
২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে পশ্চিমবঙ্গে ফের উত্তপ্ত রাজনৈতিক আবহ। একদিকে সদ্য উত্তরবঙ্গ সফর করে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, আর তার রেশ কাটতে না কাটতেই দক্ষিণবঙ্গের মাটিতে পা রাখলেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
দুই শীর্ষ নেতার এই পরপর সফর ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই নতুন করে চাঙ্গা রাজ্য বিজেপি।
রোববার (১ জুন) কলকাতার এক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বিজেপির সাংগঠনিক সভায় অমিত শাহ সরাসরি আক্রমণ করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তার ভাষ্য অনুযায়ী, মমতা ‘বাংলাদেশিদের জন্য বাংলার সীমান্ত খুলে দিয়েছেন’।
অমিত শাহের অভিযোগ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস সরকার অবৈধ অনুপ্রবেশকে প্রশ্রয় দিচ্ছে, কারণ তারা এটি ‘রাজনৈতিক স্বার্থে’ ব্যবহার করছে। তিনি বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কখনোই অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে পারবেন না। শুধু বিজেপিই তা করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, তৃণমূল সরকার ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফকে প্রয়োজনীয় জমি দেয়নি, ফলে অনুপ্রবেশ ঠেকানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তৃণমূল চায় অনুপ্রবেশ অব্যাহত থাকুক, কারণ ওরা ভোটের রাজনীতি করে। বিএসএফকে জমি না দেওয়ার পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক অভিসন্ধি।
এই সভা থেকেই অমিত শাহ আরও একধাপ এগিয়ে বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুসলিম ভোটব্যাংক তুষ্ট করতেই ‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরোধিতা করেছেন।
পাকিস্তানের চালানো অপারেশন নিয়ে অমিত শাহ বলেন, মমতা দিদি অপারেশন সিঁদুরের বিরোধিতা করে দেশের মা-বোনদের অপমান করেছেন। ২০২৬ সালের নির্বাচনে বাংলার মানুষ তাকে এর যোগ্য জবাব দেবেন।
প্রসঙ্গত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর আগেও অভিযোগ করেছেন যে, বিজেপি ‘অপারেশন সিঁদুর’ ইস্যুকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে এবং হিন্দু-নারী সেন্টিমেন্টকে উসকে দিচ্ছে ভোটের স্বার্থে।
অপরদিকে অমিত শাহের এই মন্তব্য রাজ্য রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এখন দেখার বিষয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা তৃণমূল কংগ্রেস কীভাবে এই অভিযোগের জবাব দেয়, আর সে সঙ্গে আগামী দিনে সীমান্ত ইস্যু নির্বাচনের কতটা বড় হাতিয়ার হয়ে ওঠে বিজেপির জন্য।
এর আগে অমিত শাহ শনিবার (৩১ মে) রাত ১১টার দিকে কলকাতায় এসে পৌঁছান বিশেষ বিমানে। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, প্রাক্তন সংসদ সদস্য লকেট চ্যাটার্জিসহ একাধিক নেতা।
বিজেপি নেত্রী লকেট চ্যাটার্জির মতে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর দেখে রাজ্যের সাধারণ মানুষের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পর অমিত শাহের সফর রাজনীতিতে বড় বার্তা দিচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের এই সফর যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
প্রধানমন্ত্রী মোদির উত্তরবঙ্গ সফরের পর অমিত শাহের দক্ষিণবঙ্গ সফর, আবার সঙ্গে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশ, সীমান্ত ইস্যু এবং মুসলিম ভোটব্যাংক নিয়ে সরাসরি আক্রমণ- সব মিলিয়ে এই সফর একপ্রকার নির্বাচনি যুদ্ধের ঘোষণা বলেই মনে করছেন অনেকেই।
সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া