
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে শিক্ষার্থীদের অন্যতম প্রধান দাবি ও প্রত্যাশা ছিল ছাত্র সংসদ নির্বাচন। দীর্ঘদিনের সেই দাবি পূরণে ইতোমধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে দেশের চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী) ছাত্র সংসদ নির্বাচন। এসব নির্বাচনে সবচেয়ে বড় চমক হিসেবে উঠে এসেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ব্যাপক সাফল্য—চার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সবকটিতেই তাদের সমর্থিত প্রার্থীরাই বিপুল ব্যবধানে জয় পেয়েছেন।
অন্যদিকে, শিবিরের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এসব নির্বাচনে অনেকটাই কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে। বামপন্থি সংগঠন এবং বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদসহ অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের সাফল্যও তুলনামূলকভাবে হতাশাজনক।
চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচনে ২৮টি পদের মধ্যে ২৩টিতে শিবির-সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জাকসুতে ২৫টির মধ্যে ২০টি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকসুতে ২৬টির মধ্যে ২৪টি এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাকসুতে ২৩টির মধ্যে ২০টি পদ শিবিরের দখলে গেছে।
সব মিলিয়ে চারটি ছাত্র সংসদে মোট ১০২টি পদের মধ্যে ৮৭টিতেই বিজয়ী হয়েছেন শিবিরের প্রার্থীরা। বিপরীতে, ছাত্রদল মনোনীত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন মাত্র ২ পদে—চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি করে। বাকি ১৩ পদে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র ও অন্যান্য সংগঠনের
জানা যায়, গত ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ভিপি, জিএস ও এজিএস পদে বিপুল জয় পান ছাত্রশিবির-সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থীরা। ১২টি সম্পাদকীয় পদের মধ্যে ৯টিতে এই প্যানেলের প্রার্থীরা জয়ী হন। এ ছাড়া ১৩টি সদস্যের মধ্যে ১১টিতে এই প্যানেলের প্রার্থীরা জয়ী হন। অর্থাৎ, ভিপি-জিএস, এজিএসসহ ২৮টি পদের ২৩টিতেই জয় অর্জন করে এ প্যানেল। বাকি ৫টির ৪টি পদে স্বতন্ত্র ও ১টিতে প্রতিরোধ পর্ষদের প্রার্থী বিজয়ী হন। এর বাইরে ডাকসুর প্যানেলে কোন পদ পাননি ছাত্রদল সমর্থিত নেতারা।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনেও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির-সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট বিপুল ভোটে বিজয় অর্জন করে। ২৫টি পদের মধ্যে ২০টিতেই জয় পায় এ প্যানেল। বাকী ৫ পদের ৩টিতে স্বতন্ত্র ও ২টিতে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের প্রার্থীরা বিজয়ী হন। তবে ছাত্রদলের কোনো প্রার্থী বিজয়ী হতে পারেননি।
গত ১৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দীর্ঘ ৪৪ বছর পর আবারও চাকসুর নেতৃত্বে ফিরে ইসলামী ছাত্রশিবির। সংগঠনটির সমর্থিত প্যানেল ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’-এর প্রার্থীরা ভিপি-জিএসসহ ২৪টি পদে নির্বাচিত হন, যেখানে মোট পদ রয়েছে ২৬ টি। এর মধ্যে মাত্র একটি পদে নির্বাচিত হয়েছেন ছাত্রদলের প্যানেলের প্রার্থী আইয়ুবুর রহমান। তিনি এজিএস (সহসাধারণ সম্পাদক) পদে পান ৭ হাজার ১৪ ভোট। এ ছাড়া সহ খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে জিতেছেন তামান্না মাহবুব নামের এক স্বতন্ত্র প্রার্থী।
গত ১৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে ভিপি ও এজিএসসহ ২৩টি পদের ২০টিতেই জয় পেয়েছে ছাত্রশিবির–সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল। তবে জিএস, ক্রীড়া ও খেলাধুলাবিষয়ক সম্পাদক এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে তারা হেরেছে। এর মধ্যে জিএস (সাধারণ সম্পাদক) পদে ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেলের সালাহউদ্দিন আম্মার বড় ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছেন। ক্রীড়া ও খেলাধুলাবিষয়ক সম্পাদক পদে জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড় নার্গিস খাতুন নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ছাত্রদল–সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেলের প্রার্থী হয়েছিলেন। এ ছাড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র থেকে তোফায়েল আহমেদ (তোফা)।
এর বাইরে, সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয় দেশের একমাত্র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে ছাত্র সংসদ (গকসু) চালু রয়েছে। প্রথমবার গকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালে। সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৮ সালে, তবে প্রশাসনিক জটিলতার কারণে নির্বাচিত সংসদ পুরো মেয়াদে কাজ করতে পারেনি। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ওই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর এবার গত ২৫ সেপ্টেম্বর গকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জানা গেছে, এ নির্বাচনে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল থেকে শীর্ষ দুই পদে জিএস ও এজিএস নির্বাচিত হয়েছেন। জিএস পদে মো. রায়হান খান এবং এজিএস পদে নির্বাচিত হন সামিউল হাসান শোভন জয়ী হন।