
গুজরাটের আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের মিনিট খানেকের মধ্যে কীভাবে এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ড্রিমলাইনার ৭৮৭-৮ বিমানটি ভেঙে পড়লো তা নিয়ে বিস্মিত সকলে। ইতিমধ্যেই অনেক প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিমানের পাইলটরা ছিলেন অভিজ্ঞ। ড্রিমলাইনারটির ক্যাপ্টেন সুমিত সাভারওয়াল এবং তার সহ-পাইলট ক্লাইভ কুন্ডার সম্মিলিতভাবে ৯,০০০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে উড়ান পরিচালনার অভিজ্ঞতা ছিল। সাভারওয়াল বাণিজ্যিক বিমান সংস্থার পাইলট হিসেবে ২২ বছরেরও বেশি অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন। ফলে তাদের দক্ষতা প্রশ্নাতীত। ইতিমধ্যেই কীভাবে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞরা তদন্তে সহায়তা করতে আসছেন। তদন্তকারীরা প্রথম বোয়িং ৭৮৭-এর সঙ্গে জড়িত মারাত্মক দুর্ঘটনার কারণগুলো বোঝার জন্য রাডার, সিসিটিভি এবং গুরুত্বপূর্ণভাবে ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (সিভিআর) এবং ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার (এফডিআর) সহ প্রমাণ সংগ্রহ করছেন। তারা সবদিক থেকে তদন্ত করছেন।
তবে বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের মিনিট খানেকের মধ্যে এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ড্রিমলাইনার ৭৮৭-৮ বিমানটি কীভাবে ভেঙে পড়লো তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
অসামরিক বিমান চলাচল অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজিসিএ) মনে করছেন, পাখির ধাক্কায় হয়তো দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। অথচ এর আগে আরও উচ্চতা থেকে পাখির ধাক্কায় জখম বিমানকে নিরাপদে ফিরিয়ে আনা গেলেও এবার তা হয়নি। বিমানের পাইলট এটিসিতে বিপদ বার্তা পাঠিয়েছিলেন। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কী উড্ডয়নের সময় কোনো সমস্যা দেখা দিয়েছিল। বিমান চালনায় দক্ষরা জানিয়েছেন, উড্ডয়নের পর পরই ল্যান্ডিং গিয়ার বন্ধ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু এক্ষেত্রে তা খোলা ছিল কেন সেই প্রশ্ন
উঠেছে। তাছাড়া উড়ানে যে সময়ে গতিবেগ ১৯০-২০০ নট থাকার কথা সেখানে ১৭৪ নট ছিল কেন? তখন কি পাইলট বিমানকে উপরের দিকে তুলছিলেন নাকি নিচে নামানোর চেষ্টা করছিলেন। এমন প্রশ্নও উঠেছে, বিমানটি কি প্রয়োজনের তুলনায় কম দৌড়ে আকাশে উঠেছিল।
দুই ইঞ্জিনের বোয়িংয়ের একটি ইঞ্জিন ক্ষতিগ্রস্ত হলেও আরেকটি ইঞ্জিনের মাধ্যমে বিমানটির উড়ে থাকার কথা। তাহলে কি এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটি যখন আকাশে উঠেছিল তখন দুটি ইঞ্জিনেই বিদ্যুৎ সংযোগ চলে গিয়েছিল? ২০০৯ সালে নিউ ইয়র্কের লা গার্ডিয়া বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরেই মার্কিন বিমানের দু’টি ইঞ্জিনই বিদ্যুৎ হারিয়ে ফেলে। সেই সময় বিমানটি আরও উচ্চতায় উঠেছিল এবং পানিতে অবতরণ করতে সক্ষম হয়েছিল এবং সমস্ত যাত্রী বেঁচে গিয়েছিল। এক্ষেত্রে অবশ্য বোয়িং বিমানটি মাত্র ৬২৫ ফুট উচ্চতায় ছিল।
কভেন্ট্রি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিমান নিরাপত্তা বিভাগের ভিজিটিং প্রফেসর ফিলিপ বাউম দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টকে বলেন, ‘সম্ভবত মনে হচ্ছে’ সিস্টেম বা একাধিক সিস্টেমের ব্যর্থতার কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।
গরম আবহাওয়ায় প্রচুর পরিমাণে জ্বালানি, যাত্রী এবং পণ্যসম্ভারের ভারী বোঝা নিয়ে উড়ে যাওয়া সবচেয়ে পাইলটের কাছে চ্যালেঞ্জ বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, উচ্চ প্রশিক্ষিত এবং অভিজ্ঞ পাইলটরা কি এমন অবস্থায় বিমানের নিরাপত্তার স্বার্থে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে এবং পদক্ষেপ নিতে পারতেন?
এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছেন, বিমানটিতে ১.২৫ লাখ লিটার জ্বালানি ছিল। পুড়েছিল সেই জ্বালানি। ফলে অত্যধিক তাপমাত্রার কারণেই যাত্রীদের বাঁচানো যায়নি।