Image description

মতপ্রকাশের স্বাধীনতা একটি সুস্থ ও সভ্য সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। শুক্রবার এক গুরুত্বপূর্ণ রায়ে এমনটাই জানিয়ে দিল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। গুজরাটে কংগ্রেস সাংসদ ইমরান প্রতাপগড়ির বিরুদ্ধে একটি এফআইআর খারিজ করতে গিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত এই মন্তব্য করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করা একটি গানের মাধ্যমে ইমরান প্রতাপগড়ির বিরুদ্ধে ‘শত্রুতা ছড়ানোর’ অভিযোগ তুলে এফআইআর দায়ের করেছিল গুজরাট পুলিশ। 

কংগ্রেসের সংখ্যালঘু সেলের প্রধান প্রতাপগড়ির বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ধারা ১৯৬ (ধর্ম, জাতি ইত্যাদির ভিত্তিতে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে শত্রুতা ছড়ানো ) এবং ১৯৭ ধারা (জাতীয় সংহতির জন্য ক্ষতিকারক) সহ একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। আদালতে এই মামলার বিষয়ে কড়া মন্তব্য করে বিচারপতি অভয় ওকা ও বিচারপতি উজ্জল ভূঁইয়ার বেঞ্চ জানায়, পুলিশকে প্রথমে  এফআইআর দায়ের করার আগে লিখিত বা কথ্য শব্দের অর্থ বুঝতে হবে। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে যে, সংবিধানের ২১ নং অনুচ্ছেদে চিন্তা ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলা আছে, যা ছাড়া একটি মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন করা অসম্ভব। বিচারপতিরা রায় ঘোষণা করতে গিয়ে বলেন, সুস্থ গণতন্ত্রের জন্য মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অপরিহার্য। যদি বিপুল সংখ্যক ব্যক্তি অন্যের দ্বারা প্রকাশিত মতামতকে অপছন্দ করেন তবে একজন ব্যক্তির মতামত প্রকাশের অধিকারকেও সম্মান ও সুরক্ষিত করতে হবে। সাহিত্য, কবিতা, নাটক, শিল্পকলা ও ব্যঙ্গচিত্র সমাজকে সমৃদ্ধ করে। বিচারপতি অভয় ওকা রায় ঘোষণা করার সময় আরও বলেন, 'ভারতের সংবিধানের অধীনে নিশ্চিত করা মৌলিক অধিকারগুলোকে সমুন্নত রাখতে এবং প্রয়োগ করতে আদালত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কখনও কখনও আমরা, বিচারপতিরা, কথ্য বা লিখিত শব্দ পছন্দ নাও করতে পারেন, কিন্তু তবুও ১৯(১) অনুচ্ছেদের অধীনে মৌলিক অধিকারগুলোকে সমুন্নত রাখা আমাদের কর্তব্য। আমাদের  বিচারকদেরও সংবিধান ও নিজ নিজ আদর্শ সমুন্নত রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। 

বিচারপতি ওকার আরো পর্যবেক্ষণ, কথ্য বা লিখিত শব্দের প্রভাবকে এমন লোকদের মানদণ্ডের ভিত্তিতে বিচার করা যায় না যারা সর্বদা নিরাপত্তাহীনতা বোধ করেন বা যারা সর্বদা সমালোচনাকে তাদের ক্ষমতা বা অবস্থানের জন্য হুমকি হিসাবে দেখেন। এই রায় এমন এক সময়ে এসেছে, যখন দেশজুড়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে বিতর্ক চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে কমেডিয়ান কুণাল কামরার বিরুদ্ধেও মানহানির মামলা দায়ের করা হয়েছে, কারণ তিনি এক কমেডি অনুষ্ঠানের সময়ে শিবসেনা নেতা একনাথ শিন্ডেকে নাম না করে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের এই রায় মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রশ্নে এক গুরুত্বপূর্ণ নজির স্থাপন করলো।

সূত্র : টাইমস অফ ইন্ডিয়া