
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো মাটির এতটাই গভীরে নির্মিত যে সেগুলো ধ্বংসে কার্যকর একমাত্র প্রচলিত অস্ত্র হলো যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী বাংকার-বাস্টার বোমা। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি ইসরাইলকে সামরিক সহায়তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তবে এই অস্ত্রই হতে পারে তার মূল পছন্দ।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, জিবিইউ-৫৭, ৩০ হাজার পাউন্ড (১৩,৬০৭ কেজি) ওজনের এই বোমাটি প্রায় ২০০ ফুট (৬১ মিটার) গভীরে ঢুকে বিস্ফোরিত হতে পারে। ইরানের পারমাণবিক বোমা তৈরির প্রচেষ্টা থামাতে ইসরাইল বহুদিন ধরেই সামরিক হুমকি দিয়ে এলেও এতদিন পর্যন্ত তারা এমন ক্ষমতাসম্পন্ন বোমা তাদের ভাণ্ডারে পায়নি।
গত এক সপ্তাহে ইসরাইলি সেনাবাহিনী ইরানের অনেক সামরিক কমান্ডারকে হত্যা করেছে ও নানা ভূ-পৃষ্ঠস্থ স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। তবে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির মূল স্থাপনাগুলোর ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি এখনও পরিষ্কার নয়।
ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংক ট্যাঙ্ক ফাউন্ডেশন ফর ডিফেন্স অব ডেমোক্রেসিজ (এফডিডি)-এর ইরানবিষয়ক পরিচালক বেনহাম বেন তালেবলু বলেন, ‘তাদের ক্ষেপণাস্ত্র, লঞ্চার, সামরিক ঘাঁটি, উৎপাদন কেন্দ্র, পারমাণবিক বিজ্ঞানী, ও সামরিক নেতৃত্ব খুবই চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
তবে তিনি আরো বলেন, ‘ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির হৃদপিণ্ডে ইসরাইল কতটা আঘাত হেনেছে, তা নিয়ে এখনো প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।’
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে, তেহরানের দক্ষিণে অবস্থিত ফরদো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনায় এখনো কোনো ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এই স্থানটি ৩০০ ফুট পাথরের নিচে অবস্থিত, যা ইসরাইলি অস্ত্রের আওতার বাইরে।
তালেবলু বলেন, ‘ফরদোর দিকেই এখন সবার নজর- এটি এমন এক জায়গা যা শুধু যুক্তরাষ্ট্রই ধ্বংস করতে সক্ষম।’
মার্কিন সামরিক বাহিনীর তথ্যমতে, জিবিইউ-৫৭ বোমাটি রক ও কংক্রিট ভেদ করে ২০০ ফুট গভীরে প্রবেশ করতে পারে এবং সেখানে বিস্ফোরিত হয়। এটি সাধারণ বোমার মতো নয়, যা প্রভাব বা ধাক্কার সাথে সাথে বিস্ফোরিত হয়।
ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (এসএসআইএস)-এর ফেলো মাসাও ডাহলগ্রেন বলেন, ‘এই ধরনের মাটির গভীরে অবস্থিত স্থান ধ্বংসের জন্য বোমাটির আবরণ হয় ঘন ও শক্তিশালী স্টিলের, যাতে তা পাথরের স্তর ভেদ করে ঢুকতে পারে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এতে বিশেষ ফিউজ থাকে, কারণ উচ্চচাপ ও ধাক্কার মধ্যে এটি সাথে সাথে বিস্ফোরিত হলে কাজ হবে না।’
এই বোমার নকশা শুরু হয় ২০০০ সালের শুরুতে। ২০০৯ সালে বোয়িংয়ের কাছে ২০টি জিবিইউ-৫৭ তৈরির অর্ডার দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
শুধু যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ স্টেলথ বোমার এই বোমা বহনে সক্ষম। এএফপি স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণ করে জানিয়েছে, এই বিমানগুলো মে মাসের শুরুতে ভারত মহাসাগরের দিয়েগো গার্সিয়া ঘাঁটিতে মোতায়েন করা হয়েছিল, তবে জুনের মাঝামাঝি সেগুলোর অবস্থান আর দেখা যায়নি।
ডাহলগ্রেন বলেন, ‘এই বি-২ বিমানগুলো সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র থেকে মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে হামলা চালাতে পারে, এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে।’
প্রত্যেকটি বি-২ বিমান দুটি করে জিবিইউ-৫৭ বহন করতে পারে। সাবেক মার্কিন সেনা লেফটেন্যান্ট জেনারেল ও র্যান্ড করপোরেশনের গবেষক মার্ক শোয়ার্ৎজ বলেন, ‘এই ধরনের আক্রমণে একটি বোমা যথেষ্ট হবে না- একাধিক বোমা প্রয়োজন হবে।’
তিনি আরো বলেন, ইরানের আকাশে ইসরাইলের প্রাধান্য বি-২ বোমার বিমানের ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের হস্তক্ষেপ বিশাল রাজনৈতিক মূল্য নিয়ে আসবে বলে মনে করেন তালেবলু। তিনি বলেন, ‘এই বাংকার-বাস্টার বোমা একমাত্র সমাধান নয়।’
যদি যুক্তরাষ্ট্র এই বোমা না ব্যবহার করে এবং কূটনৈতিক সমাধানও সম্ভব না হয়, তাহলে ইসরাইল ফরদোর প্রবেশপথ ধ্বংস, বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন করাসহ বিভিন্ন বিকল্প উপায় বেছে নিতে পারে- যেমনটা তারা ইতোমধ্যে নাতানজে করেছে।