Image description

সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী রেকর্ডসংখ্যক আমেরিকান যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব চাইছেন। ২০২৪ সালে ৬১০০ জনেরও বেশি মার্কিন নাগরিক যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছিলেন, যা ২০২৩ থেকে ২৬% বৃদ্ধি পেয়েছে।২০০৪ সালে ডেটা সংগ্রহ শুরু হওয়ার পর থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক রেকর্ড করা হয়েছে। পরিসংখ্যানগুলোতে গত বছরের শেষ তিন মাসে আবেদনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখা গেছে। বিশেষ করে হোয়াইট হাউসে ডনাল্ড ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচনের সাথে সাথে যুক্তরাজ্যে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন ৪০% বৃদ্ধি পেয়েছে। এদের মধ্যে তিনজন দ্য গার্ডিয়ানকে জানিয়েছেন কেন তারা এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন।

‘স্বাস্থ্যসেবা, বন্দুকের সহিংসতা এবং রাজনীতি’, মাইকেল লার্ক, ৫৮

আমি পেনসিলভেনিয়ায় বড় হয়েছি। কিন্তু আমার জীবনের বেশিরভাগ সময় টেক্সাসে কেটেছে। আমার স্ত্রী এবং আমি সবসময় ভেবেছিলাম আমরা যুক্তরাষ্ট্রে থাকব। কিন্তু পরে আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে এখানে কিছু জিনিস কখনো পরিবর্তন হবে না। কোভিডের পরে যখন আমার স্ত্রীর স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয় তখন আমরা দেখতে শুরু করি যে আমরা স্বাস্থ্যসেবার জন্য কত টাকা ব্যয় করেছি। আমরা সবসময় অনুভব করতাম আমাদের চারপাশকে আরও ভাল করতে হবে। মানুষকে সাহায্য করার চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু আমার স্ত্রীর স্বাস্থ্য সমস্যা এবং ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনের সাথে সাথে আমরা বুঝতে পেরেছি যে, জিনিসগুলো আর ঠিক  হবে না। তবে এটি কেবল রাজনীতির বিষয় নয়। অনেক মানুষের দেশ ছাড়ার নেপথ্যে রয়েছে বন্দুক সহিংসতার সংস্কৃতি। জরিপগুলো দেখায় যে, ৮০% মানুষ শক্তিশালী বন্দুক আইন চায়, কিন্তু সরকার কিছু পরিবর্তন করবে না। আমার মনে আছে যুক্তরাষ্ট্রে একজন অভিভাবক  একটি সাক্ষাত্কারে বলেছিলেন, ‘আমি সন্তানদের জন্য একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ চাই।’ আমরা ২০২৩ সালে যুক্তরাজ্যে চলে আসি এবং শ্রুসবেরিতে থাকতে শুরু করি যেখানে কমিক বইয়ের পেশাদারদের একটি বিশাল সম্প্রদায় রয়েছে , যার সাথে আমি সম্পৃক্ত। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আমি এবং আমার স্ত্রী সিদ্ধান্ত নিই যে, আমরা আর আমেরিকা ফিরে যাবো না। আমার নির্দিষ্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে পারার আগে আমার কাছে তিন বছর সময় আছে এবং আমরা সেটাই করতে চাই। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আমি একজন বৃটিশ নাগরিক হতে চাই। যুক্তরাষ্ট্রে যেখানে আমরা বসবাস করতাম তার সাথে তুলনা করলে এখন আমরা বুঝতে পারি আমাদের জীবনের মান নাটকীয়ভাবে উন্নত হয়েছে।

‘আমি জানতাম আমেরিকা ঠিক পথে যাচ্ছে না’, জোশুয়া হিকম্যান, ৩৮

আমি ভার্জিনিয়ায় জন্মগ্রহণ করেছি এবং গ্রামীণ টেক্সাসে বড় হয়েছি। আমি মূলত ২০১০ সালে যুক্তরাজ্যে এসেছিলাম। ভেবেছিলাম কিছুদিনের জন্য থাকবো, পরে বুঝতে পারি আমি আসলে এখানে স্থায়ীভাবে থাকতে চাই। আমি তখন থেকেই অনুমান করছিলাম আমেরিকা ঠিক দিকে যাচ্ছে না। এরমধ্যেই স্নোডেন এনএসএ-এর নজরদারির কথা প্রকাশ্যে আনেন। ২০১৬ সালে আমার স্নাতকোত্তর ডিগ্রি শেষ করার পরে ভিসা বিধিনিষেধের কারণে আমাকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যেতে হয়েছিল। আমেরিকার জীবন সম্পর্কে আমার দৃষ্টিভঙ্গি যুক্তরাজ্যে থাকার দ্বারা পরিবর্তিত হয়েছে। অবশেষে আমি সিদ্ধান্ত নিই যে, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করা সম্ভব হবে না, ততক্ষণে ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে গেছেন।আমি মন্টানায় ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটারের প্রতিবাদে জড়িত ছিলাম। যেখানে পুলিশ পাশে  দাঁড়িয়ে থাকলেও আমাদের দিকে মিলিশিয়ারা বন্দুক দেখাতে সাহস পেয়েছিলো। তখনই আমি জানতাম যে, আমি যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘমেয়াদে থাকতে পারব না। বুঝতে পেরেছিলাম এটি নিরাপদ জায়গা হতে যাচ্ছে না। বরং আরো খারাপ দিকে যাচ্ছে। আমি ২০২০ সালে মিউজিক্যাল সাইকোলজিতে পড়তে যুক্তরাজ্যে ফিরে এসেছি এবং এখন আমি এখানে ভিসা নিয়ে কাজ করি। ২০৩০ সাল নাগাদ আমি সম্পূর্ণরূপে যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা হবো।

‘এটা আমাকে আঘাত করেছে যে দেশের আইনগুলো যে কোনো সময় পরিবর্তন হতে পারে’, মেলিসা ক্লিমেন্টস, ৩৮

আমি ঠিক নিউ ইয়র্ক সিটির বাইরে বড় হয়েছি এবং আমি ২০০৯ সালে আমার স্বামীর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে চলে আসি। আমি ভেবেছিলাম স্নাতক স্কুলে ভর্তি হতে আমি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাব। আমি কিংস-এ আমার স্নাতক ডিগ্রী করি এবং সেই সময়ে তাদের কাছে অত্যন্ত দক্ষ অভিবাসী ভিসা ছিল। আমি মনে করি, অনেক কারণের মধ্যে এটি একটি কারণ লোকেরা মার্কিন নাগরিকত্ব নিয়ে চিন্তা করছে। আমি তখন আমার বিয়ে করি এবং একটি (ভিন্ন) ভিসা সংগ্রহ করি। ২০১৪ সালে, আমি আমার ইহুদি পিতার কারণে আমার জার্মান নাগরিকত্ব অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সেই মুহূর্তে, আমি বৃটিশ নাগরিকত্ব পাওয়ার কথা ভাবিনি কারণ আমি ভেবেছিলাম আমি এখানে চিরকাল থাকতে পারব। তারপর ব্রেক্সিট ঘটেছে। ইইউ-এর তরফে অধিকারের প্রশ্ন ছিল, কিন্তু  আমার মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়নি। আমার দুটি মেয়ে আছে এবং আমরা এখানে একটি বাড়ি কিনেছি। কিন্তু আমার বাবাই আসলে আমার বৃটিশ নাগরিকত্ব নেয়ার জন্য আমাকে চাপ দিচ্ছেন। সম্ভবত কারণ তিনি একজন অভিবাসী হিসাবে বড় হয়েছেন এবং তিনি জানেন কাগজের টুকরো বলতে কী বোঝায়। তিনি সর্বদা আমাকে বলেন, ‘তুমি  কখনই জানো না যে আমেরিকা কখন আইন পরিবর্তন করে ফেলবে। এটাই এখন আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।’ ট্রাম্প যখন দ্বিতীয়বার শপথ নেন এবং জন্মগত নাগরিকত্ব প্রত্যাহার করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেন, তখন এটি আমার কাছে ধাক্কার মতো ছিল। বুঝতে পেরেছিলাম আইনগুলো তাত্ক্ষণিকভাবে পরিবর্তন হতে পারে। এখন, যুক্তরাজ্যে বহু বছর থাকার পর, আমি নাগরিকত্বের জন্য সমস্ত মানদণ্ড  পূরণ করেছি। আমি শুধু নিশ্চিত করতে চাই যে আমার মেয়েরা যেখানেই থাকুক না কেন আমি যেন সবসময় তাদের সঙ্গে থাকতে পারি।

সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান