Image description

গাজায় ত্রাণ নিতে এসে বারবার গুলির মুখে প্রাণ যাচ্ছে ফিলিস্তিনিদের। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের গঠিত তথাকথিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) গত সোমবারও ত্রাণপ্রত্যাশীদের ওপর গুলি চালায়। সশস্ত্র সংগঠনটি ত্রাণ দেওয়ার নামে এ পর্যন্ত শতাধিক জনকে গুলি করে হত্যা করেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, দক্ষিণ রাফার তাল আল-সুলতান এলাকায় জিএইচএফ পরিচালিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ইসরায়েলের সেনারাও তাদের ওপর গুলি চালিয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ত্রাণ সংগ্রহের জন্য নির্ধারিত ওই এলাকায় ছয়জন নিহত ও ৯৯ জন আহত হয়েছেন।

গত ২৬ মে গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন ত্রাণ বিতরণ শুরুর পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই তাদের খোলা চারটি ত্রাণকেন্দ্রের কোনো একটির কাছে এমন প্রাণঘাতী ঘটনা ঘটছে। এ প্রেক্ষাপটে গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে একটি গ্রুপকে সক্রিয় করা নিয়ে কাজ করছে ইসরায়েল। তাদের হাতে অস্ত্রও তুলে দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি বিষয়টি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী জানান, জিএইচএফ কেন্দ্র থেকে খাদ্য সহায়তার বাক্স নিতে তিনি যখন ওই এলাকায় পৌঁছান, তখন বেসামরিক পোশাক পরা ও মুখ ঢাকা একদল যুবককে দেখতে পান। হিশাম সাঈদ নামের ওই প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম, তারা হয়তো ফিলিস্তিনি যুবক, যারা এ প্রক্রিয়ায় সাহায্য করছে। কিন্তু হঠাৎই তারা আমাদের দিকে গুলি চালাতে শুরু করে।’

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ত্রাণকেন্দ্র ঘিরে ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালিয়ে অন্তত ১২৭ জনকে হত্যা করা হয়েছে। আহত হয়েছেন ১ হাজার ২৮৭ জন। জাতিসংঘ এ জিএইচএফকে প্রত্যাখ্যান করেছে।

গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৫৫ হাজার ছুঁইছুঁই। আহত হয়েছেন ১ লাখ ২৭ হাজার জন। হতাহত অধিকাংশই নারী ও শিশু। গতকাল মঙ্গলবার এক দিনে প্রাণ গেছে আরও ৫৪ জনের। আহত হন ৩০৫ জন।

মিত্র দেশের নিষেধাজ্ঞায় নেতানিয়াহুর দুই মন্ত্রী

পশ্চিম তীরে সহিংসতার জন্য নেতানিয়াহুর দুই মন্ত্রীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইসরায়েলের মিত্র যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও নরওয়ে। দেশগুলো জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলের অতি ডানপন্থিমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ ও ইতামার বেনগভিরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। দুই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উস্কে দিতে ভূমিকা রেখেছেন। এক যৌথ বিবৃতিতে দেশগুলো এ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে।

পাঁচ দেশের ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সার বলেছেন, তাদের এই পদক্ষেপ ইসরায়েলের জন্য অপমানজনক। আমরাও পাল্টা ব্যবস্থা নেব। 

গ্রেটাকে গাজায় প্রবেশ করতে দিল না ইসরায়েল

ত্রাণবাহী জাহাজ নিয়ে আসা সুইডিশ অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গকে গাজায় প্রবেশ করতে দেয়নি ইসরায়েল। সিএনএন জানায়, গতকাল মঙ্গলবার তাঁকে আটক করে ফ্রান্সগামী একটি ফ্লাইটে ফেরত পাঠিয়েছে ইসরায়েল। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে গ্রেটাকে বিষণ্ন মনে উড়োজাহাজে বসে থাকতে দেখা যায়। ২২ বছরের গ্রেটা দীর্ঘদিন বিমানযাত্রা এড়িয়ে চলেন। গত সপ্তাহে গ্রেটাসহ ১২ অধিকারকর্মী ত্রাণবাহী জাহাজ নিয়ে গাজা অভিমুখী যাত্রা করেন। আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) পরিচালিত জাহাজটিকে গত রোববার মধ্যরাতে গাজা থেকে ১৮৫ কিলোমিটার দূরে আন্তর্জাতিক জলসীমায় আটকে দেয় ইসরায়েলের নৌবাহিনী। আটক করে জাহাজে থাকা অধিকারকর্মীদেরও। পরে গ্রেটাকে ইসরায়েল থেকে বিতাড়িত করতে তেল আবিব বিমানবন্দরে নেওয়া হয়। এদিকে দ্য হিল অনলাইন জানায়, গ্রেটা থুনবার্গের সমালোচনা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, ‘গ্রেটা একজন অদ্ভুত ও রাগী তরুণী। আমার মতে, তাঁর রাগ নিয়ন্ত্রণ শেখা উচিত। সেটাই তাঁর জন্য আমার প্রধান পরামর্শ।’

ট্রাম্প-নেতানিয়াহু ফোনালাপ

ইরানের সঙ্গে পরমাণু ইস্যুতে চলমান আলোচনার মধ্যেই নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রয়টার্স জানায়, সোমবার ইরানসহ নানা ইস্যুতে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়। দু’জনের মধ্যে ৪০ মিনিটের আলাপ হয়। গাজায় ইসরায়েলের চলমান গণহত্যা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা, জানা যায়নি।