
বিশ্বব্যাপী এক ডজনেরও বেশি মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ ইসরাইলের বিরুদ্ধে গাজায় ‘অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত অনাহার’ নীতি পুনরায় চালু করার অভিযোগ এনেছেন। তারা ইসরাইলের যুদ্ধবিরতি প্রচেষ্টা ব্যাহত করা এবং গাজার জন্য মানবিক সহায়তা বন্ধ করার কঠোর সমালোচনা করেছেন।
সম্প্রতি এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের স্বাধীন বিশেষজ্ঞরা বলেন, ইসরাইলের এই পদক্ষেপ ‘আন্তর্জাতিক আইন ও শান্তির সব সম্ভাবনাকে স্পষ্টভাবে লঙ্ঘন করে’।
বিশেষজ্ঞদের ভাষায়, ‘আমরা ইসরাইলের এই সিদ্ধান্তে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন যে, তারা আবারও গাজায় যাবতীয় পণ্য ও সরবরাহ, এমনকি জীবনরক্ষাকারী মানবিক সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে’।
মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, ‘দখলদার শক্তি হিসেবে ইসরাইলের দায়িত্ব হচ্ছে গাজার জনগণের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য, চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত করা। কিন্তু ইসরাইল ইচ্ছাকৃতভাবে এই সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে আবারও সাহায্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে’।
যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ
জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞদের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এ ধরনের অবরোধ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও মানবিক আইন লঙ্ঘন করে এবং রোম স্ট্যাচিউট অনুসারে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়।
তারা বলেন, ‘তিন ধাপের যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে স্থায়ী শান্তি এবং বেআইনিভাবে আটক ফিলিস্তিনি ও ইসরাইলিদের মুক্তি নিশ্চিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে এটি আরও সহিংসতা এবং ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ধ্বংসযজ্ঞ বয়ে এনেছে। এটি সম্পূর্ণ অবৈধ এবং অমানবিক’।
অবাসযোগ্য পরিস্থিতি তৈরিই মূল লক্ষ্য
বিশেষজ্ঞদের মতে, গাজার ৮০ শতাংশ কৃষিজমি ও বেসামরিক অবকাঠামো ধ্বংসের পরও ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অবরোধ নীতি বজায় রেখেছে।
তারা বলেন, ‘ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডকে সম্পূর্ণভাবে বসবাসের অযোগ্য করে তোলাই ইসরাইলের পরিকল্পনার অংশ বলে মনে হচ্ছে। যা শুধু গাজাতেই নয়, পশ্চিম তীরেও বাস্তবায়িত হচ্ছে’।
‘গাজার জন্য নরকের দরজা খুলতে হবে’– ইসরাইলি মন্ত্রীদের উসকানি
জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞদের এই বিবৃতির আগে, ইসরাইলের কয়েকজন মন্ত্রী গাজায় মানবিক সহায়তা বন্ধের প্রশংসা করেন এবং বিদ্যুৎ ও পানির সরবরাহ সম্পূর্ণ কেটে দেওয়ার দাবি তোলেন।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় রোববার গাজায় মানবিক সহায়তা বন্ধের ঘোষণা দেয়।
ইসরাইলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ এই সিদ্ধান্তকে ‘সঠিক পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেন এবং বলেন, ‘পরবর্তী ধাপে গাজার বিদ্যুৎ ও পানি সম্পূর্ণ বন্ধ করা হবে এবং ভয়ংকর, দ্রুত ও প্রাণঘাতী হামলা চালানো হবে’।
অন্যদিকে সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গভির সোমবার গাজার বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি ত্রাণবাহী যানবাহন বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘গাজায় মানবিক সহায়তা বন্ধ রেখে হামাসকে অনাহারে রেখে দুর্বল করে দেওয়া উচিত। যাতে পরে সহজেই তাদের দমন করা যায়’।
ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম কেএএন ১১ জানিয়েছে, এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য হচ্ছে ‘গাজা ও হামাসের ওপর সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ করা’।
এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দ্রুত হস্তক্ষেপের আহ্বান জানান। তারা বলেছেন, ‘এই নির্মম পরিকল্পনা ও অবিরাম হামলা বন্ধ করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। না হলে সমগ্র বিশ্ব আইনহীনতা ও অবিচারের এই ঝড়ে আক্রান্ত হবে’। সূত্র: মিডলইস্ট আই