Image description
 

যুক্তরাষ্ট্রে এক চীনা বিজ্ঞানী ও তাঁর সঙ্গীর বিরুদ্ধে বিপজ্জনক এক ছত্রাক চোরাচালানের অভিযোগ গঠনের পর, বিশিষ্ট চীন বিশ্লেষক গর্ডন জি চ্যাং হুঁশিয়ারি দিয়েছেন—“আমরা যদি সতর্ক না হই, তাহলে কোভিডের চেয়েও ভয়াবহ কিছু সামনে আসতে পারে।”

চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ জানায়, ৩৩ বছর বয়সী ইউনচিং জিয়ান ও তাঁর ৩৪ বছর বয়সী প্রেমিক জুনইয়ং লিউ মিলে ‘ফুসারিয়াম গ্রামিনেয়ারাম’ (Fusarium graminearum) নামক একটি ছত্রাক যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসার ষড়যন্ত্র করেছিলেন।

এই ছত্রাক গম, ধান, ভুট্টা ও যবের মতো ফসল ধ্বংসকারী ‘হেড ব্লাইট’ রোগের কারণ, এবং এটি মানব ও পশুর জন্য বিষাক্ত। এটি বমি, যকৃতের ক্ষতি ও প্রজনন সমস্যা ঘটাতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ছত্রাকটি ‘এগ্রোটেররিজম’ অর্থাৎ কৃষিভিত্তিক সন্ত্রাসবাদের একটি সম্ভাব্য অস্ত্র হিসেবে বিবেচিত। এটি প্রতিবছর বিলিয়ন ডলার ক্ষতির কারণ হয়।

চ্যাংয়ের বক্তব্য: “এটা যুদ্ধ ঘোষণার শামিল”

এই ঘটনাকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার মতো বলেই মনে করছেন গর্ডন চ্যাং। ফক্স নিউজকে তিনি বলেন, “আমরা যদি এখনই চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন না করি, তবে ভবিষ্যতে কোভিডের চেয়েও ভয়াবহ কিছু ঘটতে পারে।”

তিনি আরও দাবি করেন, ২০১৯ সালে চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ‘পিপলস ডেইলি’ একটি সম্পাদকীয়তে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘জনগণের যুদ্ধ’-এর ডাক দেয়। “চীন সরকার মনে করে, তারা আমাদের সঙ্গে যুদ্ধাবস্থায় আছে। সেই অনুযায়ী গোটা সমাজকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করছে,”—বলেছেন চ্যাং।

“এই দম্পতিকে গুয়ান্তানামোতে পাঠানো উচিত”

চ্যাং বলেন, “এই দম্পতির কাজ সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আক্রমণ। এ ধরনের কাজের জন্য তাদের গুয়ান্তানামো বে-তে পাঠানো উচিত। আমরা শক্তিশালী হলেও, নিজেদের রক্ষার জন্য যেভাবে প্রয়োজন, সেইভাবে প্রস্তুত নই।”

বীজ পাঠানো ও আগ্রাসনের অভিযোগ

চ্যাং এর দাবি, ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্যে ‘চীন থেকে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে’ বীজ পাঠানো হয়। এবং ২০২৪ সালেও চীনা অনলাইন বিক্রেতা ‘টিমু’ মার্কিন নাগরিকদের কাছে বীজ পাঠায়। “এগুলো হয়তো যুক্তরাষ্ট্রে আক্রমণাত্মক উদ্ভিদ প্রজাতি ছড়িয়ে কৃষি ব্যবস্থায় ধ্বংসের চেষ্টা,”—বলেন চ্যাং।

“সম্পর্ক ছিন্ন করাই একমাত্র উপায়”

চ্যাং আরও বলেন, “কেউ কেউ হয়তো ভাবেন, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা অত্যন্ত কঠোর সিদ্ধান্ত। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে—আমরা ওভারহেলমড হয়ে পড়ছি। শুধু কোভিড নয়, ফেন্টানিল, এমনকি আরও ভয়ংকর কিছু আমাদের সামনে আসতে পারে।”

কে এই গর্ডন চ্যাং?

গর্ডন জি চ্যাং একজন চীন–যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক বিশ্লেষক। তিনি ‘চায়না ইজ গোয়িং টু ওয়ার’-সহ একাধিক বইয়ের লেখক। চ্যাং দুই দশকেরও বেশি সময় চীন ও হংকংয়ে আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি আগে Paul Weiss ও Baker & McKenzie নামক আন্তর্জাতিক আইন প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন।

এই ঘটনা শুধু দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, বরং এটি এক জিওপলিটিকাল সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে—বিশেষত যখন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বৈরি সম্পর্ক ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে।

 

সূত্র: এনডিটিভি।