
ইসরায়েলের তামরা শহর থেকে শুরু করে হাইফার অলিগলিতে এখন শুধু শোক আর উদ্বেগ। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) তামরা শহরে এক পরিবার একই ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় চারজন সদস্যকে হারায়। সেখানকার মুসলিমরা বলছেন, ‘আমরাও এই দেশের নাগরিক। তবে আমাদের এলাকা কেন এত অসুরক্ষিত?’
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার দ্বন্দ্ব নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরে উভয় দেশ একে অন্যকে শত্রু হিসেবে দেখে আসছে। ইরান এমন একাধিক সশস্ত্র গোষ্ঠীকে সমর্থন করে যাদের ইসরায়েল তার নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে। যেমন, লেবাননের হিজবুল্লাহ, গাজা-ভিত্তিক হামাস ও ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় শুরু হওয়া ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ এ উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলে।
তবে এ দ্বন্দ্ব ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় রূপ নেয় নয় দিন আগেই। আর এর প্রভাব পড়তে শুরু করে ইসরায়েলের প্রায় ১৭ লাখ ৮২ হাজার মুসলমানদের ওপর। এটি ইসরায়েলের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৮ শতাংশ।
অনেক দিন ধরেই ইসরায়েলে অবস্থিত মুসলিম সম্প্রদায় দাবি করে আসছে, সরকার তাদের প্রয়োজনীয় সুরক্ষা দিচ্ছে না। ক্ষেপণাস্ত্র যখন হাইফা বা তেল আবিবে পড়ে, তখন সেখানে বাঙ্কার, নিরাপদ ঘর এবং উদ্ধারকারীদের দ্রুত সাড়া দেওয়ার ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু রাহাত, তামরা, শেফা-আমর, আরবা, হাইফা, লদ আর রামাল্লাহের মতো মুসলিম শহরসহ অন্যান্য মুসলিম শহরে এসবের অভাব স্পষ্ট।
শনিবার (২১ জুন) হাইফার একটি মসজিদে ইরানের একটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। মসজিদটির বড় ধরনের ক্ষতি না হলেও, এর প্রতি মানুষের অনুভূতির ক্ষতিটি বেশ গভীর। একজন ইমাম বলেন, ‘এটা শুধু একটা দালান নয়, এটা আমাদের পবিত্র স্থান।’
এ ঘটনার পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বহু মানুষ কষ্ট আর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
কেউ কেউ বলছেন,
আমাদের মসজিদ রক্ষা পায় না, আমাদের ঘরও না। তাহলে আমরা কোথায় যাব?
একজন বাসিন্দা বলেন, ‘আমাদের পাশের এলাকায় নিরাপত্তার আধুনিক ব্যবস্থা আছে। কিন্তু আমরা শুধু প্রার্থনা করি বেঁচে থাকার জন্য।’
এক গবেষণায় দেখা গেছে, বেশিরভাগ ইসরায়েলি মুসলমান ধর্মভীরু বা ঐতিহ্যবাহী। মাত্র ১৭ শতাংশ নিজেকে সেক্যুলার বা ধর্মনিরপেক্ষ বলেন। তাই মসজিদ ও ধর্মীয় স্থানগুলোর নিরাপত্তা তাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
রাজনৈতিকভাবে ইসরায়েলের মুসলমানদের ভিন্ন ভিন্ন মত আছে। কেউ কেউ দেশের পাশে দাঁড়ান, আবার কেউ কেউ সরকারের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তারা বলছেন, শুধু এখন নয়, অনেকদিন ধরেই তারা বৈষম্যের শিকার।
এ পরিস্থিতিতে অনেক মুসলিম নেতা দাবি তুলেছেন, মুসলিম শহরগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্র বাড়াতে হবে, ধর্মীয় স্থানগুলোকে নিরাপত্তা দিতে হবে এবং সবাইকে সমানভাবে রক্ষা করতে হবে।
একজন সামাজিক কর্মী বলেন, ‘আমাদের দাবি খুব সহজ। আমাদের দেখে রাখা হোক, আমাদের কথাও শোনা হোক, এবং আমাদেরও সুরক্ষা দেওয়া হোক, যেমন অন্য নাগরিকদের দেওয়া হয়।’
তথ্যসূত্র : রয়টার্স, দ্য টাইমস, টাইমস অব ইসরায়েল, অ্যালায়েন্স ফর মিডল ইস্ট পিস