Image description
ফরিদপুরে ব্যবসায়ীর ঝুলন্ত লাশ

ফরিদপুরে নিজ বাড়ির শয়নকক্ষ থেকে এক তরুণ ঠিকাদার ও ব্যবসায়ীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। লাশ উদ্ধার হওয়া এই ব্যবসায়ীর নাম নুরুজ্জামান বুলবুল (৪৮)। মৃত নুরুজ্জামান সদর উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়নের কৈজুরী গ্রামের বাসিন্দা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী মরহুম মোজাফফর হোসেন রাঙা মিয়ার ছোট ছেলে।

রাঙা মিয়া চার বছর আগে মারা যান। এরপর গত বছর বুলবুলের মা ও মারা যান। নিহত এই ব্যবসায়ীর স্ত্রী ও ৩ মেয়ে রয়েছে। এই মেয়ের মধ্যে মেজ মেয়ের দ্বিতীয় স্বামী নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক ফাহিম আহমেদ।

সোমবার (১২ মে) বিকেল ৪টার দিকে সদর উপজেলার কৈজুরি ইউনিয়নের কৈজুরি গ্রামে পৈত্রিক বাসভবনের ২য় তলার একটি কক্ষ থেকে তার লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায় পুলিশ। স্ত্রী ও মেয়েদের নিয়ে কৈজুরিতে পৈত্রিক বাসভবনে বসবাস করতেন।

লাশ উদ্ধারের সময় ওই কক্ষ থেকে মৃত্যুর আগে লিখে যাওয়া একাধিক সুইসাইড নোট তথা চিরকুট উদ্ধার করা হয়।  সুইসাইড নোটের একটিতে লেখা ছিলো- ‘বিল্লাল ভাই আমাকে আর বাঁচতে দিলেন না।’ বিগত আওয়ামী লীগের সরকারের আমলে জেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক বিল্লাল হোসেনের সাথে তিনি ঠিকাদারি ব্যবসা করতেন। মুন্সিবাজার বাইপাস মোড়ের পাশে বুলবুল ও বিল্লালের যৌথ মালিকানায় কেনা জমির ওপরে চারতলা একটি বিল্ডিং তৈরি করা হয়। ব্যবসায়ীক লেনদেনের বাইরেও বিল্লালের সাথে তার বড়ভাই-ছোটভাই সুলভ সম্পর্ক ছিলো। ধারণা করা হচ্ছে- এই বিল্লালের সাথে ব্যবসায়ীক বিরোধ ও পারিবারিক ঝামেলার কারণে বুলবুল আত্মহত্যা করেছেন।

স্থানীয়রা জানান, নুরুজ্জামান বুলবুল রোববার দুপুরের দিকে তাদের তিনতলা বাসভবনের দোতলার ওই কক্ষটিতে প্রবেশ করেন। এরপর তার আর কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় সোমবার বিকেলে পরিবারের লোকজন ঘরের দরজা ভেঙে তার ঝুলন্ত লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়।

জানা গেছে, নিহত নুরুজ্জামান বুলবুলের স্ত্রী ও ৩ মেয়ে রয়েছে। তার মেঝো মেয়ের সাথে প্রথম স্বামীর ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পরে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম আহমেদের সাথে বিয়ে হয়। পারিবারিক নানা বিষয় নিয়ে বুলবুলের সাথে তার পরিবারের সদস্যদের ঝামেলা চলছিলো। এর আগে তিনি ঝগড়া এড়াতে মেয়েদের নামে কিছু সম্পত্তি লিখে দেন। বুলবুলের লাশ উদ্ধারের সময় উদ্ধার হওয়া একটি চিরকুটে বুলবুল লিখেছে, ‘আল্লাহ পাক যদি আমার মৃত্যু দেয় তাহলে আমার মেয়েরা যেনো আমার মরামুখ না দেখে আর কবর যেনো আমার মায়ের কবরের পাশে হয়, এ বাড়িতে নয়।’ গত বছর নুরুজ্জামান বুলবুলের মায়ের মৃত্যুর পর তাকে কৈজুরি ইউনিয়নের মামুদপুর গোরস্থানে দাফন করা হয়।

জানা যায়, সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ভাই বহুল আলোচিত দুই হাজার কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের মামলার আসামি সাবেক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবরের মুরগি খামারের ম্যানেজার ছিলেন বিল্লাল হোসেন। ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে মোশাররফ হোসেনের পতনের পর থেকে বিল্লাল হোসেন আত্মগোপনে চলে যান। তিনি মানি লন্ডারিংয়ের মামলায় দীর্ঘদিন কারাগারেও ছিলেন। পরে জামিনে বেরিয়ে আসেন।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান জানান, খবর পেয়ে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এটি আত্মহত্যা নাকি অন্যকিছু তা এখনই বলা যাচ্ছে না। ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে তার মৃত্যুর কারণ।

নিহত বুলবুলের কক্ষ থেকে উদ্ধার হওয়া ওই সুইসাইড নোটের বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা বিল্লাল হোসেনের বক্তব্য জানা যায়নি। এবিষয়ে বুলবুলের পরিবারের কেউও কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।