Image description

হামলা-পাল্টা হামলার পাশাপাশি নাটকীয় মোড় নিয়েছে ইরান-ইসরাইল সংঘাত। যুদ্ধবিরতির আলোচনা যখন চলছে ঠিক সেই মুহূর্তে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তেহরানবাসীকে রাজধানী ছেড়ে যেতে বলেছেন।

জি-৭ বৈঠক শেষ না করেই ওয়াশিংটনে ফিরে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক আহ্বান, চীন সাগর থেকে মার্কিন রণতরীর পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে যাত্রা শুরু এবং মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধির পর এখন আলোচনার মূল বিষয় আমেরিকা কি তা হলে সরাসরি যুদ্ধে জড়াচ্ছে? ইসরাইলকে রক্ষায় শেষ পর্যন্ত আমেরিকা হয়তো সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াবে বলে মনে করছেন সামরিক বিশ্লেষকরা।

বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরাসহ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের বিশ্লেষকদের এই ধারণা আরো জোরালো হয়েছে যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর একটি বক্তব্যের বিরোধিতা করে বলেন, ‘আমি যুদ্ধবিরতির জন্য নয়, আরো বড় কিছু করার জন্য ওয়াশিংটন ফিরে যাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি নয়, আমি যুদ্ধ শেষ করতে চাই। ইরান কোনোভাবেই পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হতে পারবে না।’

উল্লেখ্য, ফরাসি প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকরের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জি-৭ বৈঠক শেষ না করেই ওয়াশিংটন ফিরে গেছেন।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুদ্ধ শেষ করার বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য যথেষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ। অর্থাৎ ইসরাইলের প্রত্যাশা অনুযায়ী ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছেন ট্রাম্প। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ইরানের ফোর্দো পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ স্থাপনায় বোমা হামলা চালাবেন কি নাÑ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তা পর্যালোচনা করে দেখছেন।

তবে কোনো কোনো বিশ্লেষকের মতে, আমেরিকা সরাসরি ইরানে হামলায় অংশ না নিলেও ইরানের পরমাণু ব্যবস্থাপনা ধ্বংসে ইসরাইলকে প্রয়োজনীয় সামরিক সহায়তা দিতে পারে। পাশাপাশি ইসরাইলে ইরানের আক্রমণ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপই নেবে ওয়াশিংটন। এ ছাড়া ইরানকে একটি শেষ সুযোগও দিতে পারেন ট্রাম্প। এ ব্যাপারে সিএনএন জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকপসহ অন্য কর্মকর্তাদের ইরানের সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব একটি আলোচনার নির্দেশনা দিয়েছেন।

তবে ইসরাইলের পক্ষ থেকে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিতে আমেরিকার ওপর চাপ বেড়েই চলেছে। আমেরিকার পক্ষ থেকে ইসরাইল-ইরান সংঘাত শুরুর সঙ্গে সঙ্গে জানানো হয়েছিল ইরানে ইসরাইলের হামলার সঙ্গে তারা কোনোভাবেই জড়িত নয়। তবে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু একাধিকবার বলেছেন, তারা যা কিছু করছেন আমেরিকার সঙ্গে সমন্বয় করেই করছেন। এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প সংঘাত শুরুর দুদিন পর জানান, ইরানে ইসরাইলের হামলার পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি সবকিছুই জানতেন।

এদিকে ইরানের ফোর্দো পারমাণবিক সমৃদ্ধিকরণ স্থাপনায় বোমা হামলা চালাবেন কি না মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তা পর্যালোচনা করে দেখছেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস এই খবর জানিয়েছে। পারমাণবিক স্থাপনাটি ধ্বংস করতে গেলে আমেরিকার সবচেয়ে বড় বাঙ্কার ধ্বংসকারী বোমা এবং আমেরিকান বি-২ বোমারু বিমান ব্যবহার করতে হবে বলে জানিয়েছে পত্রিকাটি।

যদি তিনি এই সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে আমেরিকা সরাসরি মধ্যপ্রাচ্যে একটি নতুন সংঘাতে জড়িয়ে পড়বে, যা থেকে দূরে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার দুটি নির্বাচনি প্রচারে। মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের ইরান-নীতি নিয়ে দুটি পরস্পরবিরোধী বিবৃতি সামনে এসেছে। একটি ব্যাখ্যায় বলা হচ্ছে, আমেরিকা কেবল আলোচনায় ফেরার দাবি জানাচ্ছে এবং ইরানের বিরুদ্ধে এখনই কোনো হামলার পরিকল্পনা নেই।

অন্যদিকে, দ্বিতীয় বিবরণ অনুযায়ী- যা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজে বিভিন্ন বক্তব্য ও মন্তব্যে তুলে ধরছেন- তাতে বোঝা যাচ্ছে, আমেরিকা ইসরাইলের সঙ্গে যৌথভাবে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। ট্রাম্প ইসরাইলের পদক্ষেপকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিচ্ছেন এবং মনে হচ্ছে, আমেরিকাও কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাস্তবতা আসলে কোনটা তা নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন। কিন্তু কেবল দ্বিতীয় ব্যাখ্যাটিই বাস্তব ঘটনার সঙ্গে মেলে।

মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান এখনো ইসরাইলে কোনো ধ্বংসাত্মক অভিযান চালাতে সক্ষম নয়, এমন পরিস্থিতি কল্পনাও করা যায় না যেখানে আমেরিকা ইরানের সঙ্গে সমতার ভিত্তিতে কোনো চুক্তিতে পৌঁছাবে। যদি কূটনৈতিকভাবে কোনো সমাধান না আসে, তবে আমেরিকা সরাসরি হস্তক্ষেপ না করলে চলমান যুদ্ধ থামবে বলে মনে হচ্ছে না। গত শুক্রবার থেকে ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে চলমান পাল্টাপাল্টি হামলা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ইসরাইল ইরানে একের পর এক বিমান হামলা চালাচ্ছে। জবাবে ইরানও ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালাচ্ছে।

জরুরি ভিত্তিতে তেহরান খালি করতে ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি

জরুরি ভিত্তিতে ইরানের রাজধানী তেহরান শহরের বাসিন্দাদের শহরটি খালি করতে বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালের এক পোস্টে তিনি এ কথা বলেন। ট্রাম্প বলেন, ‘ইরানের পারমাণবিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করা উচিত। আমি তাদের চুক্তি স্বাক্ষর করতে বলেছি। কী লজ্জা, আর মানব জীবনের কী অপচয়! আমি বারবার বলেছি, ইরান কোনোভাবেই পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হতে পারবে না। জরুরি ভিত্তিতে তেহরান খালি করে দিন।’

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের রাজধানী তেহরানের বাসিন্দাদের শহর ছেড়ে চলে যেতে বলার কিছুক্ষণ পর থেকেই তেহরানে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যেতে থাকে। ইরান আর ইসরাইলের মধ্যে পঞ্চম দিনের মতো যখন হামলা-পাল্টা হামলা চলছে, তখন সংঘাত ছাপিয়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের ওই বার্তা উঠে এসেছে আলোচনার কেন্দ্রে।

যুদ্ধবিরতি নয়, বড় কিছু ঘটছে

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সিএনএন ও আলজাজিরা এ খবর জানিয়েছে। জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার পর সোমবার রাতে কানাডা ত্যাগের সময় ম্যাক্রোঁর কড়া সমালোচনা করে ট্রাম্প বলেন, ‘ফ্রান্সের প্রচারলোভী প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ ভুল করে বলেছেন, আমি ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে কাজ করতে জি-৭ ছেড়েছি। এটা ভুল। ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে লেখেন, তার (ম্যাক্রোঁ) কোনো ধারণা নেই আমি কেন ওয়াশিংটনের পথে। এটি নিশ্চয়ই কোনো যুদ্ধবিরতির জন্য নয়, এটা তার চেয়েও অনেক বড় কিছু। আমি ফিরে যাচ্ছি এর চেয়েও অনেক বড় কিছু নিয়ে কাজ করতে। অপেক্ষা করুন, সামনে কী আসে দেখুন।’

ট্রাম্প আরো বলেন, ‘আমি চাই ইরান সম্পূর্ণভাবে হার মেনে নিক।’ তিনি বলেন, ‘ইরানের সঙ্গে আমেরিকা কোনো শান্তি-আলোচনা চালাচ্ছে না। কোনোভাবেই, কোনোরকমে আমরা ইরানের সঙ্গে আলোচনায় নেই। তাদের সেই প্রস্তাবটা গ্রহণ করা উচিত ছিল, যা তাদের দেওয়া হয়েছিল।’

এদিকে, মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ডের এক সাম্প্রতিক বক্তব্যকেও উড়িয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। গ্যাবার্ড মার্চ মাসে কংগ্রেসে বলেছিলেন, আমেরিকার গোয়েন্দা বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে না। ট্রাম্প এর জবাবে বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন, ‘আমি পাত্তা দিচ্ছি না ও কী বলেছে। আমি মনে করি, তারা (ইরান) খুব কাছাকাছি চলে গিয়েছিল।’

এর আগে ম্যাক্রোঁ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ট্রাম্প ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছেন। কানাডার কানানাস্কিসে জি-৭ সম্মেলনে সাংবাদিকদের ম্যাক্রোঁ বলেন, একটি প্রস্তাব এসেছে। বিশেষ করে একটি যুদ্ধবিরতির জন্য এবং বৃহত্তর আলোচনার সূচনা করতে। ফরাসি ভাষায় বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি আরো বলেন, ‘যদি আমেরিকা একটি যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন করতে পারে, তাহলে সেটি খুবই ভালো একটি বিষয় হবে এবং ফ্রান্স তা সমর্থন করবে। আমরা সেটাই চাই।’

আকস্মিক জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের ডাক ট্রাম্পের

হোয়াইট হাউসের ‘সিচুয়েশন রুমে’ আকস্মিক আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডেকেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার কানাডায় জি-৭ সম্মেলনে ছিলেন ট্রাম্প। সেখানে সফর সংক্ষিপ্ত করে তিনি দেশে ফিরে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডেকেছেন। এর আগে ট্রাম্প ইরানের রাজধানী তেহরান থেকে সব বাসিন্দাকে চলে যেতে বলেন। তার এমন বিবৃতি ও নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডাকার মাধ্যমে শঙ্কা তৈরি হয়েছে আমেরিকা ইরান ও দখলদার ইসরাইলের যুদ্ধে জড়িয়ে যেতে পারে। জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালককে নিয়ে গঠিত। এই পরিষদ প্রেসিডেন্টকে জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ে উপদেশ দিয়ে থাকে।

মধ্যপ্রাচ্যের দিকে এগোচ্ছে মার্কিন রণতরী ইউএসএস নিমিৎজ

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ রণতরী ও যুদ্ধবিমানবাহী জাহাজ হিসেবে পরিচিত মার্কিন এয়ারক্রাফট ইউএসএস নিমিৎজ বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের পথে রয়েছে। আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচল ট্র্যাকিং সংস্থা মেরিন ট্রাফিক এক বিবৃতিতে জানিয়েছে এ তথ্য। মেরিন ট্রাফিকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সোমবার দক্ষিণ চীন সাগরে যাত্রাপথ পরিবর্তন করে পশ্চিম দিকে রওনা দেয় ইউএসএস নিমিৎজ। এই রণতরী বর্তমানে মালাক্কা প্রণালি পেরিয়ে ভারত মহাসাগরে রয়েছে। লোহিত সাগর, আরব সাগর ও পারস্য উপসাগর— মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের প্রধান তিনটি সাগর-উপসাগর ভারত মহাসাগরের কাছাকাছি। সাগরপথে দক্ষিণ চীন সাগর থেকে মধ্যপ্রাচ্যে যেতে হলে ভারত মহাসাগর হয়েই যেতে হয়।

এদিকে, এরই মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে থাকা আমেরিকা বাহিনীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সেখানে সেনা উপস্থিতি বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন আমেরিকার প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ। তবে তিনি এও জানিয়েছেন, মধ্যপ্রাচ্যে ‘অতিরিক্ত সেনা উপস্থিতি’ নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত জানানো হলেও তা কেবল ওই অঞ্চলে ওয়াশিংটনের ‘সুরক্ষা’ নিশ্চিত করার জন্য।

খামেনিকে হত্যার হুমকি নেতানিয়াহুর

ইরানের সুপ্রিম নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এবিসি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেন, খামেনিকে হত্যা করলে যুদ্ধ বাড়বে না; বরং যুদ্ধ শেষ হবে। খামেনিকে হত্যাচেষ্টার ব্যাপারে প্রশ্ন করলে নেতানিয়াহু বলেন, ‘দেখুন আমাদের যা করা প্রয়োজন, আমরা তা-ই করব। আমি বিস্তারিত কিছু বলব না। কিন্তু আমরা তাদের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানীদের টার্গেট করেছি। যদি আমরা খামেনিকে হত্যা করি তাহলে যুদ্ধ বাড়বে না। এটি যুদ্ধ বন্ধ করবে।’

ইরানে হামলার নিন্দা জানিয়েছে মিসরসহ ২১ মুসলিম দেশ

ইরানে ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ মিত্র মিসরসহ ২১টি মুসলিম দেশ। নিন্দা জানানোর পাশাপাশি উত্তেজনা হ্রাস এবং পরমাণু প্রকল্প বন্ধেরও আহ্বান জানিয়েছে দেশগুলো। সোমবার এক খোলা চিঠিতে এই নিন্দা এবং উত্তেজনা হ্রাসের আহ্বান জানানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো হলো- মিসর, আলজেরিয়া, বাহরাইন, ব্রুনাই, শাদ, কমোরোস, জিবুতি, গাম্বিয়া, ইরাক, জর্ডান, কুয়েত, লিবিয়া, মৌরিতানিয়া, ওমান, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, সুদান, সোমালিয়া, তুরস্ক এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। অন্যদিকে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি সোমবার তার এক পোস্টে উল্লেখ করেন, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীকে নিরস্ত্র করার জন্য ওয়াশিংটন থেকে একটি ফোন কলই যথেষ্ট। তবে কূটনৈতিকভাবে সংঘাত থামানোর নানা প্রচেষ্টা চলতে থাকলেও ইসরাইল আর ইরানের মধ্যে পাল্টাপাল্টি মিসাইল ও বিমান হামলা থামছে না।

তেহরানে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ

ইরানের সংবাদমাধ্যম তেহরানের কেন্দ্রস্থলসহ বিভিন্ন জায়গায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনার খবর দিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার এসব খবরে বলা হয়েছে, আন্দারজগৌ এলাকায় ইসরাইলের গোলা আঘাত হেনেছে। এদিকে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন তারা প্রথম একধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছেন, যা ইসরাইল প্রতিহত করতে অক্ষম। তিনি বলেন, অল্প কিছু দেশের হাতেই এ ধরনের উচ্চপ্রযুক্তির ক্ষেপণাস্ত্র আছে।

ইসরাইলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সবশেষ হামলায় ইরান ত্রিশটির মতো ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। তবে তারা বলেছেন, এর বেশিরভাগই তারা প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছেন। অন্যদিকে, ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী দাবি করেছেন, ইসরাইল তেহরানে আরো ১০টির মতো পারমাণবিক লক্ষ্যবস্তু ধ্বংসের পথে রয়েছে।

টাইমস অব ইসরাইলের সঙ্গে কথা বলার সময় ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাৎজ বলেন, দেশটির বিমান বাহিনী আজ (বুধবার) তেহরানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ আরো হামলা চালাবে, যার লক্ষ্যবস্তু হবে শাসনব্যবস্থার বিভিন্ন লক্ষ্য ও অবকাঠামো। তিনি আরো বলেন, ইসরাইলের বিমান বাহিনীর ক্ষমতার কারণে তারা তেহরানে অন্তত ১০টি পারমাণবিক লক্ষ্যবস্তু ধ্বংসের খুব কাছাকাছি রয়েছে।

ইরানের ফোর্দো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রের বিষয়টিও বিশেষভাবে উল্লেখ করেন কাৎজ। কেন্দ্রটি এত গভীরে নির্মিত যে, শুধু মার্কিন ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা দিয়ে এটির গুরুতর ক্ষতি করা সম্ভব বলে ধারণা করা হয়। কাৎজ বলেন, এ বিষয়টিও অবশ্যই সমাধান করা হবে।