
ভারতের মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রী বিজয় শাহ সম্প্রতি পাক-ভারত উত্তেজনার মধ্যে এক নারী সেনা কর্মকর্তাকে নিয়ে আপত্তিকর ও সাম্প্রদায়িক মন্তব্য করেন। পরে এজন্য তিনি ক্ষমা প্রার্থনাও করেন। তবে তা খারিজ করে দিয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। একইসঙ্গে আদালত নির্দেশ দিয়েছে, তার বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি নতুন আইপিএস অফিসারদের দল গঠন করতে হবে। এ দলে একজন নারী অফিসার থাকা বাধ্যতামূলক এবং তদন্ত প্রতিবেদন আগামী ২৮ মে’র মধ্যে জমা দিতে হবে।
সোমবার এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছেন ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।প্রতিবেদন অনুযায়ী, এদিন আদালতে বিচারপতি সূর্য কান্ত মন্তব্য করেন, বিজয় শাহের (মন্ত্রী) ক্ষমা চাওয়া ‘সত্যিকারের অনুশোচনামূলক নয়’ এবং তিনি যেন কেবল আদালতের নির্দেশেই ক্ষমা চেয়েছেন- এমনটা বোঝাতে চাইছেন।
বিচারপতি সূর্য কান্তের ভাষায়, ‘এই ক্ষমা কিসের জন্য? এটা কেমন ধরনের ক্ষমা? ক্ষমার তো একটা মানে থাকে। অনেক সময় লোকেরা নরম ভাষা ব্যবহার করে মামলা থেকে বাঁচতে চায়, আবার কেউ কুমিরের অশ্রু ঝরায়। আপনার ক্ষমা কোন ধরনের? আপনি এমন একটা চিত্র তুলে ধরতে চাইছেন, যেন আদালত আপনাকে ক্ষমা চাইতে বলেছে। আপনি আপনার কুৎসিত মন্তব্যের জন্য এখনো পর্যন্ত কেন আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাননি?’
তিনি আরও বলেন, এই ইস্যুটি সশস্ত্র বাহিনীর জন্য আবেগঘন হওয়ায় একজন মন্ত্রীর আরও সংবেদনশীল হওয়া উচিত ছিল।
সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত তিন সদস্যের বিশেষ তদন্ত দল (এসআইটি) গঠন করতে হবে।
ভারতের সর্বোচ্চ আদালত বিজয় শাহকে আপাতত গ্রেফতার থেকে রেহাই দিলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছে, ‘তাকে পরিণতি ভোগ করতেই হবে’।
একইসঙ্গে আদালত মধ্যপ্রদেশ সরকারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে বলেছে, ‘আমরা খুব কাছ থেকে নজর রাখব। এটা আপনাদের জন্য অগ্নিপরীক্ষা’।
বিজয় শাহের বিতর্কিত বক্তব্য
সম্প্রতি পাক-ভারত উত্তেজনার মধ্যে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর অংশ হিসেবে ভারত সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে আক্রমণ চালায়। ওই সময় বিজয় শাহ এক জনসভায় বলেন, ‘পাকিস্তানে যারা থাকেন, সেই সম্প্রদায়ের এক নারীকে পাঠানো হয়েছে দেশকে নগ্ন করতে’।
এমনকি তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্নেল সোফিয়া কুরেশিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘তোমরা যারা বিধবা বোন হয়ে বসে আছো, এবার তোমাদের সম্প্রদায়ের এক বোন তোমাদের নগ্ন করে ছাড়বে’।
তিনি আরও বলেন, ‘মোদিজি দেখিয়ে দিয়েছেন যে, তোমাদের সম্প্রদায়ের কন্যাদের পাকিস্তানে পাঠিয়ে প্রতিশোধ নেওয়া যায়’।
যদিও তিনি এ সময় কারো নাম উল্লেখ করেননি। তবুও সবাই ধরে নেয় যে তিনি কর্নেল সোফিয়া কুরেশিকে উদ্দেশ্য করেই এসব বলেছিলেন।
কে এই কর্নেল সোফিয়া কুরেশি?
কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ছিলেন ‘অপারেশন সিঁদুর’ চলকালীন ভারতীয় সেনাবাহিনীর অন্যতম মুখপাত্র।
তাকে নিয়ে অমন মন্তব্য ভারতজুড়ে রাজনৈতিক বিতর্ক, বিরোধীদের নিন্দা, সাবেক সেনা সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভ এবং এমনকি বিজেপির ভেতরেও সমালোচনার ঝড় তোলে।
আদালতের পর্যবেক্ষণ
এদিকে মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট এ বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মন্তব্য করে, ‘দেশের একমাত্র অবিচল প্রতিষ্ঠান, যা সততা, শৃঙ্খলা, আত্মত্যাগ ও নির্ভীকতার প্রতীক— সেই সশস্ত্র বাহিনীকে বিজয় শাহ নর্দমার ভাষায় আক্রমণ করেছেন’।
সেই সঙ্গে বিজয় শাহের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দেয় আদালত।
বিজয় শাহের প্রতিক্রিয়া ও ক্ষমা
এ প্রেক্ষিতে বিজয় শাহ প্রথমে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেন, তার মন্তব্যকে ‘প্রসঙ্গ থেকে ছেঁটে’ দেখানো হচ্ছে।
পরে তিনি বলেন, ‘বোন সোফিয়া জাত-ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠে ভারতের গৌরব বৃদ্ধি করেছেন... আমরা স্বপ্নেও তাকে অসম্মান করার কথা ভাবতে পারি না। তবুও যদি আমার কথায় সমাজ বা ধর্ম আহত হয়ে থাকে, আমি দশবার ক্ষমা চাইতে রাজি আছি’।
তবে সুপ্রিম কোর্ট মনে করে, তার এই বক্তব্য যথেষ্ট নয়।