
রাজধানী তেহরানসহ ইরানের ৮টি শহরে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলের বিমান বাহিনী (আইএএফ)। শুক্রবার (১৩ জুন) স্থানীয় সময় ভোররাতে ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ শুরু করে ইসরায়েল। হামলার শুরুতেই অন্তত ২০০ যুদ্ধবিমান অংশ নেয় এবং ১০০টিরও বেশি স্থানে আক্রমণ চালায়। এর মধ্যে রয়েছে পরমাণু স্থাপনা, ব্যালিস্টিক মিসাইল ঘাঁটি, সামরিক ঘাঁটি ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
এদিকে ইরানে ইসরায়েলের এমন ভয়াবহ হামলার মধ্য দিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ‘শুরু হয়ে গেছে’ বলে মন্তব্য করেছেন এক রুশ জেনারেল। ৫১ বছর বয়সী আপতি আলাদিনোভ নামের ওই মেজর জেনারেল রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর বেশ প্রভাবশালী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম মিররের খবরে জানানো হয়, ইসরায়েলের এমন বিধ্বংসী হামলার পর ওই সেনা কর্মকর্তা ১০ লাখ নতুন সেনা নিয়োগ দিতে ক্রেমলিনকে আহ্বান জানিয়েছেন।
বর্তমানে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ‘সামরিক-রাজনৈতিক’ বিভাগের উপপ্রধান হিসেবে নিয়োজিত আলাদিনোভ বলেছেন, ‘নতুন মোড় নেওয়ার পাশাপাশি যুদ্ধ ইতোমধ্যে একটি গতি পেয়েছে।’
আমাদের সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দেওয়া উচিত উল্লেখ করে এক টেলিগ্রাম পোস্টে তিনি বলেন, ‘অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ আগেভাগে প্রস্তুত করতে হবে। তবে বাস্তবে তা হওয়া উচিত ১০ লাখ।’
‘যুদ্ধ ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। এটি নতুন মোড় নিয়েছে এবং নতুন গতি পেয়েছে। তাই নতুন সেনা নিয়োগ দিয়ে তাদেরকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করতে হবে।’
ইসরায়েলসহ পশ্চিমা দেশগুলোর দিকে ইঙ্গিত করে তিনি আরও বলেন, ‘যেভাবে তারা অন্যদের সঙ্গে খেলছে, এখন ইরানের সঙ্গে খেলছে, একইভাবে যেন আমাদের সঙ্গে এমনকিছু করার সাহস না পায়, সেজন্যও নতুন সেনা প্রস্তুত করতে হবে।’
এরইমধ্যে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে, সেগুলো লক্ষ্যভ্রষ্ট করতে কাজ করছে।
ইসরায়েলের জনগণকে সুরক্ষিত জায়গায় যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়ার কথাও জানিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। এর মধ্যে ইসরায়েলের তেল আবিব শহরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে জানিয়েছে আলজাজিরা।
আলজাজিরা জানায়, ইরানের হামলায় তেল আবিবে বিস্ফোরণ ঘটেছে এবং ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে সাইরেন বেজে উঠেছে।
তেল আবিব ও জেরুজালেমে সাইরেনের শব্দ শোনা গেছে।
এদিকে ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, ইরানের পক্ষ থেকে ইসরায়েলকে জবাব দেওয়া শুরু হয়েছে। ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে কয়েকশ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ইরানে হামলার পর নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। শুক্রবার ভোরে ঘটা এই হামলায় এরইমধ্যে সৌদি আরব, তুর্কিসহ বিশ্বের অনেক দেশ তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
জানা গেছে, ইরানে পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর অংশ হিসেবে অনেক দিন ধরেই পরিকল্পনা করছিল ইসরায়েল। এর অংশ হিসেবে তারা সেখানে একটা ড্রোন ঘাঁটি স্থাপন ও নির্ভুল অস্ত্র ব্যবস্থা ও কম্যান্ডো পাচার করেছে।
ইসরায়েলের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা টাইমস অফ ইসরায়েলকে বলেন, মোসাদ এজেন্টরা তেহরানে সেই ঘাঁটি স্থাপন করেছিলেন। তারপর রাতারাতিতে সেই ঘাঁটি ব্যবহার করেই ভূমিতে স্থাপন করা ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চারগুলিতে আঘাত হানে। এর ফলেই ইরান তাৎক্ষণিক পাল্টা হামলা চালাতে সক্ষম হয়নি এবং তাদের বিমানপ্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অনেকটাই ধ্বংস হয়ে যায়।
ইরানে ইসরায়েলির হামলায় অন্তত ৭৮ জন নিহত ও ৩২৯ জন আহত হয়েছে। দেশটির রেভল্যুশনারি গার্ড পরিচালিত নিউজ এজেন্সিতে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ে, বাস্তবে নিহত ও আহতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে।