Image description
 

টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের নাজির উদ্দিনকে প্যাকেজিং কোম্পানিতে চাকরির কথা বলে নেওয়া হয় রাশিয়ায়। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর পাঠানো হয় সামরিক প্রশিক্ষণে। ১৪ দিন প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর পাঠানো হয় ইউক্রেন যুদ্ধে। যুদ্ধে যোগ দেওয়ার পর দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে নাজিরের সঙ্গে যোগাযোগ করেত পারেনি পরিবার। এতে দেশে চিন্তায় রয়েছে তারা পরিবার। নাওয়া-খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে তার স্ত্রী। শিশু সন্তান চেয়ে আছে বাবার অপেক্ষায়।

নাজির উদ্দিনের বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার কুরমুশী গ্রামে। ওই গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক ফয়েজ উদ্দিনের একমাত্র সন্তান তিনি।

পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, ঢাকার একটি জনশক্তি রপ্তানিকারক কোম্পানির মাধ্যমে গতবছরের ১৫ ডিসেম্বর নাজির উদ্দিন রাশিয়ার উদ্দেশে রওনা হন। দুবাই হয়ে রাশিয়া পৌঁছান তিনি। তারপর একটি ক্যাম্পে কয়েকদিন রাখা হয়। কিছুদিন পর সেখান থেকে বিমানে আরেক জায়গায় নেওয়া হয়। ওই জায়গায় আরও অনেকের সঙ্গে ১৪ দিনের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে ইউক্রেন সীমান্তে নেওয়া হয় তাদের।

সর্বশেষ গত ১৬ এপ্রিল সকালে নাজির উদ্দিন ফোনে কান্না করে বাবা ও স্ত্রীকে জানান, তাদের ইউক্রেনের সম্মুখ সমরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেদিনের পর থেকে বাড়ির সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই নাজির উদ্দিনের।

পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, এর আগে ২০১৭ সালে নাজির ইরাক গিয়েছিলেন। তিন বছর সেখানে চাকরি করে দেশে ফিরে আসেন। নিজ এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু ব্যবসায় সফল হননি। তাই আবার বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত একটি জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগ হয়। ওই প্রতিষ্ঠানের মামুন নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে রাশিয়া যাওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। ১২ লাখ ২০ হাজার টাকা নেয় প্রতিষ্ঠানটি।

নাজিরের বাবা ফয়েজ উদ্দিন ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “আমার ছেলে প্যাকেজিং কোম্পানিতে চাকরির আশা নিয়ে রাশিয়া গেছে। তাকে কেন যুদ্ধে পাঠানো হলো। তাকে যারা চাকরি দেয়ার মিথ্যা কথা বলে রাশিয়া নিয়ে যুদ্ধে পাঠিয়েছে, তাদের বিচার চাই।”

তিনি তার ছেলেকে ফিরিয়ে আনায় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকার ও রাশিয়ান দূতাবাদের প্রতি দাবি জানান।

নাজির উদ্দিনের স্ত্রী কুলসুম বেগম বলেন, “পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি নাজির। রাশিয়া যাওয়ার পর তিনি যখন যুদ্ধের প্রশিক্ষণে পাঠানোর কথা জানতে পারেন, তখন থেকে প্রতিদিন টেলিফোন করে কান্নাকাটি করতেন। ১৬ এপ্রিলের পর থেকে তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। তিনি বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন, সেটিও নিশ্চিত নই আমরা।”

তিনি আরও বলেন, “আমার একমাত্র মেয়ে বয়স মাত্র সাড়ে তিন বছর। সেও প্রতিদিন বাবার খবরের আশায় মোবাইল ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে। সরকার প্রধানের কাছে আমার দাবি, আমার স্বামীকে যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হোক।”

এ বিষেয়ে জানতে ঘাটাইল উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আবু সাইদকে ফোন করা হলেও তিনি রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ত থাকায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।

উল্লেখ্য, এপ্রিলের মাঝামাঝি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ায় হয়ে অংশ নিয়ে নিহত হয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার আকরাম হোসেন নামে এক যুবক।

তিনি চাকরির আশায় দালালের মাধ্যমে প্রায় আট মাস আগে রাশিয়ায় যান। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তার গত ১৩ এপ্রিল সর্বশেষ কথা হয়। গত ১৯ এপ্রিল তার মৃত্যুর খবর আসে।

ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের (সিআইডি) মানবপাচার সেলের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকাভিত্তিক সংস্থা ড্রিম হোম ট্রাভেল গত দুই বছরে প্রায় ২০ জন বাংলাদেশিকে রাশিয়ায় পাচার করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।