
গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযান থামার কোনো লক্ষণ নেই। প্রতিদিনই নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের। দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে অবরোধ, মানবিক বিপর্যয়ের মুখে গোটা উপত্যকা। তবে একদিকে যুদ্ধ জারি রাখলেও, ইসরায়েলি জনগণেরই একাংশ এখন ক্লান্ত ও ক্ষুব্ধ।
যুদ্ধ থামানোর দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দিন দিন তীব্র হচ্ছে। সম্প্রতি ইসরায়েলের তিন বাহিনীর হাজার হাজার রিজার্ভ সেনা একটি খোলা চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের দাবি, গাজা যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ করে হামাসের হাতে বন্দি থাকা ৫৯ জন ইসরায়েলিকে ফিরিয়ে আনা হোক।
১৮ মাস ধরে চলমান এই যুদ্ধে শুরুতে অধিকাংশ ইসরায়েলিই সরকারের পদক্ষেপকে সমর্থন করলেও, দীর্ঘ সময়েও জিম্মিদের উদ্ধারে ব্যর্থ হওয়ায় বিরক্তি ও হতাশা বাড়ছে নাগরিকদের মধ্যে। গত ১৯ জানুয়ারি একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছিল। অনেকেই ভেবেছিলেন এ যাত্রায় অবসান ঘটবে বন্দিদের বন্দিদশার। কিন্তু ১৮ মার্চ সেই চুক্তি ভেঙে ফের হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী।
এরপর থেকেই যুদ্ধ বিরোধী আন্দোলন জোরদার হয়। মোসাদের সাবেক প্রধান ড্যানি ইয়াতম বলেন, ‘নেতানিয়াহুর অগ্রাধিকার যেন নিজ রাজনৈতিক স্বার্থ, বন্দিদের জীবন নয়। আমি রাজনৈতিক কারণে নয়, বরং জাতীয় উদ্বেগ থেকেই এই প্রতিবাদ করছি।’
এপ্রিলে প্রথমবার বিমান বাহিনীর প্রায় ১ হাজার রিজার্ভ সদস্য ও অবসরপ্রাপ্ত সেনারা এক খোলা চিঠি প্রকাশ করেন। তাতে তারা বলেন, যুদ্ধ অব্যাহত থাকায় কোনো লক্ষ্যে পৌঁছানো যাচ্ছে না, বরং বন্দিদের মৃত্যু ডেকে আনা হচ্ছে। এরপর থেকে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন শাখার আরও ১২ হাজারের বেশি সদস্য ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী মূলত রিজার্ভ সদস্যদের উপর নির্ভরশীল। তবে এখন সেই রিজার্ভ ডিউটির অংশগ্রহণ কমে এসেছে ৫০-৬০ শতাংশে, যা এক ভয়াবহ সংকেত। বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৯৮২ সালের লেবানন যুদ্ধের পর এমন পরিস্থিতি আর দেখা যায়নি।
এক পদাতিক রিজার্ভ সদস্য ইয়াভ বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম ভালো কিছু করছি কিন্তু এখন আর তা মনে করি না। আমরা হামাসকে হারাতে পারি, কিন্তু বিষয়টা হামাসকে হারানোর নয়। এটা আমাদের দেশ হারানোর প্রশ্ন।’
বামপন্থী ইসরায়েলি পত্রিকা ‘হারেৎজ’ এ অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল আমিরাম লেভিন লিখেছেন, ‘যুদ্ধাপরাধে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি ও সেনাবাহিনীর নৈতিক ভিত্তি ধ্বংস হওয়ার ঝুঁকি আমাদের আর চুপ থাকতে দিচ্ছে না।’
নেতানিয়াহু অবশ্য এই আন্দোলনকে ‘প্রচারণা নির্ভর, মিথ্যা এবং বিচ্ছিন্ন কিছু অরাজক অবসরপ্রাপ্তদের কাজ’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তবে জরিপ বলছে, এখন অধিকাংশ ইসরায়েলিই মনে করেন, জিম্মিদের মুক্ত করাই হওয়া উচিত সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার।
সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=u3ASHaIytyc