যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আপিল আদালতের একটি প্যানেল নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের জন্য দায়ী থাকার জুরি রায় বহাল রেখেছেন।
স্থানীয় সময় সোমবার ফেডারেল আপিল আদালতের বিজ্ঞ বিচারকগণ এ রায় দেন। একই সঙ্গে ই. জিন ক্যারলকে ৫ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও নির্দেশ দেন।
যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় সার্কিট আপিল আদালতের তিন বিচারকের প্যানেল এ রায় দেন। ট্রাম্প তার অভিযোগ করা ভুলগুলোর কারণে নতুন বিচার চাওয়ার যথেষ্ট প্রমাণ দিতে পারেননি।
প্যানেল তাদের অস্বাক্ষরিত মতামতে লিখেছেন ‘বিচারের অপব্যবহার পর্যালোচনার ভিত্তিতে, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে ট্রাম্প দেখাতে পারেননি যে জেলা আদালত কোনো ক্ষেত্রে ভুল করেছে।’
গত বছর নিউইয়র্কের একটি জুরি রায় দেন, ট্রাম্প ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি ম্যানহাটনের একটি ডিপার্টমেন্ট স্টোরের পোশাকের রুমে ক্যারলকে যৌন নির্যাতন করেছিলেন এবং তার অভিযোগ অস্বীকার করে তার মানহানি করেছেন।
একটি পৃথক মামলায় একটি জুরি ট্রাম্পকে ক্যারলকে ৮৩.৩ মিলিয়ন ডলার মানহানি ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। যদিও ট্রাম্প সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করছেন। গত সোমবারের সিদ্ধান্ত তার প্রতিরক্ষার জন্য একটি বড় আঘাত, কারণ এটি আগের যৌন নির্যাতনের রায়ের ওপর ভিত্তি করে তৈরি।
জিন ক্যারলের আইনজীবী রবি ক্যাপলান এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমি আজকের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট। আমরা দ্বিতীয় সার্কিট আদালতের পক্ষগুলোর যুক্তি সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করার জন্য কৃতজ্ঞ।’
ট্রাম্প জুরির রায় চ্যালেঞ্জ করে যেতে প্রতিজ্ঞ। তিনি এখন পুরো আপিল আদালতের কাছে সোমবারের রায় পর্যালোচনার জন্য অনুরোধ করতে পারেন বা বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে যেতে পারেন।
ট্রাম্পের মুখপাত্র স্টিভেন চিউং এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমেরিকান জনগণ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পুনর্নির্বাচিত করেছে এবং তারা আমাদের বিচার ব্যবস্থার রাজনৈতিক অস্ত্রায়ন বন্ধ করার দাবি জানায়। ডেমোক্র্যাট-অর্থায়িত ক্যারল প্রতারণাসহ সব তদন্ত দ্রুত খারিজ হওয়া উচিত।’
ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, জুরি ভুল সাক্ষ্য শুনেছে এবং তাকে ক্যারলকে নির্দিষ্ট প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে প্যানেল এই সব যুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে, দুটি নারীর সাক্ষ্য এবং ‘অ্যাকসেস হলিউড’ টেপ যেখানে ট্রাম্প নারীদের সম্মতি ছাড়াই তাদের স্পর্শ করার বিষয়ে মন্তব্য করেছেন। এটার উপযুক্ত প্রমাণ ছিল।
নারী জেসিকা লিডস সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, ১৯৭৮ বা ১৯৭৯ সালে একটি বিমানে ট্রাম্প তাকে চুমু খেয়েছিলেন এবং স্পর্শ করেছিলেন। আরেক নারী, নাতাশা স্টয়নফ, জানান যে, একটি ম্যাগাজিন প্রতিবেদনের সময় ট্রাম্প তাকে দেওয়ালে ঠেলে চুমু খেয়েছিলেন।
প্যানেল উল্লেখ করেছে, এই সাক্ষ্য ও টেপ থেকে জুরি যুক্তিসঙ্গতভাবে অনুমান করতে পারে যে ট্রাম্প ‘অন্যান্য নারীদের সঙ্গে একই ধরনের আচরণ করেছেন একটি প্যাটার্ন যা আকস্মিক, অসম্মতিপূর্ণ এবং শারীরিকভাবে আক্রমণাত্মক।’
জিন ক্যারলের মামলাগুলি ট্রাম্পের অসংখ্য আইনি সমস্যার মধ্যে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে এবং তার উচ্চ-প্রোফাইল দেওয়ানি বিচারগুলোর একটি রূপ নিয়েছে।
ট্রাম্প বারবার ক্যারলের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং তার চেহারা নিয়ে আক্রমণ করেছেন। তবে এই মামলাগুলো ট্রাম্পের আইনি লড়াইয়ে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।