Image description
 

ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান সংঘাত এবং মার্কিন হামলার পর ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির উত্তরসূরি নির্বাচন প্রক্রিয়া নতুন করে গতি পেয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাঁচ কর্মকর্তা ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, দু বছর আগে খামেনির মনোনীত তিন শীর্ষ ধর্মীয় ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত কমিটি দ্রুত একজন বিকল্প নেতা নির্ধারণের চেষ্টা করছেন।

এই দৌড়ে এগিয়ে আছেন দুজন ব্যক্তি। একজন হলেন সর্বোচ্চ নেতার ৫৬ বছর বয়সী পুত্র মোজতাবা খামেনি এবং অন্যজন ইসলামিক বিপ্লবের গুরু খোমেনির নাতি ৫৩ বছর বয়সী হাসান খোমেনি।

চলমান সংঘাতে খামেনি হঠাৎ প্রাণ হারালে নতুন নেতার নাম ঘোষণার জন্য প্রস্তুত থাকতে চাইছে তেহরান। দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বিকল্প নেতার নাম ঘোষণার কোনও বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন ওই কর্মকর্তারা।

ওই কর্মকর্তারা আরও বলেছেন, ৮৬ বছর বয়সী খামেনিকে সপরিবারে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছে রেভল্যুশনারি গার্ডসের বিশেষ শাখা ভ্যালি ইয়ে আমর। সর্বোচ্চ নেতাকে বিকল্প নেতৃত্ব নির্বাচনের বিষয়ে নিয়মিতভাবে অবহিত করা হচ্ছে।

তবে ক্ষমতা হস্তান্তর সহজ হবে কিনা, কিংবা নতুন নেতার কর্তৃত্ব বর্তমান খামেনির মতো প্রতিষ্ঠিত হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ সাম্প্রতিক ইসরায়েলি হামলায় বিপ্লবী গার্ডের কয়েকজন শীর্ষ কমান্ডার নিহত হয়েছেন, যাদের সহায়তায় খামেনি তার ক্ষমতা ধরে রেখেছেন।

খামেনির বয়স ও স্বাস্থ্যগত কারণেই তার উত্তরসূরি নির্ধারণ নিয়ে পরিকল্পনা অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর এই পরিকল্পনায় গতি এসেছে বলে জানিয়েছেন অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো।

বিশেষ করে সেপ্টেম্বরে ইসরায়েলের হাতে হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হওয়ার পর বিষয়টি আরও স্পর্শকাতর হয়ে ওঠে।

মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলা এবং তার পর যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলার কারণে উত্তরসূরি নির্বাচনের চাপ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।

এরমধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট একরকম হুমকি দিয়ে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করে তোলেন। তিনি বলেন, খামেনি কোথায় আছে আমরা জানি। তিনি খুবই সহজ একটি লক্ষ্য।

যদিও খামেনি প্রকাশ্যে কোনো উত্তরসূরিকে সমর্থন জানাননি, তিনি অতীতে নিজের পুত্রকে উত্তরসূরি করার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন বলে শীর্ষ কর্মকর্তারা দাবি করেছেন। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, নিজের ছেলেকে সর্বোচ্চ নেতা হওয়ার অনুমতি দিলে ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের মাধ্যমে ফেলে আসা রাজতন্ত্র বা বংশানুক্রমিক শাসনের ধাঁচ ফিরে আসবে।

খামেনির উত্তরসূরি হওয়ার আলোচনায় এক সময় যারা কেন্দ্রে ছিলেন তাদের অনেকেই এখন আর প্রতিযোগিতায় নেই। কেউ মারা গেছেন, কেউ রাজনৈতিকভাবে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছেন, আবার কেউ পেছনে পড়ে গেছেন। ফলে এখন আলোচনার কেন্দ্রে কেবল মুজতাবা খামেনি ও হাসান খোমেনির নামই আলোচিত হচ্ছে।
তবে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়ে অন্য কেউ উঠে এলেও তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। বর্তমান নেতা নিজেই ক্ষমতা পাওয়ার সময় অবিসংবাদিত পছন্দ ছিলেন না।

১৯৮৯ সালে আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির মৃত্যুর পর আলি খামেনিকে উত্তরসূরি করা হয়। অথচ তিনি তখন একজন মাঝারি মানের ধর্মীয় নেতা ছিলেন।
তাকে তখন দুর্বল বলে সমালোচনা করেছিলেন অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি।

কিন্তু এরপর রেভল্যুশনারি গার্ডের সমর্থনে তিনি একের পর এক প্রতিদ্বন্দ্বীকে সরিয়ে দিয়ে দেশের একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ওঠেন।

তথ্যসূত্র: রয়টার্স