Image description

জার্মানির প্রধান বিরোধী দলকে ‘উগ্রপন্থী’ সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা। এই সিদ্ধান্তের ফলে দলটির ওপর গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর পথ প্রশস্ত হলো। ফলে এমন পদক্ষেপকে দলটিকে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করার একটি প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন বলা হয়েছে, জার্মানির গোয়েন্দা সংস্থা বুন্ডেসাম্ট ফ্যুর ভারফাসুংসশুৎজ (বিএফভি) দেশটির প্রধান বিরোধী দল অলটারনেটিভ ফ্যুর ডয়চল্যান্ড (এএফডি)–কে ‘উগ্রপন্থী’ সংগঠন সাব্যস্ত করেছে।

গোয়েন্দা সংস্থার ১ হাজার ১০০ পৃষ্ঠার একটি বিশেষজ্ঞ প্রতিবেদনে এএফডিকে বর্ণবাদী এবং মুসলিম-বিদ্বেষী সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই ঘোষণার ফলে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো দলের সদস্যদের ওপর নজরদারি, তথ্য সংগ্রহ এবং আড়িপাতার মতো পদক্ষেপ নিতে পারবে। এর পাশাপাশি, দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবিও নতুন করে উঠেছে।

বিএফভি এক বিবৃতিতে জানায়, আমাদের মূল মূল্যায়ন হলো, এএফডি জনগণের ধারণা যেভাবে জাতিগত এবং বংশগতভাবে সংজ্ঞায়িত করে, তা জার্মানির জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশকে অবজ্ঞা করা হয় এবং এটি মানবিক মর্যাদার লঙ্ঘন। সংস্থাটি আরও অভিযোগ করেছে, এএফডি ‘অযৌক্তিক ভীতি এবং শত্রুতাকে উসকে দিচ্ছে।’

জার্মানির নাৎসি এবং কমিউনিস্ট শাসনের অভিজ্ঞতার কারণে, অন্যান্য ইউরোপীয় গোয়েন্দা সংস্থার তুলনায় বিএফভি–এর আইনি সীমাবদ্ধতা বেশি। তাই রাজনৈতিক দলের ওপর নজরদারির জন্য তাদের এই ধরনের শ্রেণিকরণ প্রয়োজন।

জার্মানিতে উগ্রপন্থী হিসেবে চিহ্নিত অন্যান্য সংগঠনের মধ্যে রয়েছে নব্য–নাৎসি গোষ্ঠী ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), ইসলামিক স্টেট–এর মতো ইসলামি গোষ্ঠী এবং জার্মানির মার্কসবাদী–লেনিনবাদী পার্টি–এর মতো চরম বামপন্থী দল।

এএফডি এই ঘোষণাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং গণতন্ত্রের ওপর আঘাত হিসেবে নিন্দা করেছে। দলের অন্যতম নেতা অ্যালিস ওয়েডেল এবং টিনো ক্রুপাল্লা এক বিবৃতিতে বলেন, গণতন্ত্রকে বিপন্নকারী এই মানহানিকর আক্রমণের বিরুদ্ধে এএফডি আইনি পদক্ষেপ নেবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এএফডিকে উগ্রপন্থী হিসেবে চিহ্নিত করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার জন্য জার্মানির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি এটিকে ‘ছদ্মবেশী জুলুম’ বলে অভিহিত করেছেন। গত ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আগে এএফডিকে সমর্থনকারী বিলিয়নিয়ার উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক দলটিকে নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে সতর্ক করে বলেছেন, এটি হতে পারে ‘গণতন্ত্রের ওপর চরম আঘাত’।

গত ফেব্রুয়ারিতে, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স মিউনিখে ইউরোপীয় ইউনিয়নে নিরাপত্তা সম্মেলনে বক্তব্য দিয়ে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন। ওই সময় তিনি সম্মেলনে উপস্থিতদের হতবাক করে দিয়ে বলেন, ইউরোপের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি রাশিয়া বা চীন নয়, বরং ‘ভেতরের শত্রু’। মধ্যে উগ্রপন্থী হিসেবে বিবেচিত রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রান্তিক করে ফেলার মতো পদক্ষেপকেও ইউরোপীয় মূল্যবোধের শত্রু বলে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি সম্মেলন আয়োজক দেশ জার্মানিকে এ ধরনের দলের প্রতি সরকারের আপত্তির অবসান ঘটানোর পরামর্শ দেন।

এখন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে ‘উগ্রপন্থী’ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার ফলে এএফডির সদস্যপদ সংগ্রহ করা কঠিন হতে পারে। যেখানে বর্তমানে বিভিন্ন জনমত জরিপে দলটির অবস্থান শীর্ষে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে জার্মানির সবচেয়ে সফল চরম ডানপন্থী দল এটি। জার্মানির সংসদ এখন এএফডির জন্য সরকারি তহবিল সীমিত বা বন্ধ করার চেষ্টা করতে পারে, তবে এর জন্য দলটি যে জার্মান গণতন্ত্রকে দুর্বল বা উৎখাত করতে চায়–এর সপক্ষে স্পষ্ট প্রমাণ লাগবে।

এদিকে, জার্মানির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি অনুসারে, ‘উগ্রপন্থী’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ একটি সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে যারা সরকারি কর্মচারী আছেন, তাঁদের কর্মকাণ্ড ও ভূমিকা যাচাই–বাছাইয়ের ভিত্তিতে বরখাস্ত করা হতে পারে।

এই সিদ্ধান্তটি এমন এক সময়ে এল যখন রক্ষণশীল নেতা ফ্রেডরিখ মের্জ জার্মানির নতুন চ্যান্সেলর হিসেবে শপথ নিতে চলেছেন এবং নতুন বুন্দেসটাগে (জার্মানির ফেডারেল পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ) এএফডির বিষয়টি কীভাবে মোকাবিলা করা যায় তা নিয়ে দলের মধ্যে উত্তপ্ত বিতর্ক চলছে।

গত ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনে এএফডি রেকর্ড সংখ্যক আসন জিতেছে। ফলে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান হওয়ার দাবিদার তারা। কিন্তু এখন গোয়েন্দা সংস্থার এই প্রতিবেদনটিকে সংসদীয় কমিটিগুলোর নেতৃত্বে এএফডির প্রতিনিধি না রাখার একটি কারণ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

এদিকে জার্মানির অন্যতম প্রভাবশালী দল সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি এসপিডি নেতা লার্স ক্লিংবিল কর্তৃপক্ষকে এএফডি নিষিদ্ধ করার বিষয়ে পর্যালোচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে দলের বিদায়ী চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ সতর্কতার সঙ্গে মূল্যায়ন করার আহ্বান জানিয়েছেন এবং তাড়াহুড়ো করে নিষেধাজ্ঞা জারির বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন।