
বৈশ্বিক নিরাপত্তা সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিশ্বের শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে একত্র হয়েছেন। এতে ফাইভ আইস জোটের তিন সদস্য—যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও নিউজিল্যান্ডের গোয়েন্দাপ্রধানেরাও উপস্থিত রয়েছেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্মেলনের পাশাপাশি তারা ‘রাইসিনা ডায়ালগ’-এ অংশ নেবেন। এটি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন আয়োজিত একটি বহুপক্ষীয় সম্মেলন।
ফাইভ আইস হলো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার সমন্বয়ে গঠিত একটি আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা জোট। এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের গোপন কোড ব্রেকিং পার্টনারশিপ থেকে বিকশিত হয়েছে।
এবারের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড, যুক্তরাজ্যের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জোনাথন পাওয়েল ও নিউজিল্যান্ডের গোয়েন্দাপ্রধান অ্যান্ড্রু হ্যাম্পটন উপস্থিত রয়েছেন। তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লাক্সনও বর্তমানে দিল্লিতে অবস্থান করছেন এবং তিনি এ বৈশ্বিক সম্মেলনের প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেবেন।
সম্মেলনের অংশ হিসেবে গোয়েন্দাপ্রধানেরা ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ সচিবালয়ে আয়োজিত উচ্চ পর্যায়ের কৌশলগত সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন। সেখানে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল তাঁদের স্বাগত জানান। বৈঠকে ভারতের বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর প্রধান রবি সিনহা ও গোয়েন্দা ব্যুরোর (আইবি) প্রধান তপন দেকা উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্বের নিরাপত্তায় ভারতের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের প্রমাণ এই আয়োজনকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে কানাডায় ‘খালিস্তানি’ বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর উত্থান, মৌলবাদ ও চরমপন্থার বিস্তার নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে এ সম্মেলন বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে।
এবারের সম্মেলনে বিশ্বের ১২০টির বেশি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান, গোয়েন্দাপ্রধান, সামরিক কর্মকর্তা, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, গবেষক, বিশ্লেষক ও কৌশলবিদেরা অংশ নিচ্ছেন।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৫ সালের রাইসিনা ডায়ালগের মূল প্রতিপাদ্য হবে ‘কালচক্র—মানুষ, শান্তি ও গ্রহ’। তিন দিনের এ সম্মেলনে ছয়টি মূল থিম নির্ধারণ করা হয়েছে:
* Politics Interrupted—পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বৈশ্বিক উত্তালতা;
* Resolving the Green Trilemma—জলবায়ু সংকট ও টেকসই সমাধানের উপায়;
* Digital Planet—ডিজিটাল যুগের এজেন্সি ও শূন্যতা;
* Militant Mercantilism—বাণিজ্য, সরবরাহ চেইন ও বিনিময় হার সংকট;
* The Tiger’s Tale—নতুন পরিকল্পনায় উন্নয়নের নতুন দিগন্ত;
* Investing in Peace—শান্তির জন্য বিনিয়োগ, প্রতিষ্ঠান ও নেতৃত্বের ভূমিকা।
২০২৫ সালে রাইসিনা ডায়ালগের দশম সংস্করণ অনুষ্ঠিত হবে, যা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও কৌশলগত আলোচনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি মঞ্চ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।