
সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার কয়েক মাস পর সিরিয়ায় সহিংসতা তীব্র আকার ধারণ করেছে। কারণ নতুন ইসলামপন্থী শাসকদের সমর্থনকারী বাহিনী আলাউইট নামে এক সংখ্যালঘু শ্রেণির বিরুদ্ধে কঠোর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। সিরিয়ার রক্তক্ষয়ী সংঘাতে ‘প্রতিশোধ-হত্যার’ শিকার হচ্ছে আলাউইটরা, যাদের বাস মূলত সিরিয়ার উপকূলবর্তী এলাকা লাটাকিয়া এবং টারটসে। গত কয়েক দিন ধরেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এই মানুষদের উপর লাগাতার হামলা চালানো হচ্ছে। অভিযোগ, পরিচয়পত্র খতিয়ে দেখে বেছে বেছে খুন করা হচ্ছে আলাউইটদের। যে সমস্ত গ্রামে আলাউইটদের বাস, সেখানে দেহ স্তূপাকার হয়ে পড়ে রয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
এমনকি স্থানীয়দের দেহ নিতেও বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। রবিবার চতুর্থ দিনে এক হাজার জনের বেশি লোক নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে যে, মাত্র দুই দিনের সংঘর্ষে এক হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে। তাদের মধ্যে ৭৪৫ জন বেসামরিক নাগরিক, ১২৫ জন সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এবং ১৪৮ জন আসাদের অনুগত যোদ্ধা ছিলেন।
অবজারভেটরির প্রধান রামি আবদুল রহমান বলেছেন যে, আসাদ বাহিনীর রাসায়নিক হামলার পর থেকে মৃত্যুর সংখ্যা সর্বোচ্চ রেকর্ড করা হয়েছে, যা দামাস্কাস শহরতলিতে ছিল প্রায় ১৪০০ জন। ৫০ বছর ধরে পশ্চিম এশিয়ার এই দেশটির ক্ষমতার রাশ ধরে রেখেছিল আসাদ পরিবার। ২০০০ সালে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হন বাশার আল আসাদ। কিন্তু জলঘোলা হতে শুরু করে ২০১১ সালে। আরব বসন্তের হাওয়ায় উত্তাল হয়ে ওঠে মরুদেশটি। আকাশ বাতাস কেঁপে ওঠে একনায়ক হঠাও, গণতন্ত্র ফেরাও স্লোগানে। শুরু হয়ে যায় গৃহযুদ্ধ। গত ডিসেম্বরেই আসাদ সরকারকে উৎখাত করে রাজধানী দামাস্কাস দখল করে বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) এবং তাদের সহযোগী ‘জইশ আল-ইজ্জা’র যৌথবাহিনী। তার পরেই সরকারি বাহিনীর সঙ্গে হাত মেলায় অন্য গোঁড়া গোষ্ঠীগুলি। আক্রমণ নেমে আসে তুলনায় উদার মনোভাবাপন্ন আলাউইটদের উপর। ক্ষমতাচ্যুত এবং দেশচ্যুত হওয়ার পর বন্ধুরাষ্ট্র রাশিয়ায় আশ্রয় নিয়েছেন আসাদ।
সিরিয়ার একাধিক সংবাদমাধ্যমের দাবি, আলাউইটদের অনেকেই সীমান্ত পেরিয়ে রাশিয়ায় পালিয়ে গিয়েছেন। দেশে নতুন গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন সিরিয়ার অনেকেই।সিরিয়ার মোট জনসংখ্যার মাত্র ১২ শতাংশ হলেন আলাউইটরা। কিন্তু ধর্মীয় সংখ্যালঘু এই গোষ্ঠীটি আসাদের আমলে বেশ ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠে। আসাদ নিজে এই গোষ্ঠীর সদস্য হওয়ায় তার আমলে প্রশাসন এবং সামরিক বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পদে ঠাঁই পেতে থাকেন আলাউইটরা। কিন্তু আসাদ পরিবারের আমলে পাঁচ দশক ধরে চলা এই ‘পক্ষপাত’ সহ্য হয়নি ইসলামপ্রধান দেশটির সুন্নি জনগোষ্ঠীর। কিন্তু আসাদের প্রভাবে পাল্টা কোনও পদক্ষেপও করতে পারেনি তারা। তাই আসাদের পতনের পর শুরু হয়েছে প্রতিশোধের পালা। এই ঘটনার পরেই উদ্বেগপ্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে ফ্রান্স। গণহত্যার উপযুক্ত তদন্ত করার জন্য তারা সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছে।
সূত্র: হিন্দুস্থান টাইমস