
অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ট্রাম্পের তড়িঘড়ি ও প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে নেওয়া অর্থনৈতিক পদক্ষেপগুলোর পেছনে মূল উদ্দেশ্য হলো আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে ডলারের আধিপত্য বজায় রাখা, আর চীনের সঙ্গে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা। মার্কিন রিপাবলিকান পার্টি ও পুঁজিপতিদের সমর্থনেই এসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
এ নিয়ে ইরানের এক্সপিডিয়েন্সি কাউন্সিলের সদস্য মোহসেন রেজায়ির লেখা একটি নিবন্ধের সারাংশ যুগান্তর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
ইরানী বার্তা সংস্থা মেহেরে প্রকাশিত এই নিবন্ধে তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ট্রাম্পের অস্বাভাবিক আচরণ ও অর্থনৈতিক নীতির বিশ্লেষণ করেছেন।
মোহসেন রেজায়ির মতে, ইরানের অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, ট্রাম্পের বক্তব্য ও পরিকল্পনাগুলো শুধুই তার ব্যবসায়িক মানসিকতা থেকে উৎসারিত। যদিও ট্রাম্প ও ধনকুবের ইলন মাস্ক নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষার দিকেও নজর দিচ্ছেন। তবুও পর্দার অন্তরালে বাস্তবতা আগামী কয়েক মাসে আরও পরিষ্কার হয়ে উঠবে।
বাস্তবতা হলো—রিপাবলিকান ও মার্কিন পুঁজিবাদীদের সমর্থনে নেওয়া ট্রাম্পের এই অস্বাভাবিক ও তড়িঘড়ি কর্মকাণ্ডগুলোর পেছনে রয়েছে আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে ডলারের শক্তি ধরে রাখার চেষ্টা এবং চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা।
অনুমান করা হচ্ছে— ডলার যদি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রধান মুদ্রা হিসেবে তার অবস্থান হারায়, তাহলে আগামী ১০ বছরের মধ্যে মার্কিন অর্থনীতি বিশ্বে তৃতীয় বা চতুর্থ স্থানে নেমে আসবে।
যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোর প্রাকৃতিক সম্পদ ও আর্থিক সম্পদ দখলের প্রচেষ্টা এবং কংগ্রেস ও হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভে রিপাবলিকানদের সমর্থন লাভসহ ট্রাম্প প্রশাসনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক হুমকির এই ধারা—সব কিছুই ট্রাম্পের ব্যক্তিগত স্বার্থ ছাড়িয়ে বৃহত্তর উদ্দেশ্যের ইঙ্গিত দেয়।
এছাড়াও ট্রাম্প প্রশাসন সম্প্রতি এক বিস্তৃত শুল্ক যুদ্ধ শুরু করেছে। যার লক্ষ্য— আমদানি কমিয়ে দেশীয় উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়ানো। যাতে লেনদেনের ভারসাম্য বজায় থাকে এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রাবাজারে অতিরিক্ত ডলার ছাড়ার চাপ কমে।
অর্থনৈতিক ঝুঁকি, মুক্ত বাণিজ্য থেকে সরে আসা এবং অনিশ্চিত ফলাফলের পরেও সিনেট ও কংগ্রেস ট্রাম্পের পদক্ষেপকে সমর্থন করেছে। এটি স্পষ্ট করে দেয় যে, যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ অর্থনীতি নিয়ে আমেরিকান রাজনীতিকরা কতটা উদ্বিগ্ন।

ট্রাম্প প্রশাসনের অস্বাভাবিক পদক্ষেপ, যেমন— ইউক্রেন, কানাডা ও গ্রিনল্যান্ডের প্রাকৃতিক সম্পদ অধিগ্রহণের চেষ্টা এবং পশ্চিম এশিয়ার তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো (যেমন- সৌদি আরব) থেকে পুঁজি আহরণের জন্য চাপ—মার্কিন ইতিহাসে খুব কমই দেখা গেছে।
এছাড়াও ইয়েমেনে হামলা, লেবাননে চাপ প্রয়োগ, সিরিয়ায় আরও সেনা ও সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েন এবং গাজার জনগণকে বাস্তুচ্যুত করার চেষ্টা—এই সবকিছু ট্রাম্পের অর্থনৈতিক পদক্ষেপের সঙ্গে মিলে গিয়ে গড়ে তুলছে সেই পুরোনো মার্কিন নীতি। যেখানে বলা হয়েছে-‘গুলি ছাড়ো, ডলার নাও’—যে নীতি বহুবার পুনরাবৃত্ত হয়েছে।
এখন প্রশ্ন হলো— ‘এই নীতিতে যুক্তরাষ্ট্র সফল হবে কি?’
মোদ্দাকথা হলো- সুদীর্ঘ ২০০ বছরের পুরোনো একটি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে তার মূলনীতি ও মূল্যবোধ থেকে বিচ্যুত করা সহজ কাজ নয়।
অন্যদিকে, বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির গভীর আন্তঃসম্পর্ক ও নির্ভরতা রয়েছে। যা একটা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে।