Image description

ইরানে ইসরায়েলের অপারেশন ‘রাইজিং লায়ন’-এর সফলতায় বিশ্ব ভড়কে গেছে। বৃহস্পতিবার (১২ জুন) গভীর রাতে শুরু হওয়া সেই হামলায় ইরানের শীর্ষস্থানীয় সামরিক নেতা ও পরমাণু বিজ্ঞানীরা নিহত হন। গুপ্তচর নেটওয়ার্ক এবং উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করেই এত সুনির্দিষ্ট হামলা চালায় ইসরায়েল। এসোসিয়েটেড প্রেসের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনটির সারসংক্ষেপ প্রকাশ করে জর্ডানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রয়া নিউজ। তাতে বলা হয়, হামলার প্রস্তুতি, হামলা সংঘটন এবং নেতাদের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়াসহ সব সামরিক কাজে ইসরায়েল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সহায়তা নেয়।

বৃহস্পতিবার রাত ও শুক্রবার (১৩ জুন) ভোরে শুরু হওয়া ওই অতর্কিত হামলায় ইরানের অভ্যন্তরে অবস্থিত সামরিক স্থাপনা এবং পারমাণবিক স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্য করে যুদ্ধবিমান এবং ড্রোন হামলা করা হয়। এতে বেশ কয়েকজন জেনারেল এবং পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানের বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সাময়িকভাবে অকার্যকর হয়ে পড়ে।

বছরের পর বছর পরিকল্পনা

বর্তমান ও প্রাক্তন গোয়েন্দা এবং সামরিক কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকারের উপর ভিত্তি করে তৈরি এপির প্রতিবেদন অনুসারে, ‘রাইজিং লায়ন’ হামলার পরিকল্পনা কয়েক বছর ধরে চলে। ইসরায়েলি দখলদার মোসাদ গোয়েন্দা সংস্থার একজন প্রাক্তন কর্মকর্তার মতে, এই হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে লক্ষ্য করার জন্য মোসাদের বছরের পর বছর কাজের চূড়ান্ত ফল।

চোরাচালান ড্রোন এবং গোয়েন্দা তথ্যের ঘাটতি

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোসাদ ইসরায়েলি দখলদার সামরিক বাহিনীর সঙ্গে তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে এই অভিযানের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সংগ্রহের কাজ করে। যার মধ্যে ছিল নিকটবর্তী হামলার জন্য যানবাহনে লুকানো ছোট ড্রোন ইরানে চোরাচালান।

গত অক্টোবরে ইরানে বিমান হামলার সময় প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্যের উপর ভিত্তি করে এই অভিযান পরিচালিত হয়। ওই সময় ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য দুর্বলতা প্রকাশ হয়ে গিয়েছিল।

এআইয়ের মাধ্যমে লক্ষ্য নির্ধারণ

হামলায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে। লক্ষ্য নির্বাচনে জড়িত একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, ইসরায়েল তথ্য বিশ্লেষণ, যোগাযোগ বাধাগ্রস্ত করা এবং ইরানি নেতাদের গতিবিধি ট্র্যাক করতে এআই ব্যবহার করেছে।

গত অক্টোবরে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই হামলার প্রস্তুতির নির্দেশ দেওয়ার পর পরিকল্পনা কার্যকর করা হয়। মোসাদ কর্মকর্তারা ইরানের সিনিয়র সামরিক ব্যক্তিদের একটি তালিকা তৈরি করেন। তাদের কর্মস্থল, দৈনন্দিন রুটিন এবং এমনকি অবসর কার্যকলাপও সেই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল।

এআই সিস্টেমের পাশাপাশি মাঠে থাকা গুপ্তচররা ইরানি পারমাণবিক বিজ্ঞানী এবং বিপ্লবী গার্ডের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নজরদারি করে নিখুঁত লক্ষ্য নির্ধারণে সহায়তা করে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মোসাদের ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বানচাল করার প্রচেষ্টা ২০০০ সালের শুরু থেকে শুরু হয়। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথভাবে তৈরি স্টাক্সনেট ভাইরাস ব্যবহার, ২০১৮ সালে ইরানের গোপন পারমাণবিক সংরক্ষণাগারের নথি চুরিসহ কোনো কিছুই বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং ওই সময় থেকে ইসরায়েল যা করেছে তার সব অভিজ্ঞতাই এবারের অভিযানে কাজে লাগানো হয়।