
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে সাবেক তিন সমন্বয়ককে সামনে রেখে ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ নামে একটি প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া সাবেক সমন্বয়কদের ‘ঐক্য’কে বলা হচ্ছে এই প্যানেলের সবচেয়ে বড় শক্তি। তবে ক্যাম্পাসে আলোচনা ও গুঞ্জন রয়েছে, এই প্যানেল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কিংবা ছাত্রশিবিরের ‘ছায়া টিম’ হিসেবে কাজ করছে।
রাকসু নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে ২৫ সেপ্টেম্বর। রাকসুর ২৩টি পদে এ প্যানেল থেকে ১৮ জন প্রার্থী হয়েছেন। এতে সহসভাপতি (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব। এ ছাড়া সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার ও সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে লড়বেন আরেক সাবেক সমন্বয়ক আকিল বিন তালেব।
মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও সহমহিলাবিষয়ক সম্পাদক পদের বাইরে সহসমাজকল্যাণ সম্পাদক ও নির্বাহী সদস্য পদে দুজন নারী এই প্যানেল থেকে লড়বেন। আছেন ক্যাম্পাসভিত্তিক সংগঠনের নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থী। তবে এই প্যানেলে সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই।
তবে এনসিপি বা শিবিরের ‘ছায়া টিম’ নিয়ে যে অভিযোগ, তা নাকচ করে দিয়েছেন প্যানেলটির শীর্ষ পদপ্রার্থীরা। বলছেন, তাঁদের প্যানেলে কোনো ‘ডামি’ প্রার্থী নেই। আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াই জারি রাখতেই শিক্ষার্থীদের হয়ে কাজ করতে চান তাঁরা।
‘আলোচিত’ তিন সমন্বয়ক এক প্যানেলে
রাকসু নির্বাচনে সাবেক সমন্বয়কেরা কে, কোন পদে ও কোন প্যানেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, তা ছিল আলোচিত বিষয়। সাবেক ১৭ সমন্বয়কের মধ্যে ১০ জন নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজন হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। বাকি ৯ জন পাঁচটি প্যানেলে ভাগ হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেলের তিন সমন্বয়ক জুলাই আন্দোলনে সম্মুখসারিতে ছিলেন। জিএস প্রার্থী সালাউদ্দিন আম্মার পরিচিতি পেয়েছিলেন ‘স্লোগানমাস্টার’ হিসেবে। ভিপি প্রার্থী মেহেদী সজীব ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর ক্যাম্পাসের পোষ্য কোটাসহ নানা আন্দোলনে সক্রিয় থেকে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন এই প্যানেলে থাকা তিন সমন্বয়ক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁরা ছিলেন আলোচিত সাবেক সমন্বয়কদের মধ্যে অন্যতম। সাবেক তিন সমন্বয়ক, চার নারী প্রার্থী ও বিভিন্ন ক্লাব সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের অন্তর্ভুক্তিকে এই প্যানেলের শক্তি হিসেবে দেখছেন অনেকে।
এই প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ও সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা জুলাইয়ের আগেও ক্যাম্পাসে নানা দাবি নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। জুলাই–পরবর্তী সময়েও শিক্ষার্থীদের পাশে থেকেছি। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার চেষ্টা করেছি। শিক্ষার্থীরা যদি আমাদের নির্বাচিত করেন, আমরা আরও দুর্বার গতিতে কাজ করে যাব।’
আলোচনায় ‘ট্যাগিং’
তবে এই প্যানেল গঠন করার পর থেকেই ক্যাম্পাসে শুরু হয়েছে নানা গুঞ্জন। কেউ বলছেন, এই প্যানেলের প্রার্থীরা বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ (বাগছাস) মনোনীত। আবার কারও দাবি, তাঁরা এনসিপি অথবা ছাত্রশিবিরের ‘ছায়া বা বি টিম’।
এজিএস প্রার্থী ও সাবেক সমন্বয়ক আকিল বিন তালেব বাগছাসের কেন্দ্রীয় নেতা হওয়ায় অনেকে এই প্যানেলকে বাগছাস মনোনীত প্যানেল বলছেন। ভিপি প্রার্থী মেহেদী সজীবকে নিয়েও আছে গুঞ্জন। শিবিরের সাবেক এক সমর্থক ফেসবুকে মেহেদী সজীবের বিরুদ্ধে শিবিরের সঙ্গে ‘বিশ্বাসঘাতকতার’ অভিযোগ তুলেছেন।
ছাত্রশিবিরের ‘ছায়া টিম’ অভিযোগ অবশ্য খারিজ করে দিলেন সালাউদ্দিন আম্মার। তিনি বলেন, ‘তারা (ছাত্রশিবির) তাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে প্যানেল গঠন করেছে, আমরাও আমাদের জায়গা থেকে সর্বোচ্চটা দিয়ে প্যানেল গঠন করেছি। এটা একটা তুচ্ছ অজুহাত। এই প্যানেলে যাঁরা আছেন, তাঁরা সবাই জুলাই যোদ্ধা। এখানে যোগ্য প্রার্থীদের নিয়েই প্যানেল গঠন করা হয়েছে।’