Image description

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গন বর্তমানে এক অভূতপূর্ব সংঘাতের সাক্ষী। দেশটির সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এবং বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্কের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন এক রূপকথার মতো জুটি ভেঙে ভয়ঙ্কর সংঘাতে রূপ নিয়েছে। এই লড়াই শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে ওয়াশিংটনের বাজেট থেকে শুরু করে মহাকাশ গবেষণা পর্যন্ত। 

অনলাইন বিবিসিতে এভাবেই লিখেছেন সাংবাদিক অ্যান্থোনি জার্চার। গত সপ্তাহে শুরু হওয়া মতপার্থক্য বৃহস্পতিবার এসে পূর্ণমাত্রায় সংঘর্ষে পরিণত হয়। ট্রাম্প প্রকাশ্যে হুমকি দেন মাস্কের পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর থেকে সরকারি চুক্তি ও ভর্তুকি বাতিলের। তিনি বলেন, আমাদের বাজেট থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বাঁচানোর সবচেয়ে সহজ উপায় হলো ইলনের সরকারি চুক্তি ও ভর্তুকি বাতিল করা। এর ফলে টেসলার শেয়ার মূল্য একদিনেই শতকরা ১৪ ভাগ কমে যায়। তবে মাস্কও চুপ থাকেননি। তিনি পাল্টা ‘হামলায়’ ট্রাম্পের অভিশংসনের দাবি জানান, এবং ঘোষণা দেন, স্পেসএক্স-এর ড্রাগন মহাকাশযানের অপারেশন দ্রুত বন্ধ করে দেবেন-  যা বর্তমানে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে মার্কিন নভোচারী পরিবহণের অন্যতম প্রধান মাধ্যম।

ব্যক্তিগত সম্পর্ক থেকে রাজনৈতিক সংঘাতে
ট্রাম্প ও মাস্কের সম্পর্ক কয়েকদিন আগে পর্যন্তও ঘনিষ্ঠ ছিল। ট্রাম্প প্রশাসনে মাস্ক একটি বিশেষ পদ পেয়েছিলেন- ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি (ডজ) নামের একটি বিভাগের প্রধান হিসেবে। এই দপ্তরের অধীনে হাজার হাজার সরকারি কর্মচারী ছাঁটাই হয় এবং বেশ কয়েকটি সরকারি সংস্থা বিলুপ্ত হয়। তবে শুরু থেকেই বিশেষজ্ঞরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, এই দুই ব্যক্তিত্বের সংঘাত অবশ্যম্ভাবী। শেষ পর্যন্ত সেটাই বাস্তবে পরিণত হলো মাস্কের ১৩০ দিনের ‘বিশেষ সরকারি কর্মচারী’ পদ শেষ হওয়ার পর। বিদায়ী অনুষ্ঠানে ট্রাম্প মাস্ককে হোয়াইট হাউসের ‘সোনালী চাবি’ উপহার দিলেও, আজ সেই দরজা বন্ধ হয়ে গেছে বলেই মনে হচ্ছে।

মাস্কের পাল্টা আক্রমণ ও ইঙ্গিতপূর্ণ অভিযোগ
মাস্ক ট্রাম্পকে একের পর এক আক্রমণ করে চলেছেন। তিনি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জেফ্রি এপস্টেইনের গোপন নথিপত্রে নাম থাকার ইঙ্গিত দেন, যদিও এই অভিযোগের পক্ষে কোনও প্রমাণ দেননি। তাঁর এই মন্তব্য হোয়াইট হাউসকে যথেষ্ট অস্বস্তিতে ফেলেছে। ট্রাম্পের মুখপাত্র কেবল এটুকু বলেন, এটি একটি দুর্ভাগ্যজনক পর্ব। 

রাজনৈতিক মূল্য চুকাতে হতে পারে রিপাবলিকানদের
মাস্ক শুধু একজন প্রযুক্তি উদ্যোক্তাই নন, তিনি কোটি কোটি ডলারের মালিক এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটাতে সক্ষম ব্যক্তি। ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে তিনি রিপাবলিকান বিরোধী প্রার্থীদের আর্থিক সহায়তা দিতে পারেন বলে জল্পনা চলছে। ইতিমধ্যে রিপাবলিকান দলের অভ্যন্তরে বিভাজনের আভাস মিলছে।

ডেমোক্র্যাটদের প্রতিক্রিয়া: নীরব দর্শক
ডেমোক্র্যাট শিবিরে মাস্ককে নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। একদিকে তিনি অতীতে ডেমোক্র্যাটদের অনুদান দিয়েছেন, অন্যদিকে সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্প প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। এখনো তাকে পুরোপুরি গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয় ডেমোক্র্যাটরা, তবে অনেকেই মনে করছেন, শত্রুর শত্রু বন্ধুই বটে।

ট্রাম্প এখনো ক্ষমতায় আছেন এবং আরও সাড়ে তিন বছর দায়িত্বে থাকার সুযোগ আছে। মাস্ক, নিজ মুখেই বলেছেন, আমি থাকবো চল্লিশ বছর। এই দীর্ঘ সময়ের ক্ষমতার খেলা রাজনীতির মঞ্চে নতুন নতুন নাটক সৃষ্টি করবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
এ মুহূর্তে ওয়াশিংটনে সবাই এক বাক্যে স্বীকার করছেন-এ লড়াই থামার নয়, বরং আরও ভয়ঙ্কর রূপ নিতে চলেছে।