
ভোর চারটায় হঠাৎই সাইরেনের হুংকারে কেঁপে উঠল ইসরাইলের রাজধানী তেলআবিব। ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের ছোড়া একটি ভয়ঙ্কর ব্যালিস্টিক মিসাইল লক্ষ্য করে আছড়ে পড়তে যাচ্ছিল ইসরাইলের প্রাণকেন্দ্রে। মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে চরম আতঙ্ক—ঘুম ভেঙে প্রায় ১০ লাখ মানুষ দৌড়ে আশ্রয় নেয় বাংকারে। তবে সম্ভাব্য ভয়াবহ এই ট্রাজেডি প্রতিহত করে ইসরাইলের শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’।
ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) দাবি করেছে, মিসাইলটি আকাশেই সফলভাবে ধ্বংস করা হয়েছে এবং কোনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে আতঙ্কের তীব্রতায় কেঁপে উঠেছে গোটা শহর।
এই হামলা চলতি সপ্তাহে হুথিদের চতুর্থ এবং পরপর দ্বিতীয় দিনের আক্রমণ। এর আগে বৃহস্পতিবারও তারা দুটি মিসাইল ছুড়ে, যেগুলোর লক্ষ্য ছিল বেন গুরিয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। সেগুলোও প্রতিহত করা হয়। তবে চলতি মাসের শুরুতে ছোড়া একটি মিসাইল আয়রন ডোম ভেদ করে বিমানবন্দরে আঘাত হানে, যেখানে ছয়জন আহত হন এবং বেশ কিছু আন্তর্জাতিক ফ্লাইট স্থগিত হয়।
এর প্রতিক্রিয়ায়, ইসরাইল ইয়েমেনের হুথি নিয়ন্ত্রিত সানা ও হোদাইদা বন্দরে ব্যাপক বিমান হামলা চালায়। ইয়েমেনি সূত্র জানায়, শুধু সানা বিমানবন্দরেই প্রায় ৫০ কোটি ডলারের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
কেন এই হামলা?
হুথি বিদ্রোহীরা ইরানের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরেই ইসরাইলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আসছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাস-ইসরাইল সংঘর্ষের এক মাস পর থেকেই হুথিরা আন্তর্জাতিক জাহাজ ও ইসরাইলকে লক্ষ্য করে হামলা শুরু করে। এখন পর্যন্ত তারা ছুড়েছে অন্তত ৩৮টি ব্যালিস্টিক মিসাইল ও ১০টির বেশি ড্রোন।
মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষক ড. এলিয়াহু বার্ডনের মতে, হুথিদের উদ্দেশ্য কেবল সামরিক ক্ষতি নয়, বরং মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করা। যেন ইসরাইলিরা দিনরাত আতঙ্কে থাকে, ঠিক যেমন গাজার মানুষ বোমা আতঙ্কে দিন কাটায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হুথিদের এই ধারাবাহিক হামলা কেবল ইয়েমেন নয়, বরং গোটা মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা কাঠামোর জন্য হুমকি। বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না কেউ কেউ।
এখন বড় প্রশ্ন—‘আয়রন ডোম’ আর কতদিন ধরে রাখতে পারবে ইসরাইলের নিরাপত্তার এই বলয়?