Image description

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৫টায়। কিন্তু আজ শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৩টা পেরিয়ে গেলেও ফলাফল প্রকাশিত হয়নি। ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার ২২ ঘণ্টা পরও ফলাফল না আসায় শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে।

জানা গেছে, এ নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ১১ হাজার ৭৪৩ জন। ভোট পড়েছে ৬৭ থেকে ৬৮ শতাংশ। ভোটগ্রহণ শেষ হলেও রাত সোয়া ১০টার দিকে ভোট গণনা শুরু হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব একেএম রাশিদুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ (শুক্রবার) যে লোকবল আছে, তাতে আমরা হয়তো বিকেল নাগাদ হলের ভোট গণনার হিসাব শেষ করতে পারব এবং রাত ১০ থেকে ১১টার মধ্যে সম্পূর্ণ গণনা সম্পন্ন করে বেসরকারিভাবে ফল প্রকাশ করতে পারব।’

ভোট গণনায় কেন এত দেরি হচ্ছে, সে বিষয়ে একেএম রাশিদুল আলম কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছেন।

এক. ওএমআর মেশিন দিয়ে ভোট গণনার জন্য প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু বেশ কয়েকজন প্রার্থীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ম্যানুয়ালি (হাতে ভোট গণনা) করার সিদ্ধান্ত হয়। রাশিদুল আলম বলছেন, এটা তো অবশ্যই স্বাভাবিক যে ম্যানুয়ালি হিসাব করলে একটু বেশি সময় লাগবে।

দুই. সকাল ৯টায় ভোট গ্রহণ শুরুর কথা থাকলেও দুটি হলে কিছুটা দেরি হয়েছিল। দু-একটি হলে মাঝপথে কিছুটা সময় স্থগিত ছিল। বিশেষ করে গতকাল দুটি বড় হলে, যেখানে ১ হাজারের বেশি ভোটার রয়েছেন, সেখানে দুপুর পর্যন্ত ভোট গ্রহণ খুব কম হয়েছিল। পরে বিকেল সাড়ে চারটা থেকে পাঁচটার দিকে লাইনে অনেক ভোটার চলে আসেন। নিয়ম অনুযায়ী তাদের সবাইকে ভোট প্রদানের সুযোগ দেওয়ার কথা। এটি করতে গিয়ে ওই ভোট কেন্দ্র থেকে ব্যালট বাক্স আসতেই প্রায় সাড়ে নয়টা বেজে গিয়েছিল। নিয়ম অনুযায়ী সব কেন্দ্রের ব্যালট বাক্স না আসা পর্যন্ত ভোট গণনা শুরু হবে না। এ কারণে ভোট গণনা শুরু করতেই রাত ১০টা বেজে যায়।

তিন. যেহেতু ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভোট গণনার বিষয়ে সবার আগে থেকে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি বা জানাশোনা ছিল না, তাই ভোট গণনার শুরুর দিকে অনেকটা ধীর গতিতে কাজ এগিয়েছে। পরে অবশ্য ভোট গণনার গতি বেড়েছে।

চার. সিনেট ভবনের কক্ষে শুরুতে ৫টি টেবিলে (প্রতি টেবিলে একটি হলের) ভোট গণনা শুরু হয়। এই টেবিলগুলো সিসিটিভির পর্যবেক্ষণে ছিল। পরে আজকে সকালে টেবিলের সংখ্যা বাড়িয়ে ১০টি করা হয়েছে। এসব টেবিলের পাশেও সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। যাতে সবকিছু সবাই পর্যবেক্ষণ করতে পারে, রেকর্ড হয়।

পাঁচ. আরও এক-দুইটি কারণের কথা বলেন রাশিদুল আলম। তিনি বলেন, ‘গতকাল রাতে অনেক হলের পোলিং কর্মকর্তা উপস্থিত থাকলেও পোলিং এজেন্ট অনুপস্থিত ছিলেন। পোলিং এজেন্টদের সামনেই ব্যালট বাক্স খোলা ও সব হিসাব করা উচিত। আবার সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা থাকা বাধ্যতামূলক। আমরাও সেই চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু এত সময় কিছু হলের পোলিং এজেন্ট উপস্থিত না থাকায় ভোট গণনায় দেরি হয়।’

উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ছাত্রদল, বামজোট, ছাত্রশিবিরসহ বিভিন্ন সংগঠন এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। তবে শেষ দিকে এসে ছাত্রদল ও বামজোট নির্বাজন বয়কট করে। পাশাপাশি নির্বাচনের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান তিন শিক্ষক। শুরু থেকেই নির্বাচনকে ঘিরে নানা অনিয়ম, কারচুপি ও প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা ও ২২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও ফলাফল নিয়ে অনিশ্চয়তা সেই প্রশ্নকে আরও জোরালো করে তুলেছে।