Image description
 

দেশে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা করছে সরকার। এরই মধ্যে নীতিমালার একটি খসড়া প্রস্তুত করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।

 

বৈদ্যুতিক মোটরের মাধ্যমে চলে এমন অটোরিকশা, অটোটেম্পো, মোটরক্যাব রিকশা, থ্রি-হুইল ভ্যান, ধীরগতিসম্পন্ন থ্রি-হুইল যানবাহনকে বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে; যেগুলোর শক্তির উৎস গাড়িতে থাকা রিচার্জেবল ব্যাটারি। আর এসব বাহন তৈরি করতে হবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) অনুমোদিত ‘স্পেসিফিকেশন’ অনুযায়ী। একই সঙ্গে রাজধানীসহ অন্যান্য সিটি করপোরেশন এবং ‘‌এ’ ক্যাটাগরির পৌরসভায় এসব থ্রি-হুইলার চালাতে সংস্থাটির নিবন্ধন নিতে হবে। চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্সও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে নীতিমালায়।

মহাসড়কে বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার চলাচল নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস ‘‌বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার ব্যবস্থাপনা নীতিমালা, ২০২৫-এর অন্যতম উদ্দেশ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অন্য উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে থ্রি-হুইলার জাতীয় মোটরযানকে মহাসড়ক ব্যতীত নির্দিষ্ট এলাকায় চলাচলের জন্য নির্ধারিত সংখ্যাসীমার আওতায় নিবন্ধন দেয়া; নিবন্ধন ও ফিটনেস সনদের মাধ্যমে নির্দিষ্ট এলাকায় চলাচলের অনুমতি সাপেক্ষ সুশৃঙ্খল এবং নিরাপদ সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার চালকদের প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্সের আওতায় আনা।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, মহাসড়ক ব্যতীত অন্যান্য নির্দিষ্ট এলাকা বা রুটে বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার চলতে পারবে। অর্থাৎ এ জাতীয় মোটরযান মহাসড়কে চলতে পারবে না। এছাড়া কোনো ব্যক্তি নিজের নামে সর্বোচ্চ তিনটি এবং কোনো কোম্পানি সর্বোচ্চ ২৫টি থ্রি-হুইলার ক্রয় ও নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে পারবে।

 

নিবন্ধনের ক্ষেত্রে খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট এলাকায় যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটি নির্ধারিত সিলিং (সংখ্যাসীমা) অনুযায়ী বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার নিবন্ধন দেবে কর্তৃপক্ষ। সিলিং নির্ধারণের ক্ষেত্রে জনসংখ্যা, সড়ক নেটওয়ার্ক ও অর্থনৈতিক গুরুত্বের বিষয় বিবেচনা করতে হবে। আর সিলিং পুনর্নির্ধারণের ক্ষেত্রে অবশ্যই নিতে হবে সরকারের অনুমোদন। সেই সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগকে সিলিং সম্পর্কে অবহিত করতে হবে।

 

খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী, বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলারের ভাড়া নির্ধারণ করে দেবে বিআরটিএ। ‘‌কন্ট্যাক্ট ক্যারিজ’ হিসেবে চালক স্বল্প দূরত্বসহ নির্ধারিত এলাকার মধ্যে যেকোনো রুটে যেতে বাধ্য থাকবে এবং কোনোরকম অস্বীকৃতি জানাতে পারবে না। বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলারের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কালও নির্ধারণ করে দেবে সরকার। আর আয়ুষ্কাল শেষে ‘‌স্ক্র্যাপ নীতিমালা’ অনুযায়ী সেটি প্রত্যাহার করে নিতে হবে।

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার একটি মডেল তৈরি করছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। এ উদ্যোগটি নিয়ে বুয়েটের সঙ্গে কাজ করছেন বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিলের (বিইপিআরসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওয়াহিদ হোসেন। ব্যাটারিচালিত রিকশার নিরাপদ বিকল্প বাহনের বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বুয়েট তিন ধরনের কাজ করছে। এর একটা হলো বর্তমানে দেশে যেসব ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা রয়েছে, যেগুলোকে আমরা ইজিবাইক বলি সেগুলোর একটি মডিফায়েড ভার্সন বুয়েট তৈরি করেছে। এটির ব্রেকিং ব্যবস্থা উন্নত। চালক ও যাত্রীর জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। একটি ইজিবাইকের মানোন্নয়ন করতে কম-বেশি ৩০ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। আরেকটা হলো তিন চাকার একটি পূর্ণাঙ্গ গাড়ির প্রটোটাইপ বুয়েট তৈরি করেছে। এ বাহনটি সম্পূর্ণ নিরাপদ। প্রতিযোগিতামূলক দামের মধ্যেই এ বাহনটি উৎপাদন সম্ভব। এর বাইরে বুয়েট ফোর হুইলারেরও একটি প্রটোটাইপ তৈরি করেছে। এটা মূলত তৈরি করা হয়েছে গ্রামাঞ্চলের জন্য।’

নীতিমালা অনুযায়ী, বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলারের নির্দিষ্ট স্থানে খোদাইকৃত বডি বা চেসিস নম্বর উল্লেখ করতে হবে। এ জাতীয় বাহনে দেশে তৈরি মোটরসহ যেসব যন্ত্রাংশ ব্যবহৃত হবে সেগুলো বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) অনুমোদিত হতে হবে। সেই সঙ্গে অনুমোদিত মডেল বা বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলারের যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারককে হতে হবে বিআরটিএর তালিকাভুক্ত এবং বাংলাদেশ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) থেকে নিবন্ধনপ্রাপ্ত। বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার ও যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রেও বিএসটিআই অনুমোদিত মান অনুসরণ করতে হবে। প্রতিকূল আবহাওয়া থেকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য প্রতিটি বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলারে ওয়াটার টাইট হুড থাকতে হবে, প্রয়োজনে সেটি ওঠানো বা নামানোর ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে।

বিদ্যুচ্চালিত থ্রি-হুইলার ব্যবস্থাপনা নীতিমালাটি প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটেও গুরুত্ব পেয়েছে। বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘‌বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার ব্যবস্থাপনা নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে।’

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের প্রস্তুতকৃত খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী, বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার চালানোর জন্য চালককে বিআরটিএ থেকে বাধ্যতামূলকভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স গ্রহণ করতে হবে। সেই সঙ্গে সড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে এসব যানবাহনের সর্বোচ্চ গতি হবে ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ঢাকার জন্য উপযোগী, নিরাপদ ও যাত্রীবান্ধব বিদ্যুচ্চালিত অটোরিকশা আমরা অনুমোদন দেয়ার পরিকল্পনা করছি। এরই মধ্যে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছি। পর্যায়ক্রমে ঢাকা থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা উঠিয়ে দিয়ে এ ধরনের নিরাপদ বাহন প্রবর্তন যেন করা যায়, সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’