Image description
 

বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি পরিবহন পথ হরমুজ প্রণালি বন্ধের হুমকি দিয়েছে ইরান। পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে ইরানকে এই সিদ্ধান্ত থেকে বিরত রাখতে এবার চীনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

রবিবার (২২ জুন) এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, “আমি বেইজিংয়ের চীনা সরকারকে অনুরোধ করবো তারা যেন ইরানের সঙ্গে যোগাযোগ করে। কারণ চীন নিজের জ্বালানির জন্য হরমুজ প্রণালির ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল।”

চীন বর্তমানে ইরানের সবচেয়ে বড় তেল ক্রেতা এবং দেশটির ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত। এরই মধ্যে ইরানের সংসদ হরমুজ প্রণালি বন্ধের অনুমোদন দিয়েছে, যদিও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ।

এই পদক্ষেপ এসেছে এমন এক সময়, যখন মার্কিন বাহিনী গত সপ্তাহান্তে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। এর প্রতিক্রিয়ায় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকার রাখি।”

বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, ইরান যদি হরমুজ প্রণালি দীর্ঘ সময়ের জন্য বন্ধ করে দেয়, তাহলে আন্তর্জাতিক তেলবাজারে ব্যারেলপ্রতি দাম ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে জেপি মর্গান মনে করছে, ইরান এমন পদক্ষেপ নেবে না কারণ যুক্তরাষ্ট্র একে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা হিসেবে বিবেচনা করতে পারে।

পারস্য উপসাগরকে ওমান উপসাগর ও আরব সাগরের সঙ্গে যুক্ত করা একমাত্র জলপথ হচ্ছে হরমুজ প্রণালি। এই সংকীর্ণ প্রণালিটির সবচেয়ে কম প্রস্থ মাত্র ৩৩ কিলোমিটার, কিন্তু এর মাধ্যমে প্রতিদিন বিশ্বের মোট অপরিশোধিত তেলের ২০ শতাংশ (প্রায় ২ কোটি ব্যারেল) পরিবাহিত হয়।

এই রুট দিয়ে তেল রপ্তানি করে সৌদি আরব, ইরাক, ইরান, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতার। বিশেষ করে এশিয়ার দেশগুলো—চীন, ভারত, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া তাদের জ্বালানির সিংহভাগের জন্য এই প্রণালির ওপর নির্ভরশীল।

তেল বাজারে ইতোমধ্যেই অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও বলেন, “প্রণালি বন্ধ করা ইরানের জন্য আত্মঘাতী হবে। কারণ তাদের নিজের তেল রপ্তানিও এই পথ দিয়েই হয়। এটি বন্ধ হলে চীনেও তারা তেল পাঠাতে পারবে না।”

তথ্য অনুযায়ী, ইরান প্রতিদিন ৩.৩ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উৎপাদন করে এবং গত মাসে প্রায় ১.৮৪ মিলিয়ন ব্যারেল রপ্তানি করেছে, যার প্রধান গন্তব্য ছিল চীন।

তেলবাজার বিশ্লেষক ম্যাট স্মিথ বলেন, “হরমুজ বন্ধ করলে ইরান নিজের অর্থনীতিকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে। কারণ এর ফলে চীনের সঙ্গে তাদের তেল বাণিজ্যও বন্ধ হয়ে যাবে।”

যুক্তরাষ্ট্রও তাদের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে। রুবিও বলেন, “এই ধরনের পদক্ষেপ বিশ্ব অর্থনীতির জন্য বড় ধাক্কা হতে পারে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত রয়েছে। আমাদের পঞ্চম নৌবহর বাহরাইনে মোতায়েন আছে, যারা পারস্য উপসাগরের সামুদ্রিক বাণিজ্য রক্ষার দায়িত্বে রয়েছে।”

জ্বালানি বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ভরটেক্সা জানায়, প্রতিদিন এই প্রণালি দিয়ে শুধু তেলই নয়, বিপুল পরিমাণ কনডেনসেট ও তরল প্রাকৃতিক গ্যাস পরিবাহিত হয়। কাতার বিশ্বের অন্যতম এলএনজি রপ্তানিকারক দেশ এই পথের ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীল।

বিশ্ব কূটনৈতিক মহল এখন তাকিয়ে আছে চীনের ভূমিকার দিকে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানকে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে চীনের কূটনৈতিক ক্ষমতা আছে এবং যুক্তরাষ্ট্রও এই পরিস্থিতিতে সরাসরি বেইজিংয়ের সহায়তা চাচ্ছে—যা বর্তমান ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন।

 

(ঢাকাটাইমস