
কাতারের রাজপরিবারের কাছ থেকে একটি বিলাসবহুল বোয়িং ৭৪৭-৮০০ উড়োজাহাজ উপহার হিসেবে পাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
আজ রোববার মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস এই তথ্য জানিয়েছে।
এ বিষয়টির সম্পর্কে জানেন এমন এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি নিশ্চিত করেছে, এই উপহার গ্রহণ করতে সম্মতি দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
উড়োজাহাজটিকে প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত ভ্রমণের কাজে ব্যবহৃত 'এয়ারফোর্স ওয়ানের' পদমর্যাদায় উন্নীত করা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উন্নয়ন কাজও যথানিয়মে শেষ করা হবে।
অনৈতিক উপহার?

সব কিছু ঠিক মতো চললে এটাই হবে মার্কিন সরকারের বিদেশি কোনো রাষ্ট্রের কাছ থেকে পাওয়া সবচেয়ে দামি উপহার।
পরবর্তীতে, দ্বিতীয় মেয়াদ শেষে প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ছেড়ে যাওয়ার পর এই উড়োজাহাজটি ট্রাম্পের 'প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরিতে' যোগ করা হবে। যার ফলে তিনি একজন বেসরকারি নাগরিক হিসেবেও এর ব্যবহার অব্যাহত রাখতে পারবেন।
নিউইয়র্ক টাইমসে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এই পরিকল্পনাটিকে অনৈতিক ভাবার যথেষ্ঠ কারণ আছে। এ ক্ষেত্রে মূলত দুইটি বিষয় কাজ করছে। প্রথমত, এটা খুবই মূল্যবান আর দ্বিতীয়ত, প্রেসিডেন্টের পদ ছাড়ার পরও ট্রাম্প এটা ব্যবহার করতে পারবেন। একটি বাণিজ্যিক বোয়িং ৭৪৭-৮ মডেলের উড়োজাহাজের দাম প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় চার হাজার ৮৮০ কোটি টাকা)।
ট্রাম্পের নিজস্ব ব্যক্তিগত উড়োজাহাজের নাম 'ট্রাম্প ফোর্স ওয়ান'। এটা একটি পুরনো ৭৫৭ বোয়িং জেট। ২০১১ সালে এই উড়োজাহাজটি কেনেন ট্রাম্প।
শিগগির আসছে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা

এবিসি নিউজ প্রথম এই পরিকল্পনার বিষয়টি জানায়।
আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা প্রত্যাশা করছেন।
ইতোমধ্যে কাতারসহ তিন দেশে সফর করতে যাচ্ছেন ট্রাম্প। এই সফরকে তার দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম বর্ধিত বিদেশ সফরের তকমা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে দুই বার বোয়িংকে সরকারি ক্রয় আদেশ দেওয়ার পরও সময়মতো নতুন 'এয়ার ফোর্স ওয়ান' সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
ফলশ্রুতিতে, কাতারের কাছ থেকে উড়োজাহাজ উপহার নিয়েই ট্রাম্প তার এই চাহিদা পূরণ করবেন। এমনটাই ভাবছেন বিশ্লেষকরা।
ফেব্রুয়ারিতে পাম বিচ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাতারের মালিকানাধীন ৭৪৭ উড়োজাহাজটি অবতরণ করার পর সেটা ঘুরে দেখে এসেছিলেন ট্রাম্প। সে সময় নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নতুন এয়ার ফোর্স ওয়ান হিসেবে ১০ বছরেরও কম আগের এই মডেলটি বিবেচনায় নিয়েছে সরকার।
উন্নয়ন কাজে লেগে যেতে পারে কয়েক বছর

কাতারের কাছ থেকে উড়োজাহাজটি হাতে পাওয়ার পর এর প্রয়োজনীয় কারিগরি উন্নয়নের কাজ করবে টেক্সাস ভিত্তিক সামরিক ঠিকাদার এলথ্রিহ্যারিস।
নিউইয়র্ক টাইমসকে ওই কর্মকর্তা জানান, উড়োজাহাজ অধিগ্রহণের খুঁটিনাটি চূড়ান্ত হলে এলথ্রিহ্যারিস তাদের কাজ শুরু করবে এবং এ বছরের শেষ নাগাদ সেটি এয়ার ফোর্স ওয়ানের সমপর্যায়ের সামরিক সক্ষমতায় উন্নীত হবে। এরপর থেকেই ট্রাম্প তা ব্যবহার করতে পারবেন।
এ বিষয়ে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা রোববার জানান, বিমানবাহিনী এখনো কাতারের ৭৪৭ উড়োজাহাজের নিরাপত্তা, কারিগরি ও সামরিক উন্নয়নের কাজ পায়নি।
মার্কিন সরকার ওই উড়োজাহাজের আইনসংগত মালিকানা পাওয়ার আগে এ ধরণের উন্নয়ন কাজ শুরু করা সম্ভব নয় বলে মত দেন তিনি।
তিনি জানান, উড়োজাহাজ হাতে পেলেও এর প্রয়োজনীয় উন্নয়নে দীর্ঘ সময় লেগে যাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা বলেন, 'মাস নয়, এটা কয়েক বছরের কাজ'।
নেই আইনি বাধা
ওই কর্মকর্তা জানান, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগানও উপহার হিসেবে উড়োজাহাজ পেয়েছিলেন। তবে প্রেসিডেন্ট পদ ছেড়ে যাওয়ার পর তিনি আর সেই উড়োজাহাজ ব্যবহার করেননি। সেটি প্রদর্শনীর জন্য প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরির যাদুঘরে রাখা হয়।
অপর এক সূত্র জানিয়েছে, কাতারের রাজপরিবার তাৎক্ষণিকভাবে জেট বিমানটিকে ট্রাম্পের লাইব্রেরিতে অনুদান হিসেবে দিতে আগ্রহী ছিল। পরবর্তীতে ট্রাম্প চাইলে সরকারি কাজেও এটা ব্যবহার করতে পারবেন—এমন প্রস্তাবও দেয় তারা। তবে সরকারি আইনজীবীরা জানান, এতে সাংবিধানিক আইন লঙ্ঘনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
তবে উপহার হিসেবে গ্রহণ করে পরবর্তীতে লাইব্রেরিতে যোগ করার বিষয়টিতে সবুজ সংকেত দিয়েছেন সরকারি আইনজীবীরা। তাদের মতে, এতে মার্কিন সংবিধান লঙ্ঘনের কোনো সম্ভাবনা নেই। প্রচলিত আইন অনুযায়ী, প্রতিরক্ষা দপ্তর এই উপহার গ্রহণ করতে পারে।