
নির্বাচনি প্রচারণায় দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার শিক্ষা অধিদপ্তর বন্ধের নির্বাহী আদেশে সই করেছেন। বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) ট্রাম্পের সইয়ের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিভাগ (ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ এডুকেশন) পুরোপুরি বন্ধের দিকে এগিয়ে গেল।
এই পদক্ষেপের মাধ্যমে শিক্ষা সংক্রান্ত ক্ষমতা অঙ্গরাজ্য ও স্থানীয় সরকারের হাতে ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে তার এই প্রচেষ্টা আদালতের চ্যালেঞ্জ এবং সাংবিধানিক বাধার মুখোমুখি হতে পারে।
ট্রাম্পের সইয়ের সময় শিশুদের একটি দল তার টেবিলের চারপাশে ছিল। স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আগে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি ফেডারেল ডিপার্টমেন্ট অফ এডুকেশনকে চিরতরে বন্ধ করার জন্য একটি নির্বাহী আদেশে সই করবো।’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষা বিভাগ নির্মূল করার বিষয়টা অদ্ভুত শোনাচ্ছে, তাই না? তবে ডেমোক্রেটরাসহ সবাই জানে এটি সঠিক।’
তবে ডেমোক্রেট এবং শিক্ষাবিষয়ক আইনজীবীরা দ্রুত নেয়া এই পদক্ষেপ সারাদেশের শিক্ষার্থীদের ক্ষতি করবে বলে মনে করছেন এবং এই পদক্ষেপের নিন্দা করেছেন।
প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের অধীনে ফেডারেল সরকারের বিভিন্ন শিক্ষা প্রকল্পকে একীভূত করার অংশ হিসেবে ১৯৭৯ সালে শিক্ষা বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
বিভাগটির আওতায় নেয়া পরীক্ষার স্কোর নিয়ে ট্রাম্পের বিদ্রুপ:
ট্রাম্প বরাবরই নিম্ন শিক্ষাগত অর্জনের জন্য বিভাগটিকে দায়ী করেছেন। বৃহস্পতিবারের অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা এই দেশে শিক্ষার জগতে ভালো করছি না।’
দ্য প্রোগ্রাম ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট অ্যাসেসমেন্ট (পিআইএসএ) জানিয়েছে, আমেরিকান শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় গড় নাম্বার পেয়েছে, যা মেক্সিকো এবং ব্রাজিলের মতো দেশগুলোর উপরে রয়েছে কিন্তু সিঙ্গাপুর, জাপান এবং কানাডার মতো দেশগুলোর থেকে নিচে রয়েছে। পরীক্ষার স্কোর ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত শুধুমাত্র গণিতে কমেছে। প্রতিষ্ঠানটি এজন্য কোভিড-১৯ মহামারিকে দায়ী করেছে।
সিএনবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিক্ষা বিভাগ বর্তমানে প্রায় ৪,৪০০ কর্মী নিয়ে গঠিত এবং এর বাৎসরিক বাজেট প্রায় ৭৯ বিলিয়ন ডলার। এটি স্কুলগুলোতে ফেডারেল তহবিল বিতরণ, ছাত্র ঋণ পরিচালনা এবং উচ্চশিক্ষার জন্য মানদণ্ড নির্ধারণের মতো গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম পরিচালনা করে, যা দেশের ৫ কোটিরও বেশি শিক্ষার্থীকে সেবা প্রদান করে।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) ট্রাম্প বলেছে, আমলাদের সংখ্যা আমরা অর্ধেক কমিয়ে দিয়েছি। তবে এ বিষয়টি নিয়ে বেশ সমালোচনা হচ্ছে। সমালোচকরা বলছেন, এই ছাঁটাইয়ের মাধ্যমে নির্দলীয় সিভিল সার্ভিস সদস্যদের লক্ষ্য করেছেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের কি ক্ষমতা আছে এই সিদ্ধান্ত নেয়ার?
নির্বাহী আদেশ সত্ত্বেও ট্রাম্প এককভাবে শিক্ষা বিভাগ বন্ধ করতে পারবেন না। শুধুমাত্র কংগ্রেস আনুষ্ঠানিকভাবে মন্ত্রিপরিষদ-স্তরের বিভাগ বন্ধ করতে পারে। কিন্তু ইতোমধ্যে, লুইসিয়ানার সিনেটর বিল ক্যাসিডির মতো রিপাবলিকানরা আইন প্রণয়ন শুরু করার জন্য এগিয়ে এসেছেন।
এ বিষয়ে ক্যাসিডি বলেন, ‘ট্রাম্পের সঙ্গে একমত যে শিক্ষা বিভাগ তার মিশনে ব্যর্থ হয়েছে। যেহেতু বিভাগটি শুধুমাত্র কংগ্রেসের অনুমোদনের সঙ্গে বন্ধ করা যেতে পারে, আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এটির জন্য আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির লক্ষ্যগুলিকে সমর্থন করব।’
তবে ধারণা করা হচ্ছে এমন সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ১০০ আসনের সিনেটে প্রয়োজনীয় ৬০ ভোটের থ্রেশহোল্ডে পৌঁছানোর জন্য যথেষ্ট সমর্থন তৈরি করবে না। আল জাজিরার সংবাদদাতা শিহাব রাতানসি বলেছেন, ‘রিপাবলিকানদের এমন সক্ষমতা নেই। রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে মাত্র ৫৩ আসনের।’
মার্কিন শিক্ষা বিভাগ মূলত সংখ্যালঘু, দরিদ্র শিশু, প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য শিক্ষায় সমান প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে কাজ করে। তবে এই বিভাগটি আনুষ্ঠানিক বন্ধ হবে কিনা সেই আদেশের বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়াতে পারে। ইতোমধ্যে, আমেরিকান ফেডারেশন অফ টিচার্স (এএফটি) এর মতো শিক্ষক ইউনিয়নগুলো আইনি লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
বিভাগের কার্যাবলীর এখন কি হবে?
বিশ্লেষকদের মতে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে শিক্ষা ব্যবস্থা ব্যাপক ক্ষতির মুখোমুখি হতে পারে। তবে ট্রাম্প এমন সমালোচনাকে উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘সকল প্রকল্প ও কার্যাবলীগুলো সম্পূর্ণরূপে সংরক্ষণ করা হবে এবং অন্যান্য বিভিন্ন সংস্থা এবং বিভাগে স্থানান্তর করে কাজ করা হবে।’
এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে মিশিগানের ডেমোক্র্যাটিক আইন প্রণেতা রাশিদা তালাইব ট্রাম্পের কঠোর সমালোচনা করেছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘শিক্ষা বিভাগ ছাড়া আমাদের অনেক শিশু পিছিয়ে থাকবে। তারা প্রয়োজনীয় এবং প্রাপ্য শিক্ষা গ্রহণ করতে অক্ষম হবে। বৃহস্পতিবারের পদক্ষেপটি স্পষ্টতই অসাংবিধানিক। আমি এটিকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করার অপেক্ষায় রয়েছি।’