
আগামী ১৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এই সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে আগামী ২২ সেপ্টেম্বর থেকে কলেজের প্রশাসনিক ভবনের সামনে চার ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২ টায় ঢাকা কলেজের নতুন একাডেমিক ভবনের নিচে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন তারা। এসময় যৌথভাবে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঢাকা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রোমান জাবির ও ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী এহসান জুবায়ের।
লিখিত বক্তব্যে রোমান জাবির বলেন, ঢাকা কলেজ এই উপমহাদেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম। এখানকার ছাত্রসমাজ বরাবরই গণতান্ত্রিক আন্দোলন, মুক্তির সংগ্রাম এবং অধিকার আদায়ের ইতিহাসে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। একইসঙ্গে জুলাই অভ্যুত্থানেও ঢাকা কলেজের ছাত্ররা সায়েন্স ল্যাবে তৈরি করেছিল প্রতিরোধের ব্যারিকেড। আজ সারাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ছাত্র সংসদ নির্বাচন। কিন্তু ঢাকা কলেজের মতো এতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানেও ছাত্র সংসদ নিয়ে প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে।”
ছাত্র সংসদ হলো শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক চর্চা ও নেতৃত্ব বিকাশের প্রধান প্ল্যাটফর্ম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছাত্র সংসদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে শেখেন, নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচন করেন এবং যৌথভাবে ক্যাম্পাসের সমস্যা সমাধান ও উন্নয়নে ভূমিকা রাখেন। পাশাপাশি চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের যে বিজয় আমরা অর্জন করেছি, তার স্থায়ী ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হলে ছাত্র সংসদের নিয়মিত কার্যক্রম অত্যন্ত জরুরি।
ঢাকা কলেজে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সংকটের কথা উল্লেখ করে এহসান জুবায়ের বলেন, ঢাকা কলেজে পর্যাপ্ত আবাসন ও হলের ব্যবস্থা, ডাইনিংয়ে সুলভ ও মানসম্মত খাবার নিশ্চিত করা এবং নিরাপদ ও সাশ্রয়ী পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা শিক্ষার্থীদের এই মৌলিক সমস্যা সমাধানে সংগঠিতভাবে প্রশাসনের কাছে দাবি উত্থাপন করতে পারবে। এর মাধ্যমেই ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং তাদের শিক্ষা কার্যক্রম নির্বিঘ্ন করতে মূল ভূমিকা রাখতে পারে”।
তিনি বলেন, আগামী ১৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যদি গঠনতন্ত্র প্রকাশ এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে তফসিল ঘোষণা না করা হয়, তবে ঢাকা কলেজের ছাত্র সমাজ বাধ্য হবে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে। আজকের এই সংবাদ সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্যই হলো প্রশাসনকে আমাদের দাবির কথা আবারও স্মরণ করিয়ে দেওয়া এবং শিক্ষার্থীদের পক্ষে আগামী কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া।
তিনি আরও বলেন,আমাদের পূর্ববর্তী কর্মসূচির আলটিমেটাম অনুয়ায়ী ১৮ তারিখের পর ১৯, ২০ ও ২১ সেপ্টেম্বর প্রথম বর্ষের পরীক্ষা থাকায় এই তিন দিন আমরা কেবল অনলাইনে প্রচার-প্রচারনা চালাবো। এরপর আগামী ২২ সেপ্টেম্বর প্রশাসনিক ভবনের সামনে টানা চার ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালন করব। এটি হবে শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক এবং সংগঠিত প্রতিবাদ-যার মাধ্যমে আমরা দেখাতে চাই যে ছাত্র সমাজ তার অধিকার আদায়ে আপসহীন। আমরা আশা করছি, ঢাকা কলেজ প্রশাসন শিক্ষার্থীদের এই ন্যায্য দাবি যথাযথভাবে উপলব্ধি করবে এবং অবিলম্বে নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশ করবে। অন্যথায় শিক্ষার্থীরা আরও বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটতে বাধ্য হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগাঠনিক সম্পাদক ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী মইনুল ইসলাম বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ৬ আগস্ট ঢাকা কলেজ অডিটোরিয়ামে আমরা ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছিলাম। কলেজ প্রশাসন আমাদের আশ্বস্ত করেছিল। কিন্তু এক বছর পরে নির্বাচনের কোন অগ্রগতি কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে আমরা অনেকগুলো কর্মসূচি ইতোমধ্যে পালন করেছি। কিন্তু আমাদেরকে বিভিন্নভাবে ঘোরানো হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা মনে করি, প্রশাসন একটি বিশেষ মহলকে সুবিধা দেওয়ার জন্য তারা এ কাজ করছে। আমরা অবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকা কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে অবস্থান কর্মসুচি পালন করা হবে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আন্দোলনকে ঘিরে ক্যাম্পাসে কোন অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তাহলে প্রশাসনকে তার দায়ভার নিতে হবে।