
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ছয়বার। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠার মাত্র তিন বছরের মাথায় চাকসুতে বড় বিজয় পেয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছিল ছাত্রশিবির। ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত সংগঠনটি ১৯৮১ সালে বড় বিজয় পায়। তবে ১৯৯০ সালে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ নির্বাচনে একটি পদেও জিততে পারেনি সংগঠনটি। ওই সময় সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) ও আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদকসহ ৭টি পদে জয় পেয়েছিল ছাত্রদল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৮১ সালের ১৯ মার্চ ৫ম চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে তৎকালীন সক্রিয় প্রায় সব সংগঠন অংশ নেয়। এতে ভূমিধ্বস বিজয় পায় ছাত্রশিবির। সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে নির্বাচিত হন তৎকালীন ছাত্র শিবির নেতা ও রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী জসিম উদ্দিন সরকার। তিনি বর্তমানে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা-১০ আসনে দলের মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী। ওই নির্বাচনে চাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে মোহাম্মদ আবদুল গাফফার এবং এজিএস পদে মহিউদ্দিন মোহাম্মদ ফারুক জয় পেয়েছিলেন।
ওই সময়ে চাকসুর মোট ২৭টি পদের মধ্যে সম্পাদকীয় পদ ছিল ১৭টি। এর মধ্যে ১৪টি পদে জয় লাভ করে শিবির সমর্থিত ‘জসিম-গাফফার পরিষদ’। এ ছাড়া ১০টি সদস্য পদের ৮টিতেও জয় পেয়েছিল দলটি। তিনটি সম্পাদকীয় পদসহ মোট ৫ পদে জয় পেয়েছিল ছাত্রলীগ (কাদের-চুন্নু)।
শিবিরের প্যানেল থেকে সম্পাদকীয় পদে বিজয়ীরা হলেন সহ-ক্রীড়া সম্পাদক মো. আশরাফ হোসেন, সাহিত্য সম্পাদক মিজানুল করিম, সহ-সাহিত্য সম্পাদক ফরিদউদ্দিন, বিনোদন সম্পাদক দবিরউদ্দিন চৌধুরী, সহ-বিনোদন সম্পাদক আমিরুল ইসলাম, কমনরুম সম্পাদক মো. ফারুক, সহ মহিলা কমনরুম সম্পাদিকা দিলরুবা আখতার, সহ-ম্যাগাজিন সম্পাদক আবু তাহের গোলাম মওলা, সমাজকল্যাণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির এবং সহ-সমাজকল্যাণ সম্পাদক পূর্ণেন্দু কুমার রায়।

ছাত্রলীগের (কাদের-চুন্নু) প্যানেল থেকে জয় পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন ক্রীড়া সম্পাদক নজিবুল ইসলাম খান, সহ-কমনরুম সম্পাদক সমীর কান্তি দাশ এবং মহিলা কমনরুম সম্পাদিকা শিরিন আফরোজ।
নব্বইয়ে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের জয়
এরশাদবিরোধী আন্দোলনের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হয় চাকসুর ৬ষ্ঠ নির্বাচন। ওই নির্বাচনে শিবিরকে বাইরে রেখে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে সরকারবিরোধী জোট গঠিত হয়। ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’ পূর্ণ প্যানেলে জয় পায় ওই নির্বাচনে। এ ছাড়া ৬টি আবাসিক হলের ৫টিতেও তারা জয় পায়। ছাত্রশিবির শুধু এফ রহমান হলে পূর্ণ প্যানেলে বিজয়ী হয়।
আর্কাইভ থেকে জানা গেছে, ১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত চলে ভোট গ্রহণ। রাত সাড়ে আটটায় ভোট গণনা শুরু হলে পরদিন শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ফলাফল ঘোষণা সম্ভব হয়নি। ওই সময়ে মোট ১০ হাজার ৫২৬ ভোটের মধ্যে শতকরা ৭৩% কাস্টিং হয়, যা প্রায় ৮ হাজার। চাকসুতে ২৭ পদে প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ১৫৮ জন। ৬টি হলে ৭২ পদে প্রার্থী ছিলেন ৪৩৬ জন।
নির্বাচনে ১২টি দলের সর্বদলীয় ঐক্য পরিষদের ‘নাজিম-আজিম পরিষদ’ প্যানেল ও ছাত্রশিবিরের ‘হামিদ-মানসুর পরিষদ’ অংশগ্রহণ করে। সংগঠনগুলো হল- ছাত্রলীগ (হাবিবুর রহমান-অসীম কুমার), জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রলীগ (আবদুস সাত্তার-মোশারফ হোসেন), ছাত্রলীগ (নাজমুল হক-শফি আহমেদ), ছাত্রলীগ (বজলুল রশীদ-আজম), জাতীয় ছাত্রলীগ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র মৈত্রী, ঐক্য সমিতি, ছাত্র ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক ছাত্র ইউনিয়ন। এর মধ্যে নাজমুল হক ও শফি আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগ জাসদের সমর্থক ছিল।
ওই নির্বাচনে ভিপি পদে নির্বাচিত হন সর্বদলীয় ঐক্যের মোহাম্মদ নাজিমউদ্দিন (জাতীয় ছাত্রলীগ)। তিনি মোট ৪৮৩১ ভোট পেয়েছিলেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী হামিদ হোসেন পেয়েছিলেন ২৭৭৪ ভোট। জিএস পদে ৪৯৬৩ ভোট পেয়ে জিতেছিলেন ঐক্যের প্রার্থী আজিমুদ্দিন আহমেদ (সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট)। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শিবিরের মানসুর আহমদ পেয়েছিলেন ২৬২৫ ভোট। এ ছাড়া এজিএস পদে নির্বাচিত হন তৎকালীন ছাত্রদল নেতা মাহবুবের রহমান। তিনি বর্তমানে বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। নির্বাচনে তিনি পেয়েছিলেন ৪ হাজার ৯৯১ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রশিবিরের হামিদুর রহমান পেয়েছিলেন ২ হাজার ৬২০।
এ ছাড়া ক্রীড়া সম্পাদক পদে মো. ফেরদাউস বশির (ছাত্রলীগ হা-অ) সহকারী ক্রীড়া সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন (ছাত্রলীগ না-শ), সাহিত্য সম্পাদক কাজী নজরুল ইসলাম (ছাত্রলীগ হা-অ), সহকারী সাহিত্য সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী (ছাত্রলীগ হা-অ), আপ্যায়ন সম্পাদক মো. মামুনুর রশিদ (ছাত্রদল), সহকারী আপ্যায়ন সম্পাদক শহীদ বিন হোসাইন (ছাত্রলীগ হা-অ), মিলনায়তন সম্পাদক মইনুল আহসান (ছাত্রদল), সহকারী মিলনায়তন সম্পাদক আলমগীর হোসেন, ছাত্রী মিলনায়তন সম্পাদিকা কানিজ ফাতেমা (ছাত্রলীগ হা-অ), সহকারী ছাত্রী মিলনায়তন সম্পাদিকা জমিলা আকতার (ছাত্রলীগ হা-অ), বার্ষিকী সম্পাদক সুদীপ্ত দেব (ছাত্রলীগ হা-অ), সহকারী বাষির্কী সম্পাদক মো. শাহাবুদ্দিন (ছাত্রলীগ হা-অ), সমাজসেবা সম্পাদক সালাহউদ্দিন মোহা. রেজা (ছাত্রদল) এবং সহকারী সমাজসেবা সম্পাদক পদে সরদার মো. জোবায়ের (ছাত্র ঐক্য সমিতি) নির্বাচিত হন।
১০ জন সদস্য হলেন আ হা রেজাউল করিম (ছাত্রলীগ সা-মো) কাজী জহির উদ্দিন (ছাত্র ইউনিয়ন), কাজী মো. তৌহিদুল ইসলাম (ছাত্র ঐক্য সমিতি), মো. কলিম (ছাত্রলীগ হা-অ), মো. হোসেন শহীদ মুফতি (ছাত্রলীগ হা-অ), মো. শাহজাহান (না-শ), মো. তরিকুল ইসলাম (ছাত্রলীগ ব-অ), শেখ আবদুল হাকিম (ছাত্র ফেডারেশন), আবুল হোসেন (গণতান্ত্রিক ছাত্র ইউনিয়ন), মোমিনুল হক।
১৯৯০ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়ে ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে জবরদস্তি, ভোট কারচুপি এবং পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছিল।