ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে মাদক কারবারি, ভবঘুরে ও অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ অভিযানের সময় গতকাল (মঙ্গলবার) ডাকসু সদস্য সর্ব মিত্র চাকমার লাঠি হাতে এক বৃদ্ধকে তাড়ানোর একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তারপর থেকে বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়েছে।
তবে ডাকসু নেতাদের দাবি, লোকটি বয়োবৃদ্ধ হলেও মূলত মাদক কারবারির সঙ্গে জড়িত। তিনি ক্যাম্পাসে মাদক সরবরাহ করে থাকেন। এর আগেও তাকে বারবার বুঝিয়ে চলে যেতে বলা হলেও তিনি মাদক সরবরাহের কাজটি করেই যাচ্ছেন। যার কারণে, গতকাল তাকে জোর করে ক্যাম্পাস থেকে বের করা হয়েছে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিতে দেখা যায়, ডাকসুর কার্যনির্বাহী সদস্য সর্বমিত্র চাকমা এক বৃদ্ধ লোকটিকে লাঠি হাতে শাসাচ্ছেন এবং ক্যাম্পাস থেকে চলে যেতে বলছেন। ভিডিওতে আরও দেখা যায়, প্রক্টরিয়াল টিমের এক সদস্য ওই বৃদ্ধের ব্যাগে লাঠি দিয়ে কয়েকবার আঘাত করে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছেন।
এদিকে, মঙ্গলবার রাতে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় সমালোচনা। অনেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বৃদ্ধের প্রতি এমন আচরণের প্রতিবাদ জানান। আবার কেউ কেউ ভিন্ন মতও প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য ইব্রাহিম হোসেন ভিডিওটি শেয়ার করে সর্ব মিত্রকে উদ্দেশ্য করে ফেসবুকে লিখেছেন,‘বাবা, তুমি একটু শান্ত হও, তার হাঁটুর বয়সও হয়নি তোমার। ক্ষমতা পাইছো, তার মানে এই না যে, অপব্যবহার করবে। সেদিন তো ছবি তোলা নিয়ে কত জ্ঞান দিলেন—মবের ছবি তোলা নিষিদ্ধ, আজকে কে যেন ভুলে ভিডিও করছে।’
অমর একুশে হলের শিক্ষার্থী মো. রাজু চৌধুরী লেখেন, ‘এই বৃদ্ধ লোকটি একজন মাদক ব্যবসায়ী। তাকে ক্যাম্পাস থেকে সরানো ছিল জরুরি। সমালোচনা হওয়াটা স্বাভাবিক, কিন্তু উদ্দেশ্য ছিল পরিবর্তন আনা।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা আমাদের হলের ব্যবহার্য রাস্তা। যারা হলে থাকে, তারা জানে এসব ভবঘুরে লোকজন ফুটপাতে অবস্থান করে কীভাবে অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি করে। তারা সবসময় নেশা করে, জায়গা নোংরা করে রাখে—যা শিক্ষার্থীদের জন্য মোটেও সমীচীন নয়। ক্লাস, টিউশনসহ প্রতিদিনের কাজে এই রাস্তা ব্যবহার করতে হয়, তাই বিষয়টি আমাদের নিরাপত্তার সঙ্গেও জড়িত।’
রাজু চৌধুরী নামে একজন বলেন, ‘সর্ব মিত্র একা নয়, আমরা একুশে হলের অনেক শিক্ষার্থী মিলে ভবঘুরে উচ্ছেদ অভিযানে অংশ নিয়েছি বহুবার। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি—দুদিন পরই তারা আবার ফিরে আসে। সিটি করপোরেশনের সঙ্গে কথা বলেও কাজ হয়নি। সে ক্ষেত্রে সর্ব মিত্র একটি প্রশংসনীয় কাজ করেছে। আমরা একুশে হলের পক্ষ থেকে তাকে ধন্যবাদ জানাই।’
এ বিষয়ে ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক এবি জুবায়ের বলেন, ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে সর্বমিত্র যেই মুরুব্বিকে লাঠি হাতে শাসাচ্ছে তিনি একজন মাদক কারবারী। বেশভূষা দেখে বোঝার উপায় না থাকলেও সত্য হচ্ছে তিনি ক্যাম্পাস এরিয়ায় মাদক কারবারের সাথে জড়িত। তাকে বারবার উঠিয়ে দেয়া হলেও তিনি ক্যাম্পাস এরিয়া ছাড়ছেন না। কারণ এইখানে তার মাদকের কারবার!
তিনি আরও বলেন, সর্বমিত্রের নিজেই লাঠি হাতে নিয়ে মুরুব্বিকে শাসানোর এই এপ্রোচকে আমি ঠিক মনে করি না। প্রক্টরিয়াল টিমের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা নিলে ব্যাপারটা আরও সুন্দর হতো।
এ বিষয়ে ডাকসু কার্যনির্বাহী সদস্য সর্ব মিত্র চাকমা বলেন, ‘ভিডিওতে যে বৃদ্ধ লোকটিকে দেখছেন, আমি শুরু থেকেই তাকে মেট্রো স্টেশন এলাকা থেকে সরিয়ে আনছি। তিনি কখনোই ক্যাম্পাস ছেড়ে যান না। তার সঙ্গে আরও এক বৃদ্ধ আছেন, তিনিও মাদকাসক্ত। এই বৃদ্ধ লোকটির কাছ থেকে একবার গাঁজা উদ্ধারও করা হয়েছিল। তাদের সরানো অত্যন্ত কঠিন—তুলে দিলে আবার কয়েক কদম আগায়। তাই লাঠিসোটা ছাড়া বা কিছুটা ভয়-ভীতি না দেখালে তাদের সরানো সম্ভব হয় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই কাজে আমার কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থ নেই। আমি শুধু চাই একটি ভবঘুরে, পাগল ও গাঁজাখোর-মুক্ত ক্যাম্পাস। আজ আমাদের নারী শিক্ষার্থী দুজন হ্যারাসমেন্টের শিকার হয়েছেন—এ ধরনের ঘটনা রোধেই আমি মাঠে কাজ করি। আমার লক্ষ্য একটি ভবঘুরে, পাগল ও হ্যারাসারমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় গড়া।’
সর্ব মিত্র বলেন, ‘প্রতিনিয়ত এই ধরনের বিতর্ক আমার ব্যক্তিগত জীবনকেও প্রভাবিত করছে। প্রক্টরিয়াল টিমের সঙ্গে রাতে পাহারা দেওয়া বা উচ্ছেদ অভিযানে অংশ নেওয়া ডাকসুর একজন কার্যনির্বাহী সদস্যের কাজ না হলেও, আমার এখতিয়ার থেকেও পুরোপুরি বাইরে নয়। কিছুদিন আগে তিনজন মাদকাসক্তকে সরাতে গিয়েও একইভাবে আমাকে নিয়ে বিতর্ক তৈরি করা হয়েছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই ধরনের মানুষদের তাড়াতে লাঠি হাতে নেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না— যারা মাঠে কাজ করেন, তারাই জানেন কাজটা কতটা কঠিন। একজন সদস্য হিসেবে আমি নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়তে আমার দায়িত্ব পালন করব, তবে মাঠ পর্যায়ে আর থাকছি না।’