Image description

সামরিক অস্ত্র ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরেই চীনের উপর নির্ভরশীল বাংলাদেশ। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তুরস্কসহ পশ্চিমা কয়েকটি দেশ এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে। নতুন এক কৌশলগত পদক্ষেপে এবার তুরস্কের সহযোগিতায় চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জে প্রতিরক্ষা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)।

সম্প্রতি ভারতের নর্থইস্ট নিউজ এক চাঞ্চল্যকর দাবি জানায়, এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন সম্প্রতি পাঁচ দিনের তুরস্ক সফরে গেছেন এবং তুর্কি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

এই সফরের সময় তিনি তুরস্কের কিরিককালে শহরের সরকারি মালিকানাধীন প্রতিরক্ষা কারখানা এমকেই (MKE) পরিদর্শন করেন। জানা গেছে, তিনি ও তার সফরসঙ্গীরা কারখানাটি, পরীক্ষা কেন্দ্র এবং গোপন অস্ত্র ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিশেষ ব্রিফিং-এ অংশ নেন। সফরের মূল লক্ষ্য ছিল যৌথ উৎপাদন, প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে কৌশলগত প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদার করা।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, বাংলাদেশ এর আগেও এমকেই থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করেছে। ২০২৪ সালে এমকেই-এর তৈরি BORAN 105mm হাউইটজার এর ১৮টি ইউনিট কিনেছিল বাংলাদেশ। ভবিষ্যতে এ সংখ্যা ২০০তে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া TRG-230 ও TRG-300 রকেট সিস্টেম কেনার কথাও চিন্তা করছে বাংলাদেশ।

এছাড়া তুরস্কের তৈরি অটোকার সাঁজোয়া যান, TULPAR হালকা ট্যাংক কেনার বিষয়েও আলোচনা চলছে। উল্লেখ্য, ২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে সামরিক খাতে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠতে শুরু করে। ওই বছরই বাংলাদেশ Bayraktar TB2 ড্রোনসহ ১৫ ধরনের সামরিক সরঞ্জাম তুরস্ক থেকে সংগ্রহ করে।

সর্বশেষ এমকেই-এর সঙ্গে হওয়া আলোচনা বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা শিল্পে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন, ২০১০-এর আওতায় তুরস্কের সঙ্গে যৌথ প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। এর মাধ্যমে তুর্কি বিনিয়োগকারীদের করছাড়, শুল্ক মওকুফ সহ নানা সুবিধা দেওয়া হবে।

এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জে প্রতিরক্ষা শিল্প কেন্দ্র গড়ে তোলার সম্ভাব্যতা যাচাই করছে বিডা। কারণ এই অঞ্চল দুটি সমুদ্রবন্দর বা নৌপথের সঙ্গে সংযুক্ত, যা অস্ত্র উৎপাদন ও পরিবহনের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। শীঘ্রই এমকেই-এর পক্ষ থেকে একটি কারিগরি দল বাংলাদেশে এসে এসব অঞ্চলে সমীক্ষা চালাবে।

এছাড়া, বাংলাদেশ ও তুরস্ক একটি সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরের পরিকল্পনা করছে। এর মাধ্যমে ‘ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠনের চিন্তাভাবনাও রয়েছে। এই গ্রুপ ভবিষ্যতে দুই দেশের প্রতিরক্ষা খাতের যৌথ উদ্যোগে নীতিনির্ধারণ ও পরিকল্পনায় ভূমিকা রাখবে।

তুরস্কের সহযোগিতায় যদি সত্যিই সামরিক সরঞ্জাম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা যায়, তাহলে প্রতি বছর মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করতে পারবে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনী তুরস্ক থেকে বিভিন্ন ধরনের আর্টিলারি ও মর্টার সহ সামরিক সরঞ্জাম কিনেছে। এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তুরস্কের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ার উপযুক্ত সুযোগ তৈরি হয়েছে।