Image description

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ফ্যাসিবাদের সময় নির্যাতনের কারণে নিয়মিত পড়াশোনা করতে না পারা’ শিক্ষার্থীদের বিশেষ বিবেচনায় ভর্তির সুযোগ ও হলে সিট বরাদ্দকে কেন্দ্র করে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। ফজলুল হক মুসলিম হল, অমর একুশে হলসহ বিভিন্ন হলে এই প্রক্রিয়ায় একাধিক শিক্ষার্থীকে সিট প্রদান করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

অভিযোগ উঠেছে, সিট পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ রমজান মাসে ক্যান্টিনে ফাউ খাওয়া নিয়ে মারামারি এবং পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত ছিলেন। এমনকি ২০০৫-০৬ বা ২০১০-১১ সেশনের কিছু শিক্ষার্থীও রয়েছেন, যারা এখনও প্রথম বর্ষেই অধ্যয়নরত। বর্তমান শিক্ষার্থীরা বলছেন, এ ধরনের শিক্ষার্থীদের হলে তোলা শিক্ষাঙ্গনের মেধা ও মনন বিকাশে বাধা সৃষ্টি করবে এবং তারা একই রুমে থাকতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

এ বিষয়ে ফজলুল হক মুসলিম হল সংসদের পক্ষ থেকে গতকাল (বৃহস্পতিবার) দুপুর ১২টায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের কাছে লিখিত আবেদন জমা দেওয়া হয়। আবেদনপত্রে সিট পাওয়া শিক্ষার্থীদের বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা হয়।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান ঘটনাটি তিন স্তরে খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি জানান, প্রথমে হল প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে কেন এবং কীভাবে শুধুমাত্র ফজলুল হক মুসলিম হলে এমন ঘটনা ঘটেছে তা জানা হবে। পরে প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভায় বিষয়টি তোলা হবে, যেখানে সিট বরাদ্দের ভিত্তি যাচাই করা হবে। নিয়ম অনুযায়ী, একাধিক রি-অ্যাডমিশন থাকলে শিক্ষার্থীর সিট বাতিল হওয়ার কথা। যদি প্রভোস্ট কমিটি সন্তোষজনক কারণ না দেখাতে পারে, তাহলে প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নেবে বলে উপাচার্য জানান। প্রয়োজনে সিন্ডিকেট সভাতেও বিষয়টি আলোচিত হবে।

ফজলুল হক মুসলিম হলের ভিপি খন্দকার আবু নাঈম বলেন, জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে কোনো শিক্ষার্থীই অনৈতিকভাবে বা বিশেষ সুবিধা দিয়ে সিট বণ্টন মেনে নেবে না। হল সংসদের জিএস ইমামুল হাসান বলেন, কোনো যুক্তিতে প্রশাসন ২০ বছর আগে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের এখন হলে উঠিয়েছে, তার জবাব আমরা চাই।

মাস্টারদা সূর্যসেন হলের ভিপি আজিজুল হক বলেন, প্রশাসন একটি দলকে সুবিধা দিতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের স্বার্থের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে। যদি কেউ আন্দোলনে জড়িত থাকার কারণে পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে, তবে একাডেমিকভাবে সুযোগ দেওয়া হোক, কিন্তু ২০ বছরের প্রবীণ শিক্ষার্থীদের তরুণদের সঙ্গে একই হলে রাখা প্রশাসনের জন্য লজ্জার।

 

ডাকসুর সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মোসাদ্দেক আলী ইবন মোহাম্মদ বলেন, নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠনের নেতারা যেমন রি-এডমিশন নিয়ে হলে থেকে ত্রাস সৃষ্টি করেছিল, তেমনি আবার সেই সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। এতে গণরুম ও গেস্টরুম প্রথা পুনরায় ফিরে আসতে পারে।

মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক ফাতিমা তাসনিম জুমা বলেন, যখন ২০২৪-২৫ সেশনের শিক্ষার্থীরা এখনও সিট না পেয়ে বাইরে কষ্ট করছে, তখন পুরনো শিক্ষার্থীদের নিয়মবহির্ভূতভাবে সিট দেওয়া অন্যায্য ও নবীনদের প্রতি বেইনসাফ।