকে আনার উপলক্ষ তৈরি করে দিবে।


আমেরিকা হয়তো গ্রাউন্ড ট্রুপস পাঠাবে না। কিন্তু বি-টু বম্বার পাঠিয়ে যদি সব গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়, কে বাধা দিবে?
ইরানের এই মুহূর্তের যুদ্ধটা ইসরায়েলের সাথে। সেটাতেই তারা হিমশিম খাচ্ছে। হ্যাঁ, তারা ইসরায়েলের ভালো ক্ষয়ক্ষতি করতে পারছে, যেটা গত ৫২ বছরে কেউ করেনি। কিন্তু বিপরীতে তাদের নিজেদেরও অকল্পনীয় ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।
সেই জায়গায় তারা যদি আমেরিকার উপর সিরিয়াস আক্রমণ করে আমেরিকাকে সরাসরি তাদের উপর আরও হামলা করার সুযোগ করে দেয়, তাহলে তাদের অবস্থা ইরাক-আফগানিস্তানের মতোই হবে।


যারা এই সব হিসাব-নিকাশ না বুঝে "নাটক" বলে চেঁচাবে, বুঝবেন তারা হয় কাঠবলদ, অথবা তারা চায় ইরান ধ্বংস হোক আর মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল আর তার মিত্রদের একক সু্প্রিমেসি প্রতিষ্ঠিত হোক।
ইরান যদি আমেরিকাকে সরাসরি এই যুদ্ধে জড়িত হওয়ার সুযোগ না দিয়ে ইসরায়েলের মোটামুটি ক্ষতি সাধন করে এই যুদ্ধ থেকে বেরিয়ে আসতে পারে, সেটাই হবে তাদের বিজয়। তারা হয়তো সেই পথেই এগুনোর চেষ্টা করবে।

মোজাম্মেল হোসেন ত্বোহা