Image description

 ইরান থেকে ছোড়া একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সম্প্রতি আঘাত হেনেছে ইসরায়েলের একটি ভবনের দেয়ালে। দেয়াল ভেদ করে ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রবেশ করে ভবনের নিচে থাকা একটি আশ্রয়কেন্দ্রে, যেখানে নিহত হয়েছেন অন্তত চারজন। নিহতদের মধ্যে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয় বাংকারের ভেতর থেকে, আরেকজনের মরদেহ পাওয়া যায় পাশের ভবনে। ধারণা করা হচ্ছে, বিস্ফোরণের শক্তিতেই সেটি ছিটকে এসেছে।

ইসরায়েলের গৃহমন্ত্রক অধীনস্থ হোম ফ্রন্ট কমান্ডের প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, আশ্রয়কেন্দ্রগুলো আধুনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে অক্ষম। এর ফলে রাজধানী তেল আবিবসহ বিভিন্ন শহরে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক শঙ্কা ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

ইসরায়েলি দৈনিক ইসরায়েল হায়োম জানিয়েছে, হোম ফ্রন্ট কমান্ডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তেল আবিবের প্রায় ৪০ শতাংশ বাসিন্দা কার্যকর আশ্রয়কেন্দ্রবিহীন অবস্থায় বসবাস করছেন। শহরের ১০ হাজার পুরনো ভবনে নেই কোনও নিরাপদ বাংকার ব্যবস্থা। ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার হুমকি বাড়তে থাকায় রাজধানীজুড়ে নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে।

এদিকে, ইরানের এক সামরিক মুখপাত্র হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, "ইসরায়েলের বাংকারগুলো আর সুরক্ষা দিতে পারছে না। তেল আবিববাসীদের নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়া উচিত।"

গতকাল রাতে ইসরায়েল হামলা চালায় তেহরানে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনে। সরাসরি সম্প্রচারের সময় ধোঁয়া ও ধুলোর কারণে সংবাদ উপস্থাপককে সম্প্রচারের মাঝপথে সরে যেতে দেখা যায়। কিছু সময় পর সম্প্রচার পুনরায় চালু হলেও, হামলার সময় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তেহরানবাসীকে নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার জন্য আগাম বার্তা দিয়েছিল বলে জানায় ইরানি সংবাদমাধ্যম।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “ইরান এই যুদ্ধে জিতছে না। আলোচনার পথে না এলে তারা দেরি করে ফেলবে।” জি৭ সম্মেলনে কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনির সঙ্গে আলোচনার সময় তিনি এ মন্তব্য করেন।

অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনয়ামিন নেতানিয়াহু এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনিকে হত্যার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তার মতে, এটি সংঘাতকে আরও জোরালো না করে বরং শেষ করতে সাহায্য করবে।

সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান এখন পাল্টা আঘাতে ইসরায়েলকে চাপে ফেলেছে। হামলা-জবাবের মধ্যে ইসরায়েলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪ জনে, আহত ৩০০’র বেশি। অপরদিকে, ইরানে নিহত হয়েছেন অন্তত ২২৪ জন।

ইরানের মিসাইল হামলার পর তেল আবিব, হাইফাসহ বিভিন্ন শহরে হামলা প্রতিহত করতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশজুড়ে সাইরেন বেজেছে এবং জনগণকে বাংকারে অবস্থানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ইসরায়েলি হামলার জবাবে, ইরানের অনুরোধে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA) একটি জরুরি বৈঠক আহ্বান করেছে। চীন, রাশিয়া ও ভেনিজুয়েলা এতে সমর্থন দিয়েছে। তবে কূটনৈতিক মহল মনে করছে, এমন নিন্দা প্রস্তাব পাসের সম্ভাবনা কম।

এদিকে, দক্ষিণ চীন সাগর থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে রওনা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের রণতরী ইউএসএস নিমিটজ। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ উত্তেজনায় মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি ভূমিকা আরও জোরদার হতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, এ সংঘাতের ফলে ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে আন্তর্জাতিক মনোযোগ কিছুটা সরে গেছে, যা রাশিয়ার জন্য কৌশলগত লাভের দিক হিসেবে দেখা হচ্ছে। রুশ সংবাদমাধ্যম কোমেরসান্ত লিখেছে, “মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা ইউক্রেন ইস্যুতে পশ্চিমা দেশগুলোর অগ্রাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে।”

ইরানি প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান স্পষ্ট করে বলেছেন, ইরান যুদ্ধ চায় না, তবে প্রতিটি হামলার জবাব দেবে সমানভাবে। তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সঙ্গে ফোনালাপে তিনি আরও জানান, পারমাণবিক আলোচনা ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধের ওপর নির্ভর করছে।
শীর্ষনিউজ